যুগান্তর
১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১
নিয়াজির নিশর্ত আত্মসমর্পন
বৃহস্পতিবার ঢাকায় দলিল স্বাক্ষর
নয়াদিল্লী, ১৬ ডিসেম্বর (ইউ এন আই) – পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী আজ বিনাশর্তে মুক্তিবাহিনীর সহযোগী ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ পূর্ন মুক্তি লাভ করল। আত্মসমর্পনের নথিপত্র স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশে পাক বাহিনীর প্রধান লে জে নিয়াজি এবং ভারতীয় ইস্টার্ণ কমান্ডের জি ও সি ইন সি লে জে জগজিৎ সিং আরোরা। লে জে আরোরা এই উদ্যেশ্যে আর দুপুরে বিমানযোগে বাংলাদেশের রাজধানীতে গিয়েছিলেন। বিকাল ৪ টা ৩১ মিনিটে এই নথি স্বাক্ষর হয়।
পাক দখলদার বাহিনীরা বিনাশর্তে আত্মসমর্পনের কথা প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি লোকসভায় ঘোষণা করেন এবং রাজ্যসভায় এই কথা ঘোষণা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রী জগজীবন রাম। বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময় উভয় কক্ষে একই ঘোষণা করা হয়।
এই ঘোষণার সংগে সংগে উভয় কক্ষ উল্লাসে ফেতে পরে এবং নির্দিস্ট সময়সূচীর বাইরেও তারা অধিবেশন চালিয়ে যান।
আত্মসমর্পনের ব্যাপারে সমস্ত ব্যাবস্থা করেন ইস্টার্ণ কমান্ডের চিফ অফ স্টাফ মেজর জেনারেল জে এফ আর জেকব। আমাদের সৈন্যাধক্ষ জেনারেল মানেকশের চরমপত্র অনুযায়ী আজ সকাল ন’টার পরেই জেনারেল নিয়াজি বিনাশর্তে আত্মসমর্পনের কথা জানান।
সকাল ন’টার দশ মিনিট পূর্বে জেনারেল নিয়াজির বার্তা এসে পৌঁছায়।
আত্মসমর্পনের শর্ত
পাকিস্তানী বাহিনীর লে জে নিয়াজি ভারতীয় বাহিনীর লে জে আরোরার কাছে প্রদত্ত যে আত্মসমর্পনপত্রে স্বাক্ষর করেন তাঁতে আছে, এতোদ্বারা পূর্বাঞ্চলের ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জি ও সি ইন সি লে জে আরোরার কাছে পাক বাহিনীর ইস্টার্ণ কমান্ড বাংলাদেশস্থিত সমস্ত পাকিস্তানী সশস্ত্র সৈন্যের আত্মসমর্পনের কথা স্বীকার করেছে। আত্মসমর্পন যারা করেছে তাদের মধ্যে আছে পাকিস্তানী স্থল, বিমান নৌবাহিনীসহ প্যারামিলিটারি বাহিনী ও অসামরিক সশস্ত্রবাহিনীর সমস্ত সৈনিক।
এই সমস্ত বাহিনীর সৈনিকেরা যে যেখানে আছে সেখানকার লে জেনারেল আরোরার অধিনস্ত সৈন্যবাহিনীর কাছে অস্ত্র ও আত্মসমর্পন করবে। এই নথি স্বাক্ষরের সংগে সংগেই পাকিস্তানী ইস্টার্ন কমান্ড লে জে আরোরার অধীন হয়ে যাবে।
এই আদেশ যে অবজ্ঞা করবে তাকে আত্মসমর্পন শর্তের পরিপন্থী বলে মনে করা হবে এবং যুদ্ধের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। আত্মসমর্পন শর্তাবলি সম্পর্কে কোন সন্দেহ দেখা দিলে লে জে আরোরা সে বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দেবেন তাই চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করা হবে।
লে জে আরোরা এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, যেসব সৈন্য আত্মসমর্পন করবে তাদের প্রত্যেকের সঞে জেনেভা চুক্তির শর্তানুযায়ী সন্মান ও মর্যাদাপূর্ন ব্যাবহার করা হবে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য ব্যাবস্থা অবলম্বন করা হবে।