You dont have javascript enabled! Please enable it! 1956.11.21 | আগামী জানুয়ারী মাসে শিল্প ও বাণিজ্য দফতর বিকেন্দ্রীকরণ- সাংবাদিক সম্মেলনে শেখ মুজিবর রহমানের ঘােষণা | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
২১শে নভেম্বর ১৯৫৬
আগামী জানুয়ারী মাসে শিল্প ও বাণিজ্য দফতর বিকেন্দ্রীকরণ
সাংবাদিক সম্মেলনে শেখ মুজিবর রহমানের ঘােষণা

(স্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য (মঙ্গলবার) প্রাদেশিক শিল্প ও বাণিজ্য সচিব জনাব শেখ মুজিবর রহমান এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, নুতন শাসনতন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি শিল্প ও বাণিজ্য নীতি নির্ধারণের জন্য করাচীতে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হইয়াছে, তাহা পূৰ্ব্ব পাকিস্তানের শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করিবে।
তিনি আরও বলেন যে, আগামী জানুয়ারী মাস হইতে শিল্প, বাণিজ্য ও নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি বিকেন্দ্রীয় করিয়া প্রাদেশিক সরকারের অধীনে দেওয়া হইবে এবং খুব শীঘ্রই পূৰ্ব্ব পাকিস্তানে সৰ্ব্ব ক্ষমতাসম্পন্ন একজন আমদানী-রফতানীর চীফ কন্ট্রোলার নিযুক্ত করা হইবে।
জনাব শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, মােট বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ৫০ ভাগ পূৰ্ব্ব পাকিস্তানকে দেওয়া হইবে বলিয়া কেন্দ্রীয় সরকার রাজী হইয়াছেন। তিনি আরও বলেন যে, অতি শীঘ্রই পূর্ব পাকিস্তানে ৩০ হাজার টন সিমেন্ট আমদানী করা হইবে এবং এই সিমেন্টের মূল্য বর্তমান মূল্য অপেক্ষা কিছু কম হইবে। তিনি আরও বলেন যে, এ পর্যন্ত পাকিস্তান যে সমস্ত বৈদেশিক সাহায্য লাভ করিয়াছে, তাহার ১০ ভাগেরও কম পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্দিষ্ট করা হইয়াছে।
বিবৃতির পূর্ণ বিবরণ
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদত্ত প্রাদেশিক শিল্প সচিব জনাব মুজিবর রহমানের বক্তৃতার পূর্ণ বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হইলঃসত্য কথা বলিতে কি, গত ৯ বৎসরে শিল্প সম্পর্কিত সমস্ত কর্তৃত্ব ক্রমে ক্রমে প্রাদেশিক সরকারের হাত হইতে গ্রহণ করা হয়। যে সমস্ত কাজ ও দায়িত্ব তাহাদের করা উচিত ছিল প্রাদেশিক সরকার একে একে তাহা কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তে সমর্পণ করেন। সর্বাপেক্ষা দুর্ভাগ্যের বিষয় হইতেছে ফেডারেল কন্ট্রোল অব ইন্ডাস্ট্রিজ আইন প্রণয়ন। ইহাতে শিল্প সম্পর্কিত ২৭টি বিষয়ের সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে তুলিয়া দেওয়া হয়। এই ২৭টি তালিকায় সমস্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে। এমনকি শাসনতন্ত্র গৃহীত হওয়ার পরেও শিল্প সম্পর্কিত বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় সরকারই নিয়ন্ত্রণ করিতে থাকেন এবং শাসনতন্ত্রের শিল্প সম্পর্কিত বিরােধ এখনও কার্যকরী করা হয় নাই। অনুরূপভাবে ব্যবসা এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রেও প্রাদেশিক সরকারের কার্য্য গত ১ বৎসরে শূন্যে আসিয়া দাঁড়ায় এবং এই প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগ সম্পূর্ণরূপে অর্থহীন হইয়া দাঁড়ায়। সুতরাং আমি অনতিবিলম্বে প্রাদেশিক সরকারকে তাহার কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা উচিত বলিয়া বিবেচনা করি। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প সচিব পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিদের লইয়া একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন আহ্বান করেন। এই কার্যের জন্য আমরা তাঁহার নিকট অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। নয়া শাসনতন্ত্র অনুযায়ী প্রদেশসমূহকে যে ক্ষমতা ও অধিকার দেওয়া হইয়াছে তাহার সংজ্ঞা নিরূপণের ও কার্য পরিচালনার জন্য দেশ ও প্রদেশের স্বার্থের খাতিরে এইরূপ সম্মেলনের প্রয়ােজন ছিল।
উভয় অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক অসাম্য
গত ১ বৎসরে যে সমস্ত দুর্ভাগ্যজনক ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়াছে, আমি বর্তমানে তাহার আর পুনরাবৃত্তি করিতে চাহি না, তবে একথা আমি উল্লেখ না করিয়া পারি না যে, কেন্দ্রের পূর্ধ্বতন সরকারের গৃহীত নীতির ফলে উভয় অংশের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থনৈতিক অসাম্য দেখা দিয়াছে। যে ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তান দ্রুত উন্নতি করিয়া চলিয়াছে এবং শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে পৌছিয়াছে তখন পূৰ্ব্ব পাকিস্তান শিল্পায়িতকরণের প্রথম পর্যায়েও পৌঁছায় নাই। এই প্রদেশে মূলধন বিনিয়ােগ এখনও দানা বাধিয়া ওঠে নাই। তাহার কারণ এই যে, আমাদের লােকদের সম্পর্কে সৰ্ব্বদাই এই সুযােগ অস্বীকার করা হইয়াছে এবং ব্যবসা ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে তাহাদের অংশগ্রহণও নগণ্য। এখন আমরা অবশ্যই অনাগত ভবিষ্যতের দিকে আশা ও সাহস লইয়া অগ্রসর হইব এবং প্রদেশকে দ্রুত শিল্পায়িতকরণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বারা জনগণের অবস্থার উন্নতির চেষ্টা করিব।
প্রাদেশিক শিল্প বিভাগ
আমি আপনাদের পূর্বেই বলিয়াছি যে, শিল্প সম্পর্কে প্রাদেশিক সরকারের কার্যতঃ কোনই ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে করাচী সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে। যে, দেশরক্ষা সম্পর্কিত শিল্প যাহা কেন্দ্রের বিষয়-লৌহ ও ইস্পাত, জাহাজ, এন্টিবায়টিক, সালফা ড্রাগস, যক্ষ্মা নিবারণী টিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিবে। ইহা ছাড়া অস্ত্র-শস্ত্র, গােলা-বারুদ, বিস্ফোরক, আঞ্চলিক সমুদ্র এলাকার বাহিরে মৎস্য শিকার এবং কোন ফেডারেশন কিংবা কর্পোরেশন কর্তৃক স্থাপিত অথবা আংশিক মালিকানা বিশিষ্ট কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত শিল্পের দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বে আসিবে।
কেন্দ্রের বিষয়-খনিজ তৈল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকিবে কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর ভিত্তি করিয়া প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকিবে।
তেজস্ক্রিয় খনিজসমূহ, অপরিশুদ্ধ লৌহ (হলুদ ও রেড অক্সাইড ব্যতীত) ছাড়া অন্যান্য খনিজ প্রাদেশিক সরকারের অধীনে আসিবে। কয়লা খনি সহ অন্যান্য বিষয় প্রদেশের হাতে থাকিবে এবং এইরূপ খনিজ উন্নয়নের দায়িত্বও প্রাদেশিক সরকারের হস্তে ন্যস্ত থাকিবে। কার্যতঃ প্রাদেশিক সরকার শিল্প ও বাণিজ্য সম্পর্কে সমস্ত কিছুই নিয়ন্ত্রণ করিবে। এই প্রদেশের জন্য পৃথক ইম্পোর্টস এবং এক্সপাের্ট কন্ট্রোলার ও পৃথক ডিরেক্টর জেনারেল হইবে।