দৈনিক ইত্তেফাক
১০ই জুলাই ১৯৫৬
বুভুক্ষার করাল গ্রাসে গণ-জীবনে দারুণ হতাশার সঞ্চার
অনাহারে মৃত্যু ও আত্মহত্যা ও ভুখা মিছিল ও প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্য দাবী
বুভুক্ষা জর্জরিত পূর্ব বাংলার ঘরে ঘরে আজ দুঃস্থমানবের হাহাকার ধ্বনি উখিত হইতেছে। অনাহারে-মৃত্যু, আত্মহত্যা, ফসল বিনষ্ট ও অন্যান্য নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির অগ্নিমূল্য শহর ও গ্রাম-জীবনে আজ দারুণ হতাশার সূত্রপাত করিয়াছে। সভা-সমিতি এবং ভুখ মিছিলের মাধ্যমে আজ প্রদেশবাসী খাদ্যের দাবিতে তাহাদের বলিষ্ঠ আওয়াজ তুলিতেছে।
রাজশাহী খাদ্যাভাব সম্পর্কে আওয়ামী লীগ সম্পাদকের বিবৃতি
রাজশাহী জেলায় আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব মুজিবর রহমান নিমােক্ত বিবৃতি দিয়াছেনঃ
“আমি গত এক সপ্তাহব্যাপী রাজশাহী সদর মহকুমার গােদাগাড়ী, তানাের ও মােহনপুর প্রভৃতি এলাকায় ঘুরিয়া খাদ্যাভাবে মানুষের যে অবস্থা স্বচক্ষে দেখিয়াছি, তাহা ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব। মাসাধিককাল হইতে মানুষ অর্ধাহারে-অনাহারে দিন যাপন করিতেছে। চাউলের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলিয়া গিয়াছে। তাহাও আবার বাজারে পাওয়া যাইতেছে না। বীজধানের অভাবে এবার বহু জমি অনাবাদি থাকিয়া যাইবে। ভূমিহীন গরীব, বিধবা এবং গ্রাম্য প্রাইমারী শিক্ষকদের অবস্থা অবর্ণনীয়। ৩০ টাকা বেতনে ২০ টাকা মণ ধান ক্রয় করিয়া প্রাইমারী শিক্ষকদের শিক্ষকতা করা এক প্রকার অসম্ভব হইয়া পড়িয়াছে। ছাত্রদের বেতন অভাবে স্কুলগুলি অচল হইতে চলিয়াছে। ধানের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গরীবেরা মহাজনদের নিকট হইতে ধারে ধান পাইতেছে না। অদ্যাবধি সরকারি খয়রাতি ধানচাউল, টাকা বা কোন প্রকার সাহায্য গরীব লােকেরা পায় নাই। কিছুদিন পূর্বে কৃষিলােন হিসাবে কিছু টাকা দেওয়া হইয়াছিল। কিন্তু বিতরণ নীতির ক্রটির জন্য উহাও সকলের ভাগ্যে জোটে নাই। ইহা ছাড়া প্রায়ই অনাহারে আত্মহত্যার খবরও পাওয়া যাইতেছে। অবিলম্বে এই জেলার প্রতিগ্রামে সংশােধিত রেশনিং প্রথা প্রবর্তন করা হউক।”