You dont have javascript enabled! Please enable it!

হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, অক্টোবর মাস, ১৯৭১
সোভিয়েত মনোভাবে মুজিব নগরে আশার সঞ্চার

মুজিবনগর, ৪ঠা অক্টোবর। মস্কোতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সোভিয়েত নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনায় বাংলাদেশ প্রশ্নে সোভিয়েত মনোভাব এখানকার সরকার ও রাজনৈতিক মহল উভয় ক্ষেত্রেই এক সতর্ক আশার সঞ্চার করেছে।

এই আশার ভিত্তি বলে মনে হচ্ছে আলোচনা শেষে প্রকাশিত ইন্দো-সোভিয়েত যুক্ত বিবৃতি এবং এ বিষয়ে নয়া দিল্লীতে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব মিঃ টি. এন. কৌল এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মিঃ এম. আলমের কথোপকথনের পর তৈরী এক পরিপত্রকে।

বাংলাদেশের সরকার নিশ্চিত যে ইন্দো-সোভিয়েত যুক্ত বিবৃতি ক্রেমলিনে বাংলাদেশ বিষয়ে গভীর উপলব্ধিরই প্রতিফলন।

বাংলাদেশের সরকারের মতে সোভিয়েত সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক মীমাংসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে “পূর্ব বঙ্গের মানুষের আকাঙ্ক্ষা, অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং আইনানুগ স্বার্থ” বিবেচনায় নিয়ে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অপরিহার্য শর্ত হিসেবে স্বীকার করে নেয়ার আরো কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশের সরকার এটা পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া আর অন্য কোন সমাধান জনগণ মেনে নেবে না। অতএব এ থেকে বোঝা যায় যে রাজনৈতিক মীমাংসার জন্য ইন্দো-সোভিয়েত বিবৃতিতে বর্নিত তিনটি মৌলিক নীতি অবধারিতভাবে জনগণের অপরিহার্য দাবিকেই নিশ্চিত করে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই পরিস্কার। বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে যতক্ষণ পর্যন্ত না বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ক্ষান্ত হবে না। এবং এই সিদ্ধান্তটি বদলাবে না। তাই এই বিষয়ের রাজনৈতিক মীমাংসার ব্যপারে জল্পনা-কল্পনা করার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা, গত শনিবার এখানে এক বৈঠকে মিলিত হন মস্কোতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং সোভিয়েত নেতৃবৃন্দের মধ্যকার আলোচনা মুক্তিযুদ্ধের উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে তা বিবেচনা করতে, এই উপসংহারে উপনীত হন যে “সম্মান ও মর্যাদার সাথে শরণার্থীদের নিজ নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার” প্রশ্নে পর্যাপ্ত জোর দেয়া হয়েছে।

তবে মন্ত্রিসভা মনে করে যে শুধুমাত্র বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত হবার পরই শরণার্থীদেরকে ফিরে যাবার জন্য উৎসাহিত করা যেতে পারে।

মন্ত্রিসভার আলোচনা শেষে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অবশ্য পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে যে কূটনৈতিক কার্যক্রমের ফলাফল যাই হোক না কেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন প্রকার অবহেলা করা হবে না। “পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনই আমাদের লক্ষ্য” বিবৃতিতে বলা হয়।

এই প্রসঙ্গে, এই বিবৃতিতে তুলে ধরা হয় যে বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় না এমন কোন মীমাংসার প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকার এমনকি বিবেচনা করতেও প্রস্তুত নয়। যে দেশ এবং যে সরকার মীমাংসার জন্য হয়তো বিকল্প প্রস্তাব দেয়ার চিন্তাভাবনা করছিল তাদেরকে বিরত রাখার জন্য এই বিবৃতিতে এই বিষয়টি বিশেষভাবে সবার দৃষ্টিগোচর করা হয়।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!