দ্যা স্টেটসম্যান , ডিসেম্বর ২, ১৯৭১
পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘনীভূত করেছে
আগরতলায় তিনটি সেবর জেট এর হামলাঃ
স্থল কামানের গোলার আঘাতপ্রাপ্ত একটি
আমাদের বিশেষ প্রতিনিধির রিপোর্ট
নয়া দিল্লি, ২রা ডিসেম্বার। — পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও ঘনিভুত করে আজকে পুর্ব সীমান্তে যখন তাদের বাহিনী ভারি গোলাবর্ষণ করে আগরতলায় এবং তারপরে বিমান আক্রমন করে বিমানবন্দরে এবং কাছের বেসামরিক স্থাপনার উপর।
পাকিস্তানিরা ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে আগরতলা শহরে সকাল বেলা। মধ্যাহ্নের পর স্বল্প বিরতি ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায় ১২:৩০ টায় যখন ৩ টি সেবর বিমান আক্রমন চালায় বিমান বন্দরে। সরকারি মুখপাত্র জানমালের ক্ষয় ক্ষতির প্রতিবেদন পেশ করে।
সেবর বিমান গুলি উড়ে যাইয় ভুমি থেকে নিক্ষেপিত প্রবল গোলাবর্ষণ এর মধ্যে দিয়ে। এর মধ্যে একটা স্পষ্টতই আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ধুঁয়ার গতিপথ রেখে যায় এবং সেটা গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশ এর সীমানার দিকে চলে যায়।
পাকিস্তানী বিমান হামলা হয় যখন আরেকটা বিমান হামলা প্রচেস্টা ব্যার্থ হয় বয়রার কাছে যেখানে তারা ৩ টি বিমান হারায় যা নিশ্চিত ভাবেই ছোট মাত্রার সীমান্ত দাঙ্গার চরিত্র হারায় এবং বড় মাত্রার যুদ্ধের
ইঙ্গিত দেয়। যার প্রমান পাওয়া যায় পাকিস্তানি হামলা কার্য্যক্রমে বালুরঘাটে এবং আগরতলার দক্ষিন পশ্চিমে এবং পাঞ্জাব,জম্মু,কাশ্মীর এর পশ্চিম সীমান্তে ।
সরকার আগরতলার এই বিমান হামলা গুরুত্বের সাথে নেয় এবং স্থানীয় কমান্ডাররা নির্দেশিত হয় যথাযথ
আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য । ভারতের পাল্টা আক্রমনের বিস্তারিত যানা যায়নি খবর ছাপাখানায় যাওয়ার আগে পর্যন্ত কিন্তু আজ রাতের প্রাথমিক খবর অনুযায়ী কিছু পাকিস্তানী যুদ্ধ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। সরকারী মুখপাত্রের বরাতে বলা হয় যে কম্যান্ডাররা স্বাধীন সীমান্ত অতিক্রম করার জন্য যদি তারা এটা জরুরী মনে করে এই অঞ্চলের সুরক্ষার প্রয়োজনে ।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরন অনুযায়ী যা স্থানীয় সংবাদপত্রে গৃহীত হয়েছে আগরতলা সংবাদ কর্মীর মাধ্যমে
পাকিস্থানী গোলাবর্ষণ সকালে ছিল বাছবিচারহীন এবং নিরবচ্ছিন্ন । ২ বার গোলা ফাটার বিকট শব্দ পরিস্কার শুনা যায় যখন আগরতলার সাথে ফোনে কথা চলছিলো ।
পাকিস্থানী কামান একসাথে গোলাবর্ষণ করে বালুরঘাট শহরে যাতে ৬ জন বেসামরিক ব্যাক্তি নিহত হয়।
ভারতীয় কামান গোলা ছুঁড়ে পালটা আক্রমনে। একই দিনে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী গুলি ছুঁড়ে ছোট বন্দুক এবং কামান দিয়ে ভারতীয় বালুরঘাটের উত্তর-পশ্চিমে এবং বালুরঘাটের উত্তরে । সীমান্তরক্ষি
জওয়ানরা পাল্টা গুলি করে। একই দিনে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী গুলি ছুঁড়ে স্বয়ংক্রিয় ছোট অস্ত্র এবং কামান দিয়ে হিলির ভারতীয় অবস্থানে।
পশ্চীম সীমান্তে একটি পাকিস্থান টহল বাহিনীর ৪ জন ভারতীয় সীমানার ১৫০ গজের ভিতরে অনুপ্রবেশ করে ফিরোজপুর এর উত্তরে। ভারতীয় টহলবাহিনী অনুপ্রবেশকারীদের দিকে গুলি ছুঁড়ে । এতে সেনাদল পালিয়ে যায় তাদের একজন আহত সেনাকে নিয়ে। মঙ্গলবারে পাকিস্থানীরা গুলি ছুঁড়ে ৩০ বার মাঝারি
মেশিন গান দিয়ে যুদ্ধবিরতি সীমানা পেরিয়ে মেন্ধার দক্ষিন পশ্চিমে । ভাররপক্ষের কনও হতাহত হয়নি।
সোমবারও পাকিস্থানী বাহিনী গুলি ছুঁড়ে হালকা মেশিন গান দিয়ে একই যায়গায় যতে কেউ হতাহত হয়নি।
আগরতলা সংবাদদাতার ভাষ্য অনুযায়ী পাকিস্তানী বিমান কনও ক্ষতি করতে পারেনি আগরতলা বিমান বন্দরের আজকের বিমান হামলায়।
এদিকে পাকিস্থানী বাহিনী ভারি গোলাবর্ষণ করে আগারতলা শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় বিনা উস্কানিতে যা শুরু হয় গতকাল রাত ৮ টায় যা আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত আছে । একটা বড় সংখ্যার ভারি কামান এবং মর্টারের গোলা আঘাত করে কুঞ্জবন এবং শহরের আভায়নগর এলাকায় এবং শহরের বাহিরে ঈন্দরনাগার, জগতপুর উশাবাজার,নারসিঙ্গার এবং ছয়ঘর এলাকায় ।
কমপক্ষে ৫ জন ভারতীয় মারা যায় এবং আরও ৪৫ জন আহত হয় গোলাবর্ষণে। মৃতদের মধ্যে ছিল ৩ বছরের বালক এবং ১৫ বছরের বালিকা।