You dont have javascript enabled! Please enable it! 1957.02.05 | আওয়ামী লীগের কাগমারী সম্মেলনের সর্বপ্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সংবাদ
৫ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫৭
আওয়ামী লীগের কাগমারী সম্মেলনের সর্বপ্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন

(স্টাফ রিপাের্টার)
আওয়ামী লীগের কাগমারী সম্মেলনের সর্বপ্রকার ব্যবস্থা সমাপ্ত হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। আশা করা যাইতেছে, পাকিস্তানের দুই অংশ হইতে প্রায় তিনলক্ষ সাধারণ লােক, কর্মী, রাজনৈতিক নেতা ও সংস্কৃতি সেবী অংশগ্রহণ করিবেন। তদুপরি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ-যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, মিসর, ভারত ইত্যাদির বেশ হইতে শতাধিক প্রতিনিধি যােগদান করিবেন। সম্মেলন প্রধানতঃ চারি ভাগে বিভক্ত—এই কর্মী সম্মেলন, ৭ই ও ৮ই আওয়ামী লীগ কাউন্সিল অধিবেশন ও ৮ই হইতে ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চারি দিন সাংস্কৃতিক সম্মেলন। ৭ই হইতে ২২শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কৃষি, শিল্প ও স্বাস্থ্য প্রদর্শনী চালু থাকিবে। মওলানা ভাসানী মূল সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব সােহরাওয়ার্দী এই রাত্রিতে সাংস্কৃতিক সম্মেলন এবং ড. কাজী মােতাহার হােসেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে সভাপতিত্ব করিবেন বলিয়া স্থির হইয়াছে। ঢাকা ও প্রদেশের অন্যান্য স্থান হইতে কাগমারীতে সম্মেলনে যােগদানকারিদের বহনের জন্য বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হইয়াছে। অদ্য (মঙ্গলবার) হইতে ঢাকা কাগমারীর সঙ্গে নিয়মিত বাস চলাচল শুরু হইবে। পল্টন ময়দানের নিকট হইতে কাগমারীর বাসে ৬৪ মাইল পথের জন্য তিন টাকা ভাড়া ধার্য করা হইয়াছে। এই হইতে ৭ই পর্যন্ত প্রত্যহ সকাল ৮টা, ১০টা, ১২টা ও ২টায় এবং ৮ই হইতে ১০ই পর্যন্ত সকাল ৬টা, ৮টা, ১০টা, ১২টা ও ২টার বাস ছাড়িবে। সম্মেলনে যােগদানের উদ্দেশ্যে যাহারা কাগমারী যাইবেন, তাঁহাদের জন্য ঢাকায়ও যাওয়ার ব্যবস্থা করা হইয়াছে। কিন্তু সকলেই বিছানা ও মশারী লইয়া যাইতে হইবে। ইতিমধ্যে রাজধানী হইতে কতিপয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কয়েকশত কর্মী ও কাউন্সিলর কাগমারীতে পৌছিয়াছেন। শিল্পমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্র শিল্পীদের একটি বৃহৎ গ্রুপ অদ্য সকালে কাগমারী যাত্রা করিতেছেন। ৬ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী জনাব সােহরাওয়ার্দী ও প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী। জনাব সােহরাওয়ার্দী ও প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমানসহ বিদেশী অতিথিগণ কাগমারীতে পৌছিতেছেন। কাগমারীতে সমাগত বিদেশী অতিথি ও সাংবাদিকদের থাকার জন্য সন্তোষ রাজবাড়ী নির্দিষ্ট করা হইয়াছে। উহা ছাড়া বহু তাবু ও নয়া গৃহ নির্মিত হইতেছে। সাংস্কৃতিক সম্মেলনের অভিনয়াদির জন্য চারটি উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরী হইয়াছে। উহাতে বিভিন্ন বিষয় যথাঃ শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ভাষা, লােকনৃত্য ও লােকগীতির উপর প্রবন্ধ পাঠ ও আলােচনা হইবে। পশ্চিম পাকিস্তানের পশ্চিমি ম্যাডাম আজুরীর পরিচালনায় ১৫ সদস্যের একটি নৃত্যশিল্পীর দল সম্ভবত ৭ই কাগমারী পৌছবে। এই দলটির পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের সাংস্কৃতিক জীবন প্রতিফলিত হইবে। সম্মেলনে পূর্ব বাংলার কবি জারি সারি, তরজা বিচার ভাটিয়ালী পরিবেশিত হইবে। বিখ্যাত কবিয়াল শ্রী রমেশ শীল সম্প্রদায় কবিগান এবং তসর আলী সম্প্রদায় জারিগানে অংশ গ্রহণ করিবেন। ঢাকা হইতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও যুবলীগ নৃত্যগীত পরিবেশনের জন্য শিল্পী প্রেরণ করিতেছে। সম্মেলনে প্রধানত লােকনৃত্য ও লােকনাট্যের উপর অনুষ্ঠান করা হইবে।
সম্মেলনে প্রবন্ধ পাঠ নিম্নরূপ হইবে শিক্ষাঃ ডাঃ কুদরতই খুদা, ডাঃ ওসমান গনি,ডাঃ হেদায়েতউল্লাহ, ডাঃ শামসুদ্দীন। অর্থনীতি ডাঃ এম এন হুদা ও ডাঃ আবদুর রেজ্জাক। সাহিত্য ভাষা ও সংস্কৃতি ফয়েজ আহমেদ সাহেব (উর্দু কবি), ডাঃ শহীদুল্লাহ, ডাঃ এনামুল হক, বেগম জেবুন্নেসা হামিদুল্লাহ, ডাঃ মােহাম্মদ হােসেন প্রমুখ। শিল্পঃ করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডাঃ এ বি এ হালিম এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ডাঃ এম আহমেদ। নৃত্যঃ ম্যাডাম আজুরী (সামাজিক জীবনে নৃত্যের প্রভাব)
মিসরের ডাঃ হাসান হাবিসি তাহার দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলন যুক্তরাজ্য চীন ও জাপানের প্রতিনিধিগণ স্ব স্ব দেশের সাংস্কৃতিক জীবনের উপর আলােচনামূলক প্রবন্ধ পাঠ করিবেন। কুষ্টিয়ার লালনশাহর দলটিও কাগমারীর পথে রহিয়াছে। তাছাড়া ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার গায়ক সম্প্রদায় স্ব স্ব দল লইয়া যােগদান করিবেন।