You dont have javascript enabled! Please enable it!

হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড
০৫ নভেম্বর ১৯৭১
নিক্সনের সাথে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ন আলোচনা শুরু করেছেন

ওয়াশিংটন নভেম্বর ৪। ইউনাইটেড নিউজ অফ ইন্ডিয়া এবং প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যা সত্বেও ইসলামাবাদের সেনা-সরকারের প্রতি আমেরিকার সমর্থনের কারনে বিগত সময়ে ভারত-আমেরিকার মেঘাচ্ছন্ন সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে মিসেস গান্ধী আজ প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সাথে ভারত-আমেরিকার পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন। হোয়াইট হাউসে স্বাগত: অনুষ্ঠানে দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সাধারণ আদর্শ আবারো নিশ্চিত করে এই নেতা-নেত্রী তাদের গুরুত্বপূর্ন আলোচনা শুরু করেন।

মিসেস গান্ধী বলেন তিনি এসেছিলেন উপমহাদেশের বর্তমান সংকটকে গভীরতর ভাবে বুঝে নিতে; ইন্দো-রাশিয়া চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে মি. নিক্সন মনে করেন না যে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বিশেষ কোন চুক্তি বা অঙ্গীকার প্রয়োজন আছে। আলাপ শুরু হবার প্রথম দিকে মিসেস.গান্ধী ও মি. নিক্সন কিছুক্ষন একাই ছিলেন, পরে তাঁদের সাথে আমেরিকা ও ভারতের কিছু অফিসার যোগ দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মি.নিক্সনের বিশেষ উপদেষ্টা ডক্টর হেনরি কিসিঞ্জার, ভারতের রাষ্ট্রদুত মি. এল কে ঝা, পররাস্ট্র সচিব মি. টি. এন. কাউল এবং প্রধান মন্ত্রীর সচিব মি. পি. এন. হাকসার।

জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন মিসেস গান্ধীকে বলেছেন পাকিস্তানকে আমেরিকার অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে ভারতকে অযথাই উদ্বিগ্ন হতে হবে না কারন সেগুলোর পরিমাণ নিতান্তই কম এবং সেই সরবরাহ মোটামুটি শেষ হয়ে এসেছে। সরকার ইয়াহিয়ার উপরে যতটা সম্ভব চাপ প্রয়োগ করে চলেছেন প্রথমতঃ শেখ মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড না দিতে এবং দ্বিতিয়তঃ রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ নেতার সাথে কথা বলতে। জানা গেছে তিনি এটাও বলেছেন, পাকিস্তান ও ভারতের উচিত হবে সীমান্তের দুই ধারে জাতিসংঘের কোন ধরনের উপস্থিতি মেনে নেয়া। এতে অন্যান্য দেশের সামনে এ ধরনের পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের কার্যকারিতা শক্তিশালী হবারও একটা উদাহরণ তৈরী হবে। নিক্সন বিশেষ করে বলেন, কোন রকমেই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হওয়া ঠিক হবে না। জানা গেছে তিনি মিসেস. গান্ধীকে এটাও বলেছেন যে, তাঁর সরকার পাকিস্তানকে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ দেবে, ভারতকেও রাজী হতে হবে সীমান্ত থেকে উভয় পক্ষের সৈন্য সরিয়ে নিতে যাতে উদ্বেগ কমে যায়।

পাকিস্তানকে আমেরিকার অস্ত্র সরবরাহ ও তা দিয়ে বাঙ্গালীর উপরে ত্রাস ও গণহত্যার ব্যাপারে মিসেস গান্ধী ভারতের উদ্বেগ ব্যাখ্যা করেন। মনে করা হচ্ছে তিনি এটাও বলেছেন আমেরিকার উচিত শেখ মুজিবের মুক্তি ও তার সাথে সংলাপের জন্য পাকিস্তানের উপরে চাপ প্রয়োগ করা। আমেরিকার উচিত হবে এটা বুঝতে পারা যে, পূর্ব বাংলায় যা ঘটছে তা পাকিস্তান-ভারতের সমস্যা নয় বরং পূর্ব পাকিস্তান ও ইসলামাবাদের মধ্যে বিরোধ। কাজেই তাদের মধ্যে সমঝোতা হতে হবে যদি উদ্বাস্তুদের নিরাপদে ফিরে যেতে হয়।

মিসেস গান্ধী পরিষ্কার করে নিক্সনকে বলেন যে ভারত কখনোই পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ চায়নি। সেই সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধংদেহী ভাবভঙ্গি ও সামরিক শাসকদের উস্কানিমূলক বক্তব্যকেও ভারত উপেক্ষা করতে পারে না। তিনি মি. নিক্সনকে মনে করিয়ে দেন, পাকিস্তান এর মধ্যে ধোঁকাবাজী করে ভারতের উপর তিন বার আগ্রাসন করেছে। যতদিন উত্তেজনা বিরাজ করবে ততদিন ভারত তার সৈন্য সরিয়ে নিতে পারে না। জানা গেছে তিনি মি. নিক্সনের কাছে জানতে চেয়েছেন তাঁর আসন্ন চীন-ভ্রমণ থেকে কি অর্জন করতে চান।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!