You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.16 | বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌ বহর পৌঁছেছে, কুড়িটি রুশ রণ তরীও আসছে - সংগ্রামের নোটবুক

আনন্দবাজার পত্রিকা
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌ বহর পৌঁছেছে, কুড়িটি রুশ রণ তরীও আসছে

মার্কিন সপ্তম নৌবহর বুধবারই বঙ্গোপসাগরে এসে হাজির হয়েছে। এই বহরে আছে পরমাণু শক্তিচালিত বিমানবাহিনী জাহাজ ‘এন্টারপ্রাইজ’। সঙ্গে এসেছে আরও সাতটি রণতরী। এদিন সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো ইউ পি আই এর এই খবরের পাশাপাশি টোকিও থেকে এপি জানিয়েছে কুড়িটি সোভিয়েত রণতরীও ভার মহাসাগরে এসো জড়ো হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে এমন জাহাজও এর ভেতরে আছে। জাপানী প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্ররা বলেছেন, গত ৯ ডিসেম্বর জাপানের দক্ষিণতম প্রান্ত ও কোরিয়া উপদ্বীপের মধ্যবর্তি সুসিমা প্রণালির ভিতর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রবাহি একটি সোভিয়েত ফ্রিগেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে এমন একটি সোভিয়েত ডুবোজাহাজও বঙ্গোপসাগরের দিকে পাড়ি দিয়েছে।

বুধবার রাতেই নয়াদিল্লীতে কর্তৃপক্ষ মহল বলেছেন, খবর পেয়েছি মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে ঢুকেছে। বাংলাদেশ থেকে দখলদার পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার কোন রকম এক্তিয়ারই এই নৌবহরের নেই। সপ্তম নৌবহর বা বাইরের যে কোন শক্তিই হোক- পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর উপর এখন কারো কোন রকম এক্তিয়ার নেই। কারণ, পশ্চিম পাকিস্তান বাহিনীর সঙ্গে এখন ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হচ্ছে।

নয়াদিল্লীতে একজন সরকারী মুখপাত্র আজ বলেছেন, মার্কিন নৌবহরের কয়েকটি জাহাজ মালাক্কা প্রণালির পশ্চিম দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে। জাহাজগুলো কোথায়, কোনদিকে যাবে এবং কেনই বা এসেছে তা এখনো যানা যায়নি। আমেরিকায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এব্যাপারে এখনো পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা পাননি। গোঁড়ায় বলা হচ্ছিল, মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করতেই মার্কিন নৌবহর আসছে। কিন্তু বিগত ৩৬ ঘণ্টা ধরে বলা হচ্ছে, ‘রক্তপাতের সম্ভবনা’ দেখা দেওয়ায় পাকবাহিনী ও বিহারি মুসলমানদের অপসারণের জন্যই ঐ নৌবহর এসেছে।

আমেরিকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত শ্রী এল কে ঝাঁ গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বৈঠকে বলেছেন, পাক সৈন্য ও অসামরিক লোকজন সরিয়ে নিতে বঙ্গোপসাগরে ঐ বোম্বেটে মার্কিন নৌ বহর যদি বাংলাদেশে জাহাজ ভেড়াতে চায় তাহলে এই একতরফা ব্যাবস্থার দরুন পরিস্থিতি দুর্বহ হইয়ে উঠবে এবং সমগ্র ব্যাপারটি অনেক বিপদজনক হয়ে উঠবে। শ্রী ঝাঁ আরও বলেছেন, পশ্চিম খণ্ডে পাক সৈন্যের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ থেকে যদি সৈন্য সরিয়ে নেওয়া হয় – তাহলে এই কাজকে আমরা শত্রুতা বলেই গণ্য করব।

সপ্তম নৌবহর অধিনায়ক এডমিরাল জর্জ ম্যাকেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্সকে বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানকে এই নৌবহরের আওতায় আনার উদ্যেশ্যে তাঁর বহরের কর্মক্ষেত্র ভারতের পশ্চিম দরিয়া অবধি প্রসারিত করা হয়েছে। এ এফ পি এই খবর দিয়ে জানিয়েছে, গত সোমবার ম্যানিলায় মার্কিন- ফিলিপিনো যৌথ প্রতিরক্ষা পর্যদের বৈঠকে এডমিরাল ম্যাকেন প্রেসিডেন্ট মার্কসকে একথা জানিয়েছেন। মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জাহাজগুলি দুই ভাগে ভাগ হয়ে সোমবার ও মঙ্গলবার গোপনে সিঙ্গাপুর অতিক্রম করে।

কূটনৈতিক সূত্র থেকে বলা হয় যে, আটটি জাহাজ এখন বঙ্গোপসাগরে রয়েছে।

বেসরকারি জাহাজই মহল ও এন্টারপ্রাইজ এবং অন্য জাহাজগুলির চলাচলের খবরের সত্যতা সমর্থন করেছেন।

উল্লিখিত সূত্র থেকে আরও জানানো হয়, এন্টারপ্রাইজ এর সঙ্গে রয়েছে আক্রমণক্ষম জাহাজ ‘ত্রিপলি’। হেলিকপ্টারবাহী জাহাজ ‘ত্রিপল’ তে ২৩ টি হেলিকপ্টার আছে। অন্যান্য জাহাজের মধ্যে আছে ডেস্ট্রয়ার বা ডেস্ট্রয়াল রক্ষী জাহাজ ও টেন্ডার জাতীয় জাহাজ। একটি মহল থেকে বলা হয় – উপকুলে অবতরণের উপযোগী জলযানও এই সঙ্গে রয়েছে।

নয়াদিল্লীর ওয়াকিবহাল মহল থেকে বলা হয়েছে – সপ্তম নৌবহরের চলাচলের সংবাদে বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামের কোন হেরফের হবেনা।

বোবা নীতি
ওয়াশিংটন খবরঃ সপ্তম নৌবহরের চলাচলের যে কোন খবর সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র এখনো যথারীতি সম্পূর্ন নীরব নীতি বজায় রেখেছে।

আমেরিকায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রী ঝাঁ আরও বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য সূত্রে সংবাদ পেয়েছেন যে, গত শুক্রবার একটি মার্কিন ‘টাস্ক ফোর্স’ (বিশেষ কাজের জন্য প্রেরিত মার্কিন বাহিনী) ভিয়েতনাম থেকে যাত্রা করেছে। এই বাহিনীটি বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী সৈন্য, অসামরিক ব্যাক্তি এবং ঐ অঞ্চলে এখনো যেসব মার্কিন নাগরিক রয়েছে তাদের সরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারে।

ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, বিদেশীদের ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ভারত সরকার বিদেশী বিমান ব্যাবহারে আপত্তি করেনি।

আমেরিকা বোম্বেটেসুলভ কূটনীতি (গানবোট ডিপ্লিমেসি) অনুসরণ করছে অভিযোগ করে শ্রী ঝাঁ বলেন – এইভাবে জাহাজ পাঠিয়ে দেওয়ায় ভারসাম্যের অভাব এবং মাত্রাজ্ঞ্যানের অভাব দেখা যাচ্ছে,

শ্রী ঝাঁ এই নৌবহরের অগ্রগতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন পূর্ব ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র সচিব শ্রী জোসেফ সিস্কোকে ঐ সংবাদ জানানো হয়। শ্রী সিস্কো সংবাদের সত্যতা অস্বীকার করেন নি।

সংসদে ক্ষোভ

বুধবার নয়াদিল্লীতে সংসদের উভয় কক্ষে সদস্যরা বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের প্রবেশ সম্পর্কে সরকারের কাছ থেকে বিবৃতি দাবি করেন। অবশ্য সে ব্যাপারে কোন বিবৃতি দেন নি।