সংবাদ
৯ই সেপ্টেম্বর ১৯৫৬
নয়া মন্ত্রিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী
জনাব আতাউর রহমান খান
পূর্ব পাকিস্তানের নয়া প্রধানমন্ত্রী ৪১ বৎসর বয়স্ক জনাব আতাউর রহমান খান ১৯৫৪ সালে ফজলুল হক মন্ত্রিসভার বেসামরিক সরবরাহ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ছিলেন। জনাব আবু হােসেন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর হইতেই তিনি বিরােধী দলের নেতৃত্ব করিতে ছিলেন।
১৯০৭ সালের ১লা জুলাই জনাব আতাউর রহমান ঢাকা হইতে ৩০ মাইল দূরবর্তী বালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ১৯৩০ সালে অর্থনীতিতে অনার্সসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বি, এ পাশ করেন। ১৯৩০ সালে তিনি প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করিয়া আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৭ সালে তিনি বারে যােগদান করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সেক্রেটারী নির্বাচিত হন। ১৯৪২ সালে তিনি বিচার বিভাগে কার্য গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৪৪ সালে তিনি পদত্যাগ করিয়া পুনরায় আইন ব্যবসা শুরু করেন। অচিরেই জেলা বারের আইনজীবিদের মধ্যে খ্যাতনামা আইনজ্ঞ বলিয়া তিনি প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। জনাব আতাউর রহমান খানের সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৩৪-৩৫ সালে ছাত্রাবস্থায়। ঐ বৎসর তিনি ঢাকা জেলা প্রজা সমিতির সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ সালে তিনি জেলা মুসলিম লীগের কার্যনিৰ্বাহক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ বৎসরই তিনি মহকুমা মুসলিম লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪২-৪৬ সালে ঢাকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি শান্তি কমিটির সদস্য তালিকাভূক্ত হন এবং স্থানীয় শান্তিরক্ষা কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান পাট চাষী সমিতির এবং পাকিস্তান জুট ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হইয়া কায়েদে আজমের নিকট প্রেরিত এক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করেন। তিনি কায়েদে আজমের নিকট পাট সমস্যা সমাধান সম্পর্কে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রদান করেন।
১৯৪৯ সালে তিনি মুসলিম লীগ কর্মীদের এক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। উক্ত সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী উক্ত প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। মওলানা ভাসানী কারারুদ্ধ থাকাকালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের অস্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হন। গণতন্ত্রের অগ্রদূত জনাব আতাউর রহমান খান দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি গঠনতন্ত্রের মূলনীতি কমিটির বিরুদ্ধে এক আন্দোলন পরিচালনা করেন এবং ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ব্যক্তি স্বাধীনতা লীগ ও পূর্ব বঙ্গ শান্তি কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কর্মপরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ব্যাপারে তিনি বিশেষ আগ্রহশীল।
১৯৫৪ সালে ঐ পদে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি দক্ষিণ পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক শান্তি সম্মেলনে যােগদানকারী পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের সরকারী নেতা হিসেবে চীন সফর করেন। ১৯৫৪ সালে মওলানা ভাসানী ও জনাব সােহরাওয়ার্দীর সহিত সাক্ষাৎ করার জন্য তিনি যথাক্রমে ইংল্যান্ডে ও সুইজারল্যান্ডে গমন করেন। বিগত ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঐ বৎসরই তিনি প্রথম যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার বেসামরিক সরবরাহ দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রির পদ গ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে জুন মাসে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং নয়া শাসনতন্ত্র প্রণয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।
শেখ মুজিবুর রহমান
জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২১ সালে ফরিদপুর জেলার গােপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলিকাতা ইসলামিয়া কলেজ হইতে গ্রাজুয়েট ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৪০ সালে তাহার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। এই সময় তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন এবং নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের কাউন্সিলর ও গােপালগঞ্জ মহকুমা মুসলিম লীগের সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৪১ সালে কলিকাতার হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলন এবং ১৯৪৩ সালে রশীদ আলী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। তিনি নিখিল ভারত ও নিখিল বঙ্গ মুসলিম লীগের কাউন্সিলর ছিলেন। জনাব মুজিবুর রহমান দেশ বিভাগের অব্যবহিত পরেই মুসলিম লীগের সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগের প্রতিষ্ঠাতা। পূৰ্ব্ব বঙ্গে মুসলিম লীগ আমলে তাহাকে চারবার কারাবরণ করিতে হয়। ইহার মধ্যে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকিবার অপরাধে ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে প্রথম বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নশ্রেণীর কর্মচারিদের ধর্মঘটের ব্যাপারে ১৯৪৯ সালে তাহাকে আইন ক্লাশ হইতে বহিষ্কৃত ও একই অপরাধে দ্বিতীয়বার গ্রেফতার করা হয়। ইহার পর ১৯৪৯ সালে তাহাকে পুনরায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করিবার অপরাধে কারাবরণ করিতে হয়। ১৯৪৯ সালের অক্টোবর মাসে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জনাব লিয়াকত আলী খান সমীপে এক প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করিবার অপরাধে তাহাকে কারারুদ্ধ করা হয়। গােপালগঞ্জ কারাগারে বন্দী অবস্থায় তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেল হইতে মুক্তিলাভের পর তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে পিকিং এ অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে তিনি যােগদান করিয়াছিলেন।
বিগত সাধারণ নির্বাচনে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ব্যবস্থা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হইবার কিছুদিন পরেই ফজলুল হক মন্ত্রিসভায় যােগদান করেন। গত জুন মাসে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নিৰ্বাচিত হন।