আজাদ
২৬শে এপ্রিল ১৯৫৫
কনভেনশনের বিরােধিতাই ৯ জন সদস্যের বহিষ্কারের কারণ
আওয়ামী লীগ দলীয় ২৬ জন এম-এল-এর যুক্ত বিবৃতি
গতকল্য (রবিবার) পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদের ২৬ জন আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য এক যুক্ত বিবৃতিতে জনাব সােহরাওয়ার্দীর সহিত তাঁহাদের মতভেদ এবং সম্প্রতি আওয়ামী লীগ হইতে ৯ জন সদস্যের বহিষ্কারের কারণ বর্ণনা করেন। বিবৃতিতে তাঁহারা বলেন, “আওয়ামী লীগ হইতে ৯ জন সদস্যের বহিষ্কার আমাদিগকে মােটেই বিস্মিত করে নাই। রাষ্ট্রভাষা, কেন্দ্র এবং প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন, বিনা খেসারতে জমিদারী উচ্ছেদ, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহিত জিন্না আওয়ামী লীগের সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে জনাব সােহরাওয়ার্দীর সহিত আমাদের সভানৈক্য বহুদিন হইতেই তাহাকে পীড়া দিতেছিল। জনাব সােহরাওয়ার্দীর সভাপতিত্বে এবং জনাব আতাউর রহমান ও মুজিবর রহমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত জিন্না আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় গবর্ণর জেনারেল কর্তৃক ঘােষণা জারী করিয়াও দেশের শাসনতন্ত্র প্রবর্তন করা যাইতে পারে বলিয়া যে প্রস্তাব গৃহীত হয় উহাও আমরা অনুমােদন করিতে পারি নাই।” তাঁহারা বলেন, “আমাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ মতভেদ দেখা দিয়াছে প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র কনভেনশনের প্রশ্নে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানাইয়াছি যে, যেকোন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শাসনতান্ত্রিক ও আইনগত অচলাবস্থা দূর করার জন্য আমরা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত পূর্ণ সহযােগিতা করিতে সম্মত আছি। আমাদের দাবী হইতেছে এই যে, প্রস্তাবিত তাঁবেদার শাসনতন্ত্র কনভেনশনের পরিবর্তে পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গণপরিষদ অবিলম্বে গঠন করা হউক। জনাব সােহরাওয়ার্দী তাহার বৈধ ভূমিকা লইয়া আওয়ামী লীগ সদস্যগণকে সরকারী প্রস্তাব গ্রহণের জন্য চাপ দিতেছেন। ইহা কতখানি অগণতান্ত্রিক, অযৌক্তিক এবং অপমানজনক যে, প্রস্তাবিত কনভেনশন সমর্থন না করিলে উহার একমাত্র বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সামরিক শাসন প্রবর্তন করা হইবে। জনাব সােহরাওয়ার্দীর এইরূপ হুমকি এবং নিকট ভবিষ্যতেই ক্ষমতা প্রাপ্তির লােভ তাহার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহচরকে অতিভুক্ত করিয়া ফেলিলেও আওয়ামী লীগের সদস্যগণ সাধারণভাবে বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নিকট পেশ করিয়াছেন। প্রদেশ এবং গণতন্ত্রের স্বার্থের খাতিরে আমরা এবং আমাদের অপর কয়েকজন বন্ধু এই বিষয়ে প্রকাশ্যে জনাব সােহরাওয়ার্দীর বিরােধিতা করি। ইহার ফলেই আমাদের ৯ জনকে দল হইতে বহিষ্কার করা হয়। প্রস্তাবিত কনভেনশনের বিরুদ্ধে তাহারা বিশিষ্ট ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিলেন ইহাই তাহাদিগকে বহিষ্কারের কারণ। কিন্তু বাহ্যতঃ বলা হইয়াছে যে, গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জনাব ফজলুল হককে সমর্থন করার জন্যই উক্ত ৯ জন সদস্যকে বহিষ্কার করা হইয়াছে।” অতঃপর তাঁহারা বলেন, “গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি ৩৩ জন আওয়ামী লীগ দলীয় এম, এল, এ জনাব ফজলুল হককে সমর্থন করেন। কিন্তু গত ২১শে এপ্রিল জনাব সােহরাওয়ার্দীর উপস্থিতিতে গবর্ণমেন্ট হাউসে (?) অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় যে ৯ জন প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের বিরােধিতা করেন কেবল সেই ৯ জনের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। মওলানা ভাসানীর অনুপস্থিতিতেই এই সমস্ত করা হয়। মওলানা ভাসানী শীঘ্রই পূর্ববঙ্গে প্রত্যাবর্তন করিবেন এবং তিনি সুস্পষ্টরূপে প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র রচনাকারী কনভেনশনের বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করিয়াছেন। জনাব সােহরাওয়ার্দী বলেন- প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র কনভেনশন সমর্থন কর। মওলানা ভাসানী বলেন- ইহার বিরােধিতা কর। আমরা জনমত এবং প্রতিষ্ঠানের সভাপতির নির্দেশ অনুসারেই কাজ করিয়াছি। জনাব সােহরাওয়ার্দী গবর্ণর জেনারেলকে বলুন যে, প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্র কনভেনশনের বিকল্প ব্যবস্থা সামরিক শাসন নহে। পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন গণপরিষদ গঠন করিয়া জনগণের রায়কে স্বীকার করাই একমাত্র বিকল্প ব্যবস্থা।” উপরােক্ত বিবৃতিতে নিম্নলিখিত সদস্যগণ স্বাক্ষর করিয়াছেন(১) আবদুস সালাম খান, (২) এ, কে, এম জহিরুল হক, (৩) খন্দকার মুশতাক আহমদ, (৪) মাহফুজুল হক, (৫) আবুল হােসেন, (৬) হাপেমউদ্দিন আহমদ, (৭) সৈয়দ শরফুদ্দিন হােসেন, (৮) খালেক নেওয়াজ খান, (৯) আফতাবুদ্দিন আহমদ, (১০) আবদুল ওয়াহেদ বােকাইনগরী, (১১) আবদুল হাকিব মিয়া, (১২) ইনসান আলী ভুঞা, (১৩) এম, এ, হামিন, (১৪) সৈয়দুজ্জামান মিয়া, (১৫) আবদুল হাকিম, (১৬) মােস্তাগাওসুল হক, (১৭) অবেদুল করিম, (১৮) আলমাস আলী, (১৯) আবদুল আওয়াল, (২০) আনােয়ারা খাতুন, (২১) আমীর আলী খান, (২২) এমদাদ আলী খান, (২৩) ফজলে হক, (২৪) মাে. আবদুল্লাহ, (২৫) মােম্মেল হােসেন, (২৬) এনায়েত উল্লাহ।