You dont have javascript enabled! Please enable it! 1956.08.05 | জনগণের দুর্গতির জন্য প্রধানমন্ত্রীই দায়ী প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মজিবর রহমানের বিবৃতি | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
৫ই আগস্ট ১৯৫৬
জনগণের দুর্গতির জন্য প্রধানমন্ত্রীই দায়ী
প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মজিবর রহমানের বিবৃতিঃ

পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন যে, এই সমস্যাসংকুল সময়ে প্রধানমন্ত্রী জনাব মােহাম্মদ আলীর। পূর্ব-পাকিস্তান সফর মতলববিহীন নয়। ইউরােপ সফরের পর করাচী প্রত্যাবর্তন করিয়া তিনি যে বিবৃতি দিয়াছিলেন উহার পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান সফরের উদ্দেশ্য বিবেচনা করা প্রয়ােজন।
বিবৃতিতে পাকিস্তানের সেক্রেটারী জেনারেল, অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশসেবার ফিরিস্তি তিনি দিয়াছেন। অধীনস্থ কর্মচারীর পদ হইতে বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী পদে উন্নীত হওয়া কম কৃতিত্বের কথা নয়। ইহা অবশ্যি নিঃস্বার্থ দেশ সেবার মহান দৃষ্টান্ত। কাশ্মীরের ভাগ্য বিড়ম্বনা, অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব, গণতন্ত্রের মুন্ডুপাত ব্যক্তিস্বাধীনতা হত্যা এবং ষড়যন্ত্রই ছিল জনাব মােহাম্মদ আলীর সাফল্যের প্রধান অস্ত্র। তাঁহার অর্থমন্ত্রিত্বের আমলে দেশের উভয় অঞ্চলের মধ্যে মারাত্মক বৈষম্য সৃষ্টি করা হইয়াছে। ইহা অতি সত্য কথা যে, জনাব মােহাম্মদ আলীর উন্নতির ইতিহাস দেশ হিসাবে পাকিস্তান ও জাতি হিসাবে পাকিস্তানীদের অবনতিই বহন করিয়া আনিয়াছে। জনাব মােহাম্মদ আলীর এক ইউনিট বিল সমর্থন করার বিনিময়ে ডাঃ খান সাহেবের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষাৰ্থ নিজ দলের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া উহার মুন্ডুপাত করিতে পারে, এহেন রাজনৈতিক নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। তাই রিপাবলিকান দল মুসলিম লীগের ধ্বংস স্তুপের উপর প্রতিষ্ঠিত হইতে পারিয়াছে। তাঁহার এই খেলা ধরিতে পারিয়াছে বলিয়া মুসলিম লীগ আর তাহাকে সহ্য করিতে রাজী নয়। পশ্চিম পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা শােচনীয় বলিয়া সমর্থক শিকারের আশায় এবং কারসাজির সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তানের ধ্বংসেম্মুখ সরকার মন্ত্রিসভাকে,বাঁচাইয়া রাখার জন্য,তিনি পূর্ব পাকিস্তানে তসরিফ আনিতেছেন। জনাব সরকার নিঃসন্দেহে কেন্দ্রেও একজন ভাল দালাল। কিন্তু যখন তিনি হাবুডুবু খাইতে থাকেন তখন তাহার কেন্দ্রের সাহায্যের প্রয়ােজন হয়। শেখ মজিবর বলেন যে, পূর্ব-পাকিস্তানের জনসাধারণ যখন অনাহারে মৃত্যুবরণ করিতেছিলেন, তখন জনাব মােহাম্মদ আলী নিজের অপদার্থতার জন্য লণ্ডনে পাকিস্তানের মুখে চুনকালি লেপন করিতেছিলেন। জনাব মােহাম্মদ আলীই পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষাবস্থার উপর কোন গুরুত্ব প্রদান করেন নাই। তাঁহার উদাসিনতার জন্য প্রদেশে খাদ্য অর্ডিন্যান্স জারি করা হইয়াছে এবং উক্ত অর্ডিন্যান্সের বলে বেত্রদণ্ডের ব্যবস্থা করিয়া জনসাধারণের নৈতিক মনােবল ধ্বংস করা হইয়াছে। আমরা জানিতে চাই, তাহার অভিপ্রায় কি? তিনি কি পূর্ব পাকিস্তানকে পঙ্গু করিয়া চিরতরে শােষণক্ষেত্রে পরিণত করিতে চাহেন?
পরিশেষে জনাব রহমান বলেন,জনসাধারণ ভাল করিয়াই জানেন যে,চৌধুরী মােহাম্মদ আলীই অর্থনৈতিক দিক হইতে পূর্ব পাকিস্তানকে ধ্বংস করিয়াছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাই উহার প্রমাণ। গত সাত বৎসর যাবৎ তাহার অনুসৃত নীতিই পূর্ব পাকিস্তানীদের দুর্দশার জন্য দায়ী।