বাংলাদেশে জেলায় জেলায় পাক সেনাদের তাণ্ডব
| নিজস্ব প্রতিনিধি মহিমারঞ্জন বাগচী তুফাননগর, ৯ই জুলাই–বাংলাদেশের রংপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহ জেলা থেকে আগত শরণার্থীদের মুখে ওপারে খান–সেনাদের পৈশাচিক তান্ডবলীলার বীভৎস কাহিনী শােনা যাচ্ছে। | আগত শরণার্থীরা যুগান্তর প্রতিনিধিকে বলেন যে, রংপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ভুরুঙ্গামারী, পাগলাহাট, বগুড়া ও ময়মনসিংহ প্রভৃতি এলাকায় পাক–সৈন্যবাহিনী সাধারণ মানুষের ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে। শত শত মানুষকে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে নির্বিচারে গুলী করে হত্যা করছে। পক্ষকাল আগে সৈয়দপুরে ৪০০ জনকে ও ভুরুঙ্গামারী ও পাগলাহাটে প্রায় ২০০ জনকে গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরাও পাক জরাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
| শেরপুর থেকে আগত জনৈক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন যে, ঝাউগারা গ্রামের তােতমল কারােয়া, মহেশচন্দ্র দে, সন্তোষচন্দ্র দে, গণেশ চন্দ্র ও চরশেরপুর গ্রামের রাজেন্দ্র চন্দ্র দত্ত সহ প্রায় ৮০ জনকে একটি খালের ধারে পাক–দস্যুরা গলা কেটে হত্যা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীর পিতা–মাতার খোঁজ–খবর এখনও পাওয়া যাচ্ছে না।
শরণার্থীরা আরও বলেন, খান–সেনারা মুসলিম লীগের সহায়তায় রংপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ভুরুঙ্গামারী, লালমনিরহাট, কুলাঘাট, নাগেশ্বরী ও শেরপুর প্রভৃতি গ্রামে প্রবেশ করে হিন্দু ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের খুজে খুজে বার করে ডেকে নিয়ে গিয়ে কাউকে কুপিয়ে কাউকে বা লাইন করে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের গুলীতে হত্যা করেছে। পাক–দস্যুরা সৈয়দপুর স্টেশন থেকে দুমাইল দূরে ট্রেন থামিয়ে কয়েক শ হিন্দু নরনারী ও শিশুকে কুপিয়ে অথবা গুলী করে হত্যা করে।
| তাঁরা বলেন, পাক–দস্যুরা পল্লীতে পল্লীতে ঢুকে হানা দেয় এবং হাজার হাজার ঘর–বাড়ীতে অগ্নি সংযােগ করে। শিশু–নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের উপর পাক–জল্লাদেরা এক অমানুষিক অত্যাচার চালায়। রংপুর সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে খান–সেনারা কয়েকশ যুবতীকে আটক রেখেছে অথবা হত্যা করেছে। মুসলিম লীগ পাক–সেনাদের প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছে। শিশু ও বৃদ্ধরাও পাকদস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
ত্রিশজন পাকসেনা খতম হলদিবাড়ী, ৯ই জুলাই–হলদিবাড়ী শহরের অনতি দূরে রংপুর জেলার চিলাহাটিতে পরপর কয়েকদিন আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিফৌজ কমপক্ষে তিরিশজন পাকসেনাকে খতম করেছে।
চিলাহাটি থেকে আগত জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া খবরে প্রকাশ যে, গত ৩০শে জুন এবং ৬ই জুলাই মুক্তিফৌজের দুটি প্রচণ্ড আক্রমণে তিরিশজনেরও বেশি পাক–সৈন্য মারা গেছে এবং জনা চল্লিশেক আহত হয়েছে। আহতদের সৈয়দপুরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
মুক্তিফৌজের পর পর আক্রমণের ফলে চিলাহাটিতে আরও সৈন্য আনা হয়েছে। আশে–পাশের সমস্ত বাড়ীগুলিকে জনশূন্য করা হয়েছে। ঝােপ–জঙ্গল কেটে ফেলা হচ্ছে। শেষপর্যন্ত দালালরাও বাড়ীঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে চিলাহাটিতে হাই–স্কুলটিতে সৈন্যদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১০ জুলাই ‘৭১
সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা