You dont have javascript enabled! Please enable it!

হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড
নভেম্বর ৯, ১৯৭১
আলীর মুক্তির দাবীতে দিল্লীতে ছাত্র মিছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক

নয়াদিল্লী, নভেম্বর ৮. ৮ বছরের মুরাদ ও ৬ বছরের মোর্শেদ, যাদের পিতামাতা ও বোনেরা পাকিস্তান হাইকমিশনে বলপ্রয়োগে বন্দী, তাদের সমর্থনে হাজার হাজার স্কুল ছাত্ররা কমিশনের সামনে জড়ো হয়েছে। তারা দাবী করেছে, বন্দীদেরকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেয়া হোক।

বাচ্চারা পাকিস্তানের অত্যাচারকে নিন্দা করে শুধু প্ল্যাকার্ডই বহন করেনি, তারা মুরাদ ও মোর্শেদকে মিষ্টি খাইয়ে ও ফুলের মালা পরিয়ে কাঁধের ওপর বহন করেছে। তিন ঘণ্টার এই মানব-বন্ধনে তারা মুরাদ ও মোর্শেদের ওপর গোলাপ পাপড়ী বর্ষণ করেছে।

ছাত্রেরা পাকিস্তানী হাইকমিশনার মিস্টার সাজ্জাদ হায়দারের সাথে দেখা করতে চাইলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। দূতাবাসের কোনো প্রতিনিধিও তাদের সাথে কথা বলতে রাজী হয়নি। ছাত্রেরা দূতাবাসের প্রবেশ-পথে একটি স্মারকলিপি সেঁটে দেয়। তাতে দূতাবাসের বাঙালী কর্মচারীদের ওপর দুর্ব্যবহারের প্রতি গভীর বিতৃষ্ণা প্রকাশ করা হয় এবং আলী পরিবারের মুক্তি দাবী করা হয়।

স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের শিশু-কিশোর ও জনগণের মুক্তির লড়াইয়ে দিল্লী ও ভারতের শিশু-কিশোরেরা দৃঢ়ভাবে তাদের সাথে আছে। ইতোমধ্যে মুজিবনগর থেকে ইউনাইটেড নিউজ অফ ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, বাংলাদেশ যুব সমিতির চেয়ারম্যান মিস্টার এ. এইচ. বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ নজরুল ইসলাম পাকিস্তানী হাই কমিশনারকে এই বলে হুঁশিয়ার করে দেন যে তিনি যদি বাংলাদেশী কর্মচারীদেরকে মুক্তি না দেন তবে যেসব বাঙালীরা বাইরে আছেন তাঁরা হাইকমিশন দখল করে তাঁদের সহকর্মীদেরকে মুক্ত করবেন।

তাঁরা এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, একবার ঢুকলে তাঁরা চিরদিনের জন্য হাইকমিশনের দালান দখল করে নেবেন কারণ সেটা – “বাংলাদেশের জনগণের ঘাম ও রক্তে অর্জিত টাকা দিয়ে বানানো হয়েছে”। আমাদের বিশেষ সংবাদদাতা জানাচ্ছেন এখানকার বাংলাদেশ মিশনও এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। বাংলাদেশ মিশনের প্রেস এটাচি মিস্টার আমজাদুল হক বলেন, মিস্টার আলীর জীবন বাঁচানোর জন্য রেডক্রস সোসাইটি লীগ ও জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেলের কাছে তাঁদের পাঠানো আবেদনের প্রেক্ষিতে কি ঘটে সেই অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।

মিস্টার আলীকে মুক্তি না দেয়া হলে দিল্লীর পাকিস্তান হাইকমিশনে মার্চ করার সম্ভাবনার ব্যাপারে মতামত চাইলে তিনি বলেন:- “সে সম্ভাবনা আমরা উড়িয়ে দিতে পারিনা। যত যাই হোক, আমাদের এক ভাই, তার স্ত্রী ও কন্যাকে যখন পাকিস্তানীরা অবৈধভাবে বন্দী করে অত্যাচার করছে, তখন আমরা জনগণকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো? অপরাধীরা পার পাবেনা। দাঁতের বদলে দাঁত, নখের বদলে নখ আমাদের দৃঢ় নীতি।”

এ পর্যন্ত মিস্টার আলীর কোনো খবর পাওয়া যায়নি যাঁকে পাকিস্তানী হাইকমিশনের কর্মচারীরা নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করেছে। হাইকমিশনের নিযুক্ত ডক্টর মিসেস সুন্দেরসন গুজরাল আজ জানিয়েছেন তিনি মিস্টার আলীর ব্যাপারে কিছুই জানেন না, তিনি তাঁকে দেখেনও নি।