You dont have javascript enabled! Please enable it! 1956.08.14 | গণ-প্রতিনিধিদের ক্রুদ্ধ আক্রোশের মুখে রণেভঙ্গ দিয়া অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকার-মন্ত্রিসভার গা রক্ষা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
১৪ই আগস্ট ১৯৫৬
গণ-প্রতিনিধিদের ক্রুদ্ধ আক্রোশের মুখে রণেভঙ্গ দিয়া অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকার-মন্ত্রিসভার গা রক্ষা
স্বপ্নচারী মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে গভর্ণর কর্তৃক পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত
বিভিন্ন দলের দুইশতাধিক সদস্যের যুক্ত বৈঠকে মন্ত্রীসভার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন

বড় বাস্তবের কঠোর আঘাতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বপ্নচারী ‘নির্ভীক’ মুখ্যমন্ত্রীর গদিচ্যুতি যখন অবধারিত সত্য হইয়া দেখা গিয়াছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে গতকল্য (সােমবার)
প্রাদেশিক পরিষদের বহু প্রতীক্ষিত অধিবেশনের প্রাক্কালে গভর্ণর জনাব এ, কে, ফজলুল হক এক নির্দেশনামা জারি করিয়া পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখেন। নির্ধারিত সময় বেলা ৪টায় সদস্যগণ পরিষদ কক্ষে আসন গ্রহণ করিলে পরিষদের স্পীকার জনাব আবদুল হাকিম গভর্ণরের নির্দেশনামাটি হাতে লইয়া পরিষদ কক্ষে প্রবেশ করেন। সঙ্গে সঙ্গে পরিষদে খুব উত্তেজনার সঞ্চার হয়। ট্রেজারী বেঞ্চের শূন্য আসনগুলি লক্ষ্য করিয়া সদস্যবর্গ ক্রুদ্ধ আক্রোশে ফাটিয়া পড়ল। স্পীকার গভর্ণরের নির্দেশনামাটি পাঠ করিবার পূর্বেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবুর রহমান আবু হােসেন মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করিলে কংগ্রেস দলের সম্পাদক শ্রী মনােরঞ্জন ধর প্রমুখ বিরােধী দলীয় কতিপয় নেতা সংক্ষিপ্ত ভাষণে তপ্রতি সমর্থন জানান। সঙ্গে সঙ্গে পরিষদে উপস্থিত দুই শতাধিক সদস্য দণ্ডায়মান হইয়া অনাস্থা প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানান। অতঃপর স্পীকার গভর্ণরের নির্দেশনামাটি পাঠ করিয়া পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করেন। গভর্ণরের নির্দেশনামায় বলা হয় যে,উদ্ভূত গুরুতর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আবশ্যক বােধ হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে তিনি শাসনতন্ত্রের ৮৩ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘােষণা করিতেছেন। স্পীকারের পরিষদ কক্ষ ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সদস্যগণ জনাব আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে এক সভা করেন। সভায় গভর্ণরের নির্দেশনামাটির তীব্র সমালােচনা করিয়া ও বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করিয়া উহার অপসারণ দাবিতে দুইটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন আওয়ামী লীগের জনাব খয়রাত হােসেন এবং এই প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তৃতা করেন কংগ্রেস দলের তরফ হইতে শ্রী মনােরঞ্জন ধর; ইউ,পি,পি’র তরফ হইতে শ্রী ধীরেন দত্ত ও শ্রী পুলিন দে; সালাম খান গ্রুপের পক্ষ হইতে জনাব আবদুস সালাম ও জনাব হাসিম উদ্দীন; মুসলিম লীগের তরফ হইতে জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরী; তফসিলী ফেডারেশনের পক্ষ হইতে শ্রী রসরাজ মণ্ডল ও নীল কমল সরকার; গণতন্ত্রী দলের তরফ হইতে জনাব দেওয়ান মাহবুব আলী; কফিল উদ্দীন চৌধুরী গ্রুপ হইতে জনাব কফিল উদ্দীন চৌধুরী ও ডাঃ জসিম উদ্দীন আহমদ হােসেন গ্রুপ হইতে জনাব রফিকুল হােসেন, (গতকল্য সকালে এই গ্রুপের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মন্ত্রী জনাব আহমদ হােসেনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করা হয়); খেলাফতে রব্বানী পার্টির তরফ হইতে অধ্যাপক আবুল কাসেম ও মহিলাদের তরফ হইতে মিসেস সেলিনা বানু। পরিষদের অধিবেশন চলাকালীন স্পীকারের উপস্থিতিতেই জনৈক সদস্য ইচ্ছাকৃতভাবে গণ্ডগােল সৃষ্টির চেষ্টা করায় এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। স্পীকারের প্রস্থানের পর এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। সভায় বক্তৃতা চলাকালে অভূতপূর্ব উৎসাহ ও উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সরকারি মহলের নির্লজ্জ গণবিরােধী কার্যকলাপ ও পলায়নী মনােবৃত্তির জন্য তীব্র ঘৃণা ও বিক্ষোভ ফাটিয়া পড়ে। যে সব দল ও গ্রুপ গতকল্য এই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষ সমর্থন করিয়া ছিলেন তাহাদের সংখ্যাশক্তি দুইশত বলিয়া জানা গিয়াছে। সভাস্থলে অনাস্থা প্রস্তাবে সদস্যদের সহিও গ্রহণ করা হয়। বিরােধীদল দাবী করেন যে, তাহাদের সংখ্যাশক্তি আরও বৃদ্ধি পাইবে। গণতন্ত্রের প্রতি নির্লজ্জ হামলা বলিয়া অবহিত করেন। এবং সংঘবদ্ধভাবে এই হামলার মােকাবিলা করিতে দৃঢ় সংকল্প ঘােষণা করেন। পরিষদ কক্ষের সভায় প্রায় দুইশত সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবে সহি প্রদান করেন। সভার পর উল্লিখিত প্রস্তাব দুইটি টেলিগ্রামযােগে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে জানাইয়া দেওয়া হয়।
(স্থানাভাবে নেতৃবৃন্দের পূর্ণ বক্তৃতা প্রকাশ সম্ভব হইল না। আগামীতে উহা প্রকাশ করা হইবে।)