You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.30 | হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, নভেম্বর ৩০, ১৯৭১, পাক সেনাদের গোলাবর্ষণ বন্ধ করার জন্য সেনাবাহিনীর হিলি, বালুরঘাট সীমান্ত অতিক্রম - সংগ্রামের নোটবুক

হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, নভেম্বর ৩০, ১৯৭১
পাক সেনাদের গোলাবর্ষণ বন্ধ করার জন্য সেনাবাহিনীর হিলি, বালুরঘাট
সীমান্ত অতিক্রম
বার্তা নির্বাহক রিপোর্ট

ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তের ২ মাইল এর মধ্যে প্রবেশ করে সোমবার এবং পাকিস্তানী গোলাবর্ষণ বন্ধ করে দেয়। শনিবার থেকে পাকসেনারা গোলাবর্ষণ করছিল হিলি আর বালুরঘাট এলাকায়।

প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ এর কারনেই সীমান্ত শহর হিলি আর বালুরঘাট শহরে সোমবারে পাক বাহিনীর গোলাবর্ষণ বন্ধ ছিল।

যুদ্ধে ট্যাংক আর গোলন্দাজ বাহিনী ব্যবহারিত হয়, কিন্তু এ পর্যন্ত কোন যুদ্ধ বিমান যুদ্ধে অংশগ্রহন করে নাই। পাকিস্তানীরা ১৪টা ট্যাংক এর বহর ব্যবহার করেছিল যুদ্ধে, কিন্তু তিনটা হাড়ায় শনিবার আর একটা হাড়ায় রবিবার। একটি ভারতীয় ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন এর আঘাতে।

যুদ্ধে কমপক্ষে ১৬০ পাক সেনা হতাহত হয়।সরকারী হিসেব অনুযায়ী বলা হয়েছে যে ভারতীয় পক্ষে মারা যায় ৩৫ জন।

বালুরঘাট এর কাছে পাতিরাম থেকে তরুন গাঙ্গুলি জানাচ্ছেন যে এই ঘটনা শহরের বাসিন্দাদের
সুযোগ করে দেয় জিনিশপত্র সহ তাদের পাক বাহিনী থেকে নিরাপদ দুরত্বে সরে যাবার জন্য।

পুরুষ,মহিলা এবং বাচ্চাদের দেখা যায় সরে যেতে পশ্চিম দিনাজপুর এবং মাইদা জেলার নিরাপদ এলাকাতে যা পাক সেনাদের আয়ত্তের বাহিরে । নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায় শহরের প্রায় শতকরা ২৫ ভাগ মানুষ নিরাপদ দুরত্বে সরে যায়। সরে যেতে ইচ্ছুক মানুষদেরকে যানবাহন সহায়তা দেয়া হয় সরকারী ভাবে, কিন্তু বড়ো পরিসরে মানুষ সরিয়ে নেবার কোন সরকারী পরিকল্পনা ছিল না।

বালুরঘাট এর স্কুল এবং কলেজ বন্ধ রাখা হয় নিরাপত্তার জন্য। হিলিতে বেশ কিছু বসতবাড়ি বুলেট এবং
কামান এর গোলা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সীমান্ত এলাকার গোলাবর্ষণের জন্য।

নয়া দিল্লীর সরকারী মুখপাত্র জানায় যুদ্ধ চলমান শনিবার সকাল থেকে বাংলাদেশ এর সীমানায় হিলি সীমান্ত থেকে ২ মাইল অভ্যন্তরে এবং পশ্চিমবঙ্গের বালূড়ঘাট এলাকায়।

“ সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী” সোমবার সন্ধ্যায় সরকারী লিখিত বিবৃতিতে বলা হয় “পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পালটা হামলা চালায় রবিবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুধ্যে যখন ভারতীয় বাহিনী প্রতীরক্ষামুলক ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হয় শনিবার পাকসেনাদের সাধারন মানুষদের উপর বড় আকারের গোলবর্ষণের ঘটনার পর। যুদ্ধ এখনো চলছে।“

ফেনিতে তীব্র যুদ্ধ

মুখপাত্র জানিয়েছেন যে ভারত স্থল বাহিনীকে বিমান সহায়তা দেয়নি বালুরঘাট যুদ্ধে, “সাধারনত
আমরা স্থল বাহিনীকে বিমান সহায়তা দেই না কিন্তু পাকিস্তান যদি যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করে তবে ভারত ও তাদের যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করবে।“

পাকিস্তান যখন তাদের স্থল বাহিনীকে সহায়তার জন্য যুদ্ধ বিমান ব্যবহার করেছে বয়রা সেক্টরে ভারত ব্যবহার করে তার বিমান শক্তি যা পাকিস্তানের ৩ টি সেবর জেট কে ভুপাতিত করে।

ইতিমধ্যে মুজিবনগরে সংবাদ আসে যে মুক্তিবাহিনী ত্রিমুখী আক্রমন অব্যাহত রেখেছে যশোর সেনাসদরে। এদিকে যদিও তুলনামুলকভাবে সুরক্ষা ছিল, মুক্তিবাহিনী এবং পাকসেনা বিচ্ছিন্ন ভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয় অত্র এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ চ্যানেল নিয়ন্ত্রণ এর জন্য।

তীব্র যুদ্ধের খবর পাওয়া যায় মুক্তিযোদ্ধা আর পাকবাহিনীর মধ্যে ফেনীতে ভারতের ত্রিপুরায় সীমান্ত মুখি শহর বেলনিয়া বরাবর। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় যে পাকিস্তানি সেনা বড় চাপে পরে যায় ফেনী শহর দখল করতে এসে মুক্তিবাহিনীর সাঁড়াশী আক্রমনে ।

প্রসঙ্গ ক্রমে, আগরতলার প্রাদেশিক পুলিশ সদর দপ্তরের এক রিপোর্টে যানা যায় সুন্নার কাছে সীমান্তবর্তী গ্রাম কনারঘাটে পাক বাহিনী কর্তৃক অপহৃত চার ভারতীয় সেনা কে উদ্ধার করে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী।
উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয় পাকবাহিনী এবং সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর মধ্যে এক ঘন্টা ব্যাপি প্রচন্ড গুলি বিনিময়ের পর।

যুদ্ধে ১০ জন পাকিস্তানী সেনা মৃত্যুবরণ করে।

নভেম্বর ২৭ এবং ২৮ তারিখে রাতে, পাকিস্তানী বাহিনী গোলা ছুঁড়ে আমাদের স্থাপনায় পশ্চিম বঙ্গের গঙ্গারাম এবং পাতিরাম এর উত্তরে । বিএসএফ পাল্টা গুলিবর্ষণ করে। আমাদের পক্ষে কোন হতাহত হয়নি। পাকিস্তান পক্ষের হতাহতের সংখ্যা অজানা।

নভেম্বর ২৬ এ, পাকিস্তানী বাহিনী গুলিবর্ষণ করে বিএসএফ টহল বাহিনীর উপর উত্তর-পূর্ব বসিরহাটে।
শেষ খবর পর্যন্ত কোন হতাহতের খবর পাওয়া জায়নি। ত্রিপুরায়, পাকিস্তানী এবং বি এস এফ টহল বাহিনী গুলি বিনিময় করে সনামুরার পশ্ছিমে নভেম্বরের ২৭ তারিখে। কিছু পাকিস্তানী সেনার হতাহতের খবর পাওয়া যায়। ভারতীয় পক্ষে কোন হতাহত হয়নি।

নভেম্বর ২৬ এ, রাধাকিশরপুরের পশ্চিমে গুলি বিনিময় হয়। ভারতীয় পক্ষে কেউ মারা যায়নি। একই দিনে পাকিস্তানী বাহিনী গুলি ছুঁড়ে ছোট অস্ত্র এবং মাঝারি মেশিন গান দিয়ে কামাল্পুরের উত্তর পুর্বে ভারতীয় স্থাপনায়। কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশী পতাকা উত্তোলন করেছে দিনাজপুর জেলার পঞ্চগড় রেল স্টেশনে এবং এম এন এ সুত্রে জানা যায় বাংলাদেশ সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এই এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন
প্রতিষ্ঠার জন্য ।

সিলেট জেলায় মুক্তিবাহিনী দক্ষিন-পশ্চিম জইন্তাপুরের ছোটাখেল স্বাধীন করেছে গতকাল তীব্র যুদ্ধের পর যেখানে “দখলদার” সেনাবাহিনীর অনেক হতাহত হয়। সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী সিলেট শহর থেকে মাত্র ১৯ কিলোমিটার দূরে এক যায়গায় তীব্র যুদ্ধ চলছে।

গতকাল মুক্তিযোদ্ধারা তাহেরপুর থানা পুনর্দখল করে এবং সুচনা ফাঁড়ি ঘিরে রাখে। তারা তাদের চাপ অব্যাহত রাখে কম্পানিগঞ্জ এবং সালুতিকার এলাকায় এবং পাকিস্তানি সৈন্যদের বাধ্য করে সিলেট শহরে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিতে। সিলেট এবং সুনামগঞ্জের মধ্যে সকল যোগাযোগ ইতিপূর্বেই বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল।

ময়মনসিংহ জেলার কমলাপুর ফাঁড়ির চারিদিকে এখন তীব্র যুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশি কমান্ডোরা ইতিমদ্ধেই ফাঁড়ি ঘিরে ফেলেছে এবং “ শত্রুপক্ষের ” শক্তিবৃদ্ধির প্রচেষ্টা বিনষ্ট করে দেয়।

মুক্তিবাহিনী গেরিলারা সরকারি মালিকানার পাটকল পুড়িয়ে দেয় ময়মনসিংহের নান্দিনায়, ইউ পি আই
রিপোর্ট করে ঢাকার সামরিক আইন কতৃপক্ষের বয়ান থেকে।

এই ঘটনা থেকে ১৪,০০০ ইউ এস ডলার মুল্যমানের পাট সম্পদ বিনস্ট হয়। বিগত সপ্তাহে ৩ টি পাট কল পুড়ানো হয়।

মুক্তিযদ্ধারা অবিচলিত অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখে টাঙ্গাইল এলাকায় এবং তাদের দখল আরও মজবুত করে এই জেলার ৪ টি চেক পোস্টে ।

ঢাকা থেকে বিলম্বিত সংবাদ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা কোডালিয়ায় একটি কৌশলগত সেতু উড়িয়ে দেয়,যেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রাস্তা যা ঢাকা এবং টাঙ্গাইল এর মধ্যে একটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্য করে দেয়।