মারকিন টেলিভিশনে পাক বর্বরতার কাহিনী নয়াদিল্লি, ১ আগস্ট-গত ২৯ জুলাই মারকিন যুক্তরাষ্ট্রে সি বি এস-এর টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে পাকিস্তানের নির্মম অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়। লক্ষ লক্ষ মারকিনী এই অনুষ্ঠানটি দেখেন। কারণ সন্ধ্যায় সংবাদের পরই এই অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল-বিবেকের প্রশ্ন।
বলা হয়, ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় সত্তর লক্ষ সন্ত্রস্ত শরণার্থী পাইপে এবং উদ্বাস্তু শিবিরে অপুষ্টি, কলেরা, টাইফয়েডের বিরুদ্ধে জীবন সংগ্রামে ব্যতিব্যস্ত। তবু তারা ভাগ্যবান। প্রাণে বেঁচে আছে। তাদের দেশে যা ঘটে গেছে তাকে গণহত্যাই বলা যায়।
গত মার্চে পাক সরকার সেনাবাহিনীকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক স্বাধীনতা আন্দোলনের পূর্ববঙ্গীয় সমর্থকদের ধ্বংস করার আদেশ দেন। পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ফলে দু লক্ষেরও বেশি নাগরিককে খুন করা হয় বলে কুটনীতিকরা দাবি করেছেন। বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ শুনুন। নিউইয়র্কের টনি ক্লিফটন লিখছেন : আমি দেখেছি, শিশুদের গুলি করে মারা হয়েছে। চাবুক মেরে মানুষের পিঠের চামড়া তুলে নেওয়া হয়েছে। চোখের সামনে ছােট ছােট ছেলেমেয়েদের খুন হতে দেখে বা মেয়েদের যৌন নির্যাতন দেখে লােক সত্যিই বােবা হয়ে গেছে। ‘নিউইয়রক টাইমস’-এর সিডনি শ্যানবারগ লিখেছেন : আদেশবলে ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক,
ইনজিনীয়ার ও চিকিৎসকদের খুন করা হয়। তারা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কিনা তা-ও দেখা হয়।
| বিশ্ব ব্যাংকের একজন অফিসার একটি শহর দেখে বলেছেন জনসংখ্যা চল্লিশ হাজার থেকে পাঁচ হাজারে দাঁড়িয়েছে। শতকরা আশিটি বাড়ি, দোকান, ব্যাংক সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। মনে হয়, পারমাণবিক আক্রমণের পরের দিনের প্রভাত।
মার্কিন সরকারী অফিসাররা দাবি করেন, পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দান স্থগিত রাখা হয়েছে। কার্যত দেখা যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ ডলার মূল্যের অস্ত্র এই দেশ থেকেই সরবরাহ করা হচ্ছে। অবশ্য এই মালের অরডার নাকি মার্চের আগে দেওয়া হয়েছিল। তার চেয়েও অবিশ্বাস্য, নিকসন প্রশাসন ওই পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য দিতে চাইছেন। এই অর্থও নাকি পাকিস্তান আগেই চেয়েছিল।
ইউ এন আই । ২ আগস্ট ‘৭১
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা