দৈনিক ইত্তেফাক
১৭ই আগস্ট ১৯৫৬
প্রতিবাদ দিবসকে সার্থক করুন
গণতন্ত্রকামীদের প্রতি শেখ মুজিবুরের আবেদন
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী শেখ মজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, গত ১৪ মাস ধরিয়া মনােনীত মুখ্যমন্ত্রী জনাব আবু হােসেন সরকার পূর্ববঙ্গে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রহিয়াছেন। তাঁহার কার্যকালের মধ্যে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, বারংবার ১৪৪ ধারা জারি করিয়া ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ, বিনাবিচারে রাজনৈতিক কর্মীদের আটক রাখা, গণতন্ত্রকে হত্যা করার জন্য বিভিন্ন জঘন্য পদ্ধতি অবলম্বন এবং ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন সময়কালীন ঐতিহাসিক ২১-দফা ওয়াদা ভঙ্গের ব্যাপারে অদ্ভুত কেরামতি দেখাইয়াছেন।
শাসনতন্ত্র রচনার ব্যাপারে তাহার নেতা গভর্ণর জনাব এ, কে, ফজলুল হক পূর্ববঙ্গের দাবী ও স্বার্থকে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক চক্রের পাদমূলে সাফল্যের সহিত বিকাইয়া দিয়া নিজের গভর্ণর পদ লাভের পথ প্রশস্ত করিয়াছেন। তাহার এই কাজের ফলে বাংলার ইতিহাসের কুখ্যাত মীরজাফরের কথাই মনে পড়ে। বিগত সাধারণ নির্বাচনের সময়ে জনাব হক জনসাধারণের ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করিবেন বলিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, কিন্তু বস্তুতপক্ষে আজ বাঙ্গালীরা যখন খাদ্য দাবী করিতেছে, সেই সময় তিনি তাহাদের বেত্রাঘাতে জর্জরিত করিতেছেন। জনাব হক তাহার “বিশ্বস্ত অনুচর জনাব সরকারের সহিত হাত মিলাইয়া জঘন্যরূপে তাঁহার সম্মানজনক পদের অপব্যবহার করিয়াছেন এবং শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক ব্যবস্থা পরিষদের অধিবেশন বাতিল করিয়া দিয়া তিনি দুর্ভিক্ষ, নিরক্ষরতা, ক্রয়ক্ষমতাহীনতা প্রভৃতি বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত নির্বাচকমণ্ডলীর অভাব-অভিযােগ লইয়া আলােচনা করার অধিকার হইতে তাহাদের প্রতিনিধিদের বঞ্চিত করিয়াছেন। এই উপায়ে তিনি গণধিকৃত অসাধু ও অগণতান্ত্রিক মন্ত্রিসভাকে এখনও পর্যন্ত ক্ষমতাসীন রাখিয়াছেন। যুক্তফ্রন্ট সরকার কেন্দ্রীয় শাসকচক্রের নিকট হইতে ২১-দফা কাৰ্যসূচীতে বর্ণিত মূল দাবীগুলি আদায় করিয়া পূর্ববঙ্গের উপর দীর্ঘদিনব্যাপী শােষণ ও পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদের অপচয় নিবারণ করিতে পারিবেন এবং এই প্রদেশের সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি সাধন করিতে পারিবেন বলিয়া আশা করা গিয়াছিল; কিন্তু এই আশা মিথ্যা প্রমাণিত হইয়াছে। জনসাধারণের ভাগ্য লইয়া ছিনিমিনি খেলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ বর্তমান মন্ত্রিসভাকে বারংবার হুঁশিয়ারি করিয়া দিয়াছে। কিন্তু আমাদের এই সমুদ্দেশ্য প্রণােদিত উপদেশের প্রতি তাঁহারা আদৌ কর্ণপাত করেন নাই। জনসাধারণের ধৈর্য আজ শেষ সীমায় উপস্থিত হইয়াছে। আওয়ামী লীগ চিরদিনই জনসাধারণের দাবী সমর্থন করিয়া আসিয়াছে। এই ধরনের অনাচার আর চলিতে দেওয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে অসম্ভব। এই কারণে আগামী ২৭শে আগষ্ট প্রদেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট, জনসভা ও শােভাযাত্রা অনুষ্ঠানের দ্বারা প্রতিবাদ দিবস” পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইয়াছে।
এই দিবসটি সাফল্যমণ্ডিত করিয়া তােলা এবং সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের সহযােগিতা করার জন্য আমরা সকল মতের গণতন্ত্রকামী জনসাধারণের নিকট আবেদন জানাইতেছি।