সাপ্তাহিক সৈনিক
৩১শে মার্চ ১৯৫৫
পূর্ব পাকিস্তানে পার্লামেন্টারী সরকার গঠন সম্পর্কে নতুন গুজব
ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনাঃ
আওয়ামী লীগের সাথে ভাগ বাটোয়ারার কথা
গবর্ণর জেনারেল জরুরী অর্ডিন্যান্স জারী করিয়া রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান কাজের দায়িত্ব স্বহস্তে গ্রহণ করিয়াছেন। আশা করা যাইতেছে পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট গঠনের ব্যাপারে এখন আর কোনাে বাধা থাকিল না। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের ভাগ্য সম্বন্ধে এখনাে অনিশ্চয়তা কাটিল না। অনেকের ধারণা, অদূর ভবিষ্যতেই পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্ত প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যের সময়ে সেখানে একটি মাত্র প্রদেশ গঠন হইয়া যাইবে। এক খবরে প্রকাশ, পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশে আপাতত পৰ্ণর এবং একটি মন্ত্রণা পরিষদই কাক্স ঢালাইবেন, কোনাে প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন না। অপর এক খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী একজন থাকিবেন, এবং, ডাঃ খান সাহেব প্রথম প্রধানমন্ত্রী হইতে পারেন। এ তাে গেল পশ্চিম পাকিস্তানের কথা। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে যে কি হইবে তা এখনাে বলা যাইতেছে না। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা পশ্চিম পাকিস্তানের মত জটিল নয়। এখানে একটি নির্বাচিত আইন মজলিসা আছে। শুধু কথা হইল এই আইন মজলিসে কোন দল সংখ্যাগরিষ্ঠ তা নির্ণয় করিয়া তার নেতাকে মন্ত্রিত্ব গঠনে আহ্বান জানানাে। কিন্তু গত ১৭ই ফেব্রুয়ারীর যুক্তফ্রন্ট পার্লামেন্টারী দলের সভার পর হইতে এ ব্যাপারে অনেকটা ধুম্রজাল সৃষ্ট হইয়া আছে। মেজরিটির কথা তুলিলে সত্যের খাতিরে বলিতেই হয় ফলল হকের সমর্থকগণই সংখ্যায় অধিক। কিন্তু আওয়ামী লীগের বৃহত্তর অংশ তার কতগুলি অতীত অপরাধের প্রশ্ন তুলিয়া তার সাথে অসহযােগিতা করিবার ব্যাপারে একেবারে কসম খাইয়া বসিয়াছেন বলিয়া মনে হয়। এদের নেতা জনাব আতাউর রহমান ও শেখ মজিবর রহমান আশা করিয়াছিলেন জনাব সােহরাওয়ার্দী তার ব্যক্তিত্বের জোরে ১৭ই ফেব্রুয়ারীর সভা সম্পর্কে তাদের ব্যাখ্যাকেই কেন্দ্রে গৃহীত করিতে সক্ষম হইবেন। তবে জানা গিয়াছে জনাব। সােহরাওয়ার্দী এ ব্যাপারে সক্ষম হন নাই। স্বভাবতই হক সাহেবের কথাই আবার আলােচিত হইতেছে। পূর্ব পাকিস্তানে পার্লামেন্টারী সরকার কায়েমে কেন্দ্রেরও প্রয়ােজন এখন প্রকট। কারণ শাসনতান্ত্রিক কনভেনশনকে প্রতিনিধিমূলক দেখাইতে হইলে এ ব্যাপারে একটি আপােষে আসিতেই হইবে। অবস্থা এখন এমন দাড়াইয়াছে যে, কনভেনশনের প্রতিনিধি মনােনয়ন এবং ৯২(ক) প্রত্যাহার এই দুইটি বিষয় একত্রে আলােচিত হইতেছে। পূর্বপাক আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নাকি এখন ফজলুল হকের প্রতি অনেকটা বাস্তব মনােভাব গ্রহণ করিয়াছেন। অন্যদিকে হক সাহেবকেও নাকি বলা হইতেছে যে, তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব দেওয়া হইলেও কনভেনশনে প্রতিনিধি মনােনয়নের সময় আওয়ামী লীগকে শতকরা ৫০ সিট দিতে হইবে। এই রকম একটা আপােষে হক সাহেবের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে আবার মন্ত্রিত্ব গঠন হইতেও পারে।