আজাদ
৪ঠা অক্টোবর ১৯৫৬
প্রদেশে কুটির শিল্পের উন্নতির জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ
শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের সভায় প্রাদেশিক শিল্প সচিবের ঘােষণা
বেসরকারী মূলধন নিয়ােগে উৎসাহ ও সাহায্যদানের সঙ্কল্প
(স্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য (বুধবার) সেক্রেটারিয়েট ক্যাবিনেট রুমে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের এক সভায় প্রাদেশিক বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পসচিব জনাব শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, প্রাদেশিক সরকার শীঘ্রই কুটির শিল্পের উন্নয়নকল্পে একটি ব্যাপক পরিকল্পনা প্রণয়ন করিতেছেন এবং সম্ভবতঃ একটি করপােরেশনও গঠন করিবেন। তিনি বলেন যে, সরকার বেসরকারী মূলধন নিয়ােগে উৎসাহ ও সাহায্যদান করিবেন। শিল্পোৎপাদনে মালিক-শ্রমিক সম্পর্কের উপর গুরুত্ব আরােপ করিয়া জনাব মুজিবর রহমান বলেন যে, উস্কানিদাতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যে লিপ্ত ব্যক্তিগণ ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনকারী নয় এবং তাহারা বিভেদ সৃষ্টিকারী। কোনক্রমে তাহাদিগকে বরদাশত করা হইবে না। প্রাদেশিক বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্প সচিব শিল্পে অর্থ বিনিয়ােগকারীদের এইরূপ আশ্বাস দেন যে, যাহারা প্রদেশে অর্থ বিনিয়ােগ করিতেছেন বা ভবিষ্যতে করিবেন, তাহারা সরকারের নিকট হইতে সর্বপ্রকার সাহায্য ও সমর্থন লাভ করিবেন। প্রদেশের বিভিন্ন স্থান হইতে আগত বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দের এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শিল্প সচিব জনাব শেখ মুজিবর রহমান। সম্মেলনে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে জনাব জি এম আদমজী, জনাব সদরী ইস্পাহানী, পূৰ্ব্ব পাকিস্তান কটন মিল মালিক সমিতির সভাপতি মিঃ ডি, এন, বসু, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিঃ কার্স, জয়েন্ট স্টীমার কোম্পানীর মিঃ মেকলে ও মিঃ হীল্ড, পিপলস জুট মিলের জনাব তীমানীর নাম উল্লেখযােগ্য। প্রাদেশিক বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্প দফতরের সেক্রেটারী জনাব ডব্লিউ, বি, কাদরীও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ প্রদেশের শিল্প সম্প্রসারণের পথে অসুবিধা ও সমস্যা। সম্পর্কে আলােচনা করেন। তাঁহারা আরাে বলেন যে, প্রদেশের শিল্পোন্নয়নের যথেষ্ট সুযােগ সুবিধা রহিয়াছে এবং তাহারা সরকারের নিকট হইতে একই ধরনের শিল্পনীতি ঘােষণার দাবী জানান। তাঁহারা পাকিস্তানের উভয় অংশের শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে যে মারাত্মক বৈষম্য বিরাজ করিতেছে, তাহার উল্লেখ করেন। তাহারা শিল্পোন্নয়নের যন্ত্রপাতির আমদানী লাইসেন্স ইস্যু সম্পর্কে এইরূপ অভিযােগ করেন যে, ইহা প্রয়ােজনের তুলনায় যথেষ্ট নহে।
জনাব রহমান বলেন যে, এতকাল ধরিয়া প্রাদেশিক বাণিজ্য ও শিল্প দফতর ডাক ঘরেরই শামিল ছিল। তিনি শাসনতন্ত্রের ধারা অনুসারে বাণিজ্য, ব্যবসায় ও শিল্প ক্ষেত্রে প্রদেশের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের দাবী জানান এবং উপরােক্ত ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি সাধনের জন্য ইহা কার্যকরী করিতে বলেন। তিনি জানান যে, আমদানী লাইসেন্স ইস্যু, জাহাজের স্থান বরাদ্দ, অগ্রাধিকার দানের ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারের মতামতই কার্যকরী হইবে।
জনাব রহমান অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদের লইয়া এইরূপ অপর একটি সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন। এই সম্বেলনে সম্ভবতঃ উজীরে আজম জনাব সােহরাওয়ার্দী ও উজীরে আলা জনাব আতাউর রহমান খানসহ কেন্দ্রীয় অর্থ ও শিল্প সচিবগণ যােগদান করিবেন। শিল্পপতিগণ শিল্প সচিবের এই প্রস্তাবকে অভিনন্দিত করেন। শিল্প সচিবের সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতার পূর্ণ বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হইলঃআমি আপনাদের সহিত মিলিত হইতে পারিয়া অত্যন্ত আনন্দিত হইয়াছি। প্রাক্তন সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার অভাব এবং অন্যান্য আরও বহু কারণের জন্য পূর্ব পাকিস্তান বহু পশ্চাতে পড়িয়া আছে। পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে যে অর্থনৈতিক বৈষম্য রহিয়াছে, তাহা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কতিপয় ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তান যখন পূর্ণমাত্রায় পৌছিয়াছে, তখন পূর্ব পাকিস্তান শিল্পায়িতকরণের ত্রিসীমানায় পা দেয় নাই। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানােন্নয়ন করা যে কোন দায়িত্বশীল সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। ইহা একটি বিরাট দায়িত্ব এবং সমন্বয় সাধন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যতীত ইহা সম্ভব নয়। আর জীবনযাত্রার মানােন্নয়নের ব্যাপারে দেশকে শিল্পায়িত করিয়া তােলা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
দেশের প্রাপ্তব্য সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার এবং ইহাকে জনগণের কাজে লাগানই হইতেছে দেশকে শিল্পায়িত করণের উদ্দেশ্য। কর্মসংস্থানের সুযােগ-সুবিধার সম্প্রসারণ ও ইহাকে সর্বস্তরে বহুমুখীকরণই ইহার যুক্তিসঙ্গত ও অপরিহার্য্য পরিপূরক। এই লক্ষ্যে পৌছিতে হইলে বেশী করিয়া মূলধন বিনিয়ােগই হইতেছে প্রথম ও প্রধান জিনিস। মূলধন ব্যতীত দেশকে শিল্পায়িত করা যায় না। যদি অবিলম্বে ও ব্যাপকভাবে মূলধন নিয়ােগ করা না হয় তাহা হইলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুৰ্বল হইয়া থাকিবে। তাহা ছাড়া দুৰ্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য মূলধনও যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পূর্ব পাকিস্তান সত্য সত্যই বেসরকারী মূলধন বিনিয়ােগের উপযুক্ত ক্ষেত্র। দেশকে শিল্পায়িতকরণের সুপরিকল্পিত ও সুষম কর্মসূচী আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে শক্তিশালী করিয়া তুলিবে।