You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.04 | টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ০৪ নভেম্বর ১৯৭১, পূর্ব বাংলার ছেলেরা মানব বন্ধন করেছে - সংগ্রামের নোটবুক

টাইমস অফ ইন্ডিয়া
০৪ নভেম্বর ১৯৭১
পূর্ব বাংলার ছেলেরা মানব বন্ধন করেছে
নয়াদিল্লী – নভেম্বর ৩
নিজস্ব প্রতিনিধি

ভারতে পাকিস্তান গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মি. আব্দুল গনির ব্যাক্তিগত সহকারী মি. হোসেন আলীর দুই ছেলে আট বছরের মুরাদ ও ছয় বছরের মোর্শেদ পূর্ব বাংলার অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সাথে পাকিস্তান হাইকমিশনের ফটকের সামনে মানব বন্ধন করে হাইকমিশনে বন্দী তাদের পিতা মাতার মুক্তি দাবী করেছে। গতকাল মি. হোসেন আলী বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন এবং হাইকমিশনের কর্মচারীরা তাকে প্রহার করে; তিনি এখনো অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন বলে জানা গেছে। ছোট্ট মোর্শেদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলো – “আমাদের পিতা ও বোনকে মুক্তি দাও”। গতকাল যেসব কর্মচারী বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছেন তাঁদেরকে আজ হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান আর্মি উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার গুলাম হাসান খান যখন সে সেখানে মুরাদ ও মোর্শেদের সাথে কথা বলতে এসেছিল। ব্রিগেডিয়ার গাড়ী চালিয়ে প্রধান ফটকের কাছে এসেছিল হাইকমিশনের পূর্বের কর্মচারীদের সাথে কথা বলতে। জানা গেছে, সে জিজ্ঞেস করেছিল- কমিশনের ফটকের বাইরে কি করছেন যখন মাত্র একদিন আগেই তাঁরা পাকিস্তানে যাবে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

পূর্বের কর্মচারীরা ব্রিগেডিয়ারকে বলেছেন তাঁরা তার সাথে কথা বলতে চান না; সে যেন নিজের কাজে ফিরে যায়। এর মধ্যে হাই কমিশনের আরো চারজন কর্মচারী ফটকের কাছে গিয়ে তাকে সাহায্য করার জন্য তার সাথে যোগ দেয়। পুলিশ অফিসারেরা তাদেরকে কোন ঘটনা না ঘটাতে এবং হাইকমিশনের ভেতরে থাকতে অনুরোধ
করলে তারা পুলিশের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। যখন তারা পুলিশকে গালাগালি শুরু করে তখন তাদেরকে ফিরে যেতে বলা হয়। জানা গেছে, ব্রিগেডিয়ার হাসান বাঙ্গালীদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছেন যে তাঁরা যদি চলে না যান তাহলে “আমি তোমাদেরকে গুলি করে ফেলে দেবো – আমি একজন পাঠান”। এই ব্রিগেডিয়ার তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মি. মুজিবুর রহমানকে ক্রস-একজামিন করেছিল।

বালিকাকে টানা-হ্যাঁচড়া
মি. হোসেন আলীর স্ত্রী ও তিন কন্যা হাই কমিশনের একটি কক্ষে বন্দী আছেন। তাঁর দুই ছেলে গতকাল হাই কমিশনের কিছু বাঙ্গালী কর্মচারিদের সাথে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। বাঙ্গালীরা আশংকা করছেন যে কমিশনের ভেতরে পাকিস্তানী গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা হোসেন আলীকে খুন করতে পারে।

তাঁরা বলেছেন গতকাল মি. হোসেনের ১৫ বছরের কন্যা মায়া পালাবার চেষ্টা করলে হাইকমিশনের পশ্চিম পাকিস্তানী অফিসার মি. বাট তার চুল ধরে টেনে নিয়ে যায়। নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ মিশনের মুখপাত্র বলেছেন, মি. হোসেন আলী ও তার পরিবারকে মুক্তি দেবার যে আলটিমেটাম পাকিস্তানী হাইকমিশনার মি. সাজিদ হায়দারকে দেয়া হয়েছিল তার মেয়াদ আগামিকাল বেলা ১২টায় শেষ হবে। তার আগে যদি তিনি মুক্তি না পান তাহলে সমুচিত ব্যবস্থা নেয়া হবে।