দৈনিক ইত্তেফাক
১২ই সেপ্টেম্বর ১৯৫৬
শ্রমমন্ত্রীর আশ্বাসে খুলনা ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহার
স্থানীয় জনসাধারণ কর্তৃর্ক শেখ মুজিবরকে বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন
খুলনা, ৯ই সেপ্টেম্বর।- পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রমমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান অদ্য সকালে সরকারি বিমানযােগে এখানে পৌছিলে এখানকার জনসাধারণ। তাহাকে বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করে। সম্বর্ধনাকারী জনতার মধ্যে সরকারি অফিসার ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দও ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান অদ্য কর্মব্যস্ত দিন যাপন করেন। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদিগকে সাক্ষাৎ দান করেন। অতঃপর তিনি স্থানীয় হাসপাতালে সম্প্রতি চালনায় শ্রমিক হাঙ্গামায় আহত ব্যক্তিদিগকে দর্শন করেন। এতদ্ব্যতীত শ্রমমন্ত্রী অদ্য খুলনা ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে কতিপয় শ্রমিক অনশন ধর্মঘট শুরু করিয়াছে। শ্রম সচিব ফ্যাক্টরীর শ্রমিকদের প্রকৃত অভাব-অভিযােগ দূরীভূত করার জন্য যথাবিহীত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইবে বলিয়া আশ্বাস প্রদান করিলে অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। ইহার পর জনাব মুজিবুর রহমান চালনা বন্দরে গমন করিয়া শ্রমিকদের অভাব অভিযােগ শ্ৰবণ এবং সাম্প্রতিক গুলীবর্ষণের স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় শ্রমিকদের প্রতি স্বাভাবিকভাবে কাজ চালাইয়া যাইবার আবেদন জানান এবং তাহাদের অভিযােগ সম্পর্কে সুবিচারের আশ্বাস প্রদান করেন। শেখ মুজিবুর রহমান অদ্য সন্ধ্যায় গােপালগঞ্জ যাত্রা করেন।
গােপালগঞ্জে বিরাট জনসভায় বক্তৃতা
গােপালগঞ্জ, ৯ই সেপ্টেম্বর-অদ্য সন্ধ্যায় এখানে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প, বাণিজ্য ও শ্রমমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বলেন যে, প্রদেশের তীব্র খাদ্য সমস্যার সমাধান করাই হইতেছে বর্তমান সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। খুলনা হইতে এখানে পৌছিলে জনসাধারণ তাঁহাকে বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন ও মাল্যভূষিত করে। বক্তৃতা প্রদানকালে জনাব মুজিবুর রহমান বলেন যে, প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণ চাউল বরাদ্দ করা হইবে এবং যে সকল স্থানে প্রয়ােজন সেই সকল স্থানে লঙ্গরখানা খােলা হইবে। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে, বর্তমান খাদ্য কমিটিসমূহ শীঘ্রই পুনর্গঠিত করা হইবে। তিনি অফিসারদের প্রতি খাদ্য সমস্যা ও সাহায্যদানের ব্যাপারে অগ্রাধিকার দানের আবেদন জানান। সমাজবিরােধীদের সতর্কবাণী উচ্চারণ করিয়া জনাব মুজিবুর রহমান বলেন যে, সমাজদেহ হইতে সর্বপ্রকার দুর্নীতির মূলােৎপাটন করার জন্য বর্তমান সরকার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করিয়াছেন। বক্তৃতার পূর্বে তিনি স্থানীয় অফিসারগণের সহিত খাদ্য সমস্যা সম্পর্কে আলােচনা করেন। অতঃপর জনাব রহমান তাঁহার অসুস্থ পিতাকে দেখিবার জন্য তাঁহার স্বগ্রাম টুঙ্গীপাড়া যাত্রা করেন।