আজাদ
২৬শে আগস্ট ১৯৫৫
এক ইউনিট বিল সম্পর্কে গণপরিষদে তুমুল বিতর্ক
দ্বিতীয় দিনের আলােচনায় ৪ জন সদস্যের অংশগ্রহণ
মালিক নূনের সংশােধনী প্রস্তাব বিধিবহির্ভূত ঘােষিত
করাচী, ২৫শে আগস্ট।
করাচীস্থ আজাদের বিশেষ প্রতিনিধির খবরে প্রকাশঃ
আওয়ামী লীগ সদস্য শেখ মুজিবর রহমান তাঁহার বক্তৃতায় মােছলেম লীগ সদস্যদের দৃঢ়তার সহিত সতর্ক করিয়া দিয়া বলেনঃ আপনাদের ইচ্ছাকে দেশবাসীর উপর চাপাইয়া দিবেন না। ইহা খুবই বিপজ্জনক নীতি। বৃটিশরাও ডিক্টেটারের ন্যায় ব্যবহার করিত। পরে তাহাদের ভাগ্যে কি ঘটীয়াছে? তাহাদিগকে পাততাড়ি গুটাইতে হইয়াছে।
সদস্য মহােদয় সিন্ধুতে পীরজাদা মন্ত্রিসভা, পাঞ্জাবে মালিক নূন ও সীমান্ত প্রদেশে সরদার আবদুর রশীদ মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করার তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি বলেন, এইসব মন্ত্রিসভাকে অগণতান্ত্রিক উপায়ে বরখাস্ত করা হইয়াছে। দেশবাসীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানান। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য পাকিস্তানের কোন ক্ষতি না করার জন্য আমি আপনাদের নিকট আবেদন জানাইতেছি। তিনি বলেন যে, দেশবাসী যদি এক ইউনিট চায়, তবে তাহাতে তাহার আপত্তি করার কিছু নাই। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে অবশ্যই জনমত যাচাই করিতে হইবে। তাহা না হইলে পূৰ্ব্ববঙ্গের সদস্যগণ নিজ প্রদেশে মুখ দেখাইতে পারিবে না।
অতঃপর শেখ মুজিবর রহমান বলেনঃ মাঝে-মাঝে আমি ভাবি আমাদের ক্ষমতাসীন ব্যক্তিগণ “আল্লার চাইতেও ক্ষমতাশালী।” তাঁহার এই উক্তিতে হঠাৎ ভীষণ প্রতিবাদের সুর উত্থিত হয়। স্পীকার সদস্য মহােদয়কে তাঁহার এই মন্তব্য প্রত্যাহার করিতে অনুরােধ করেন। জনাব মুজিবর ও ইহার জন্য আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন। আপনি কেন দণ্ড দিতে চান।
স্পীকারঃ আমরা এখানে সকলেই ধর্মভীরু। সুতরাং এরূপ মন্তব্য সম্পর্কে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত।
জনাব মুজিবরঃ আমি মুছলমান। আমার নাম মুজিবর রহমান। অপর দিকের সদস্যদের অপেক্ষাও আমি পাকা মুছলমান।
স্পীকারঃ গণপরিষদের মাননীয় সদস্যদের সম্পর্কে ইহা বল্গাহীন অভিযােগ।
শেখ মুজিবরঃ হুজুর আপনি পরিষদের স্পীকার এবং আপনি মােছলেম লীগ সদস্য নহেন।
স্পীকারঃ ইহার সহিত পরিষদের ও পরিষদ সদস্যদের মর্যাদার প্রশ্ন জড়িত। জনাব সােহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবর রহমানকে এই মন্তব্য প্রত্যাহারের অনুরােধ জানাইলে তিনি তাহা প্রত্যাহার করেন।
শেখ মুজিবর রহমান তাহার বক্তৃতার প্রথম দিকে পুনঃ পুনঃ “শাসকগােষ্ঠির কথা ব্যবহার করিতে থাকিলে স্পীকার তাহাতে আপত্তি উত্থাপন করিয়া বলেন যে, এই কথা পার্লামেন্টারী নিয়ম বিরােধী এবং সদস্য মহােদয় তাহার এই কথা প্রত্যাহার করেন।
শেখ মুজিবর রহমান করাচীকে এক ইউনিট এলাকার অন্তর্ভুক্ত করার বিরুদ্ধেও যুক্তি প্রদর্শন করেন।