মুজিবের অতীত
সুমন্ত হীরা
‘মুজিবের অতীত’ নাম দিয়ে আপনার দোসরা এপ্রিলের দর্পণে একটি লেখা পড়লাম। মুজিবের ছাত্রাবস্থা এবং রাজনীতির দীক্ষা প্রসঙ্গে যা বলা হচ্ছে, সেটা অসঙ্গতিপূর্ণ। মুজিব সাহেবের বাড়ির কাছে আমার বাড়ি; সে জন্য এর প্রতিবাদ না করে পারছি না।
আমার বাড়ি মুজিব সাহেবের বাড়ি থেকে ছয় মাইল দূরে। আমার গ্রামের নাম আড়পাড়া, আর মুজিব সাহেবের গ্রামের নাম টুঙ্গিপাড়া। মুজিব সাহেব গােপালগঞ্জ এস এম মডেল হাইস্কুলে পড়াশুনা করেছেন। আমিও সেই স্কুলের ছাত্র। যদিও মুজিব সাহেব আমার থেকে বয়সে অনেক বড়, তবু আমার দাদা ও অন্যান্য আত্মীয়ের নিকট থেকে সহপাঠী হিসেবে মুজিবের জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানার সুযােগ পেয়েছি।
বাল্যাবস্থায় মুজিব সাহেবের রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ছিল। একদা শহীদ সােহরাওয়ার্দী সাহেব গােপালগঞ্জ শহরে একটি জনসভায় বক্তৃতা দেন। মুজিব তখন স্কুলের ছাত্র। সােহরাওয়ার্দী সাহেবের বক্তৃতার পর মুজিব সেই সভায় কিছু বলার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হলে জোর করে মঞ্চে উঠে বলতে শুরু করেন। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় পরীক্ষায় বিশেষ ভালাে রেজাল্ট তিনি কোনােদিন করেন নি। ছাত্র হিসেবে সাধারণ স্তরের ছিলেন।
মুজিব সাহেব ১৯২০ সালে জন্মালেও শারীরিক কারণে স্কুল জীবনে প্রায় তিন বছর পড়াশুনায় ছেদ পড়ে। ১৯৪২ সালে কলকাতায় এসে কলেজে ভর্তি হন। কাজেই এ থেকেই দেখা যায় মুজিব সাহেব বাইশ বছর বয়সে কলকাতায় আসেন। আপনার কাগজে লিখেছেন সতেরাে বছর বয়সে রাজনীতির হাতেখড়ি হয় নেতাজীর কাছে। এটা কী করে সম্ভব? যে ব্যক্তি কলকাতায় এলেন বাইশ বছর বয়সে তার রাজনীতির হাতেখড়ি হলাে সতেরাে বছর বয়সে! এটা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে, মুজিবকে রাজনীতিতে দীক্ষা দেয়ার জন্য ১৯৩৭ সালে নেতাজী কখনাে গােপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে যান নি।
উপরন্তু ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেতাজী ভারতবর্ষের বাইরে ছিলেন। তাই তখন কী করে মুজিব সাহেবকে রাজনীতির দীক্ষা দেয়া সম্ভব? মূলত রাজনীতির হাতেখড়ি যদি কারুর কাছে হয়ে থাকে, তবে সেটা শহীদ সােহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছেই হয়েছিল। আপনারা শুদ্ধ করে যার নাম সুরাবর্দি লিখে থাকেন। তিনি ১৯৪২ সালে কলকাতায় এসে মুসলিম ছাত্র সংগঠনের সংস্পর্শে আসেন এবং উক্ত সংগঠনের সঙ্গে যােগাযােগের মাধ্যমেই সােহরাওয়াদী সাহেবের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। সােহরাওয়ার্দী সাহেবের বক্তৃতা এবং রাজনৈতিক ধ্যানধারণার প্রতি স্কুল জীবন থেকেই আকৃষ্ট হলেও কলেজ জীবনের আগে তার সান্নিধ্যে আসার সুযােগ হয়নি মুজিবের।
সূত্র: দর্পণ
১৬.০৪.১৯৭১