আনন্দবাজার পত্রিকা
১০ আগস্ট, ১৯৭১
ভারত- সোভিয়েট যুক্ত বিবৃতি
বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে গুরুত্ব আরোপ
(দিল্লী অফিস)
নয়াদিল্লী, ১১ই আগস্ট-ভারত ও সোভিয়েট ইউনিয়ন আজ এক যুক্ত বিবৃতিতে পূর্ববঙ্গ সমস্যার ‘রাজনৈতিক সমাধানের’ জন্য জরুরী ব্যবস্থাবলম্বনের দাবি জানান। এই সমস্যার কোন ‘সামরিক সমাধান’ হতে পারে না বলে ভারত ও সোভিয়েট সরকারদ্বয় সুস্পষ্ট অভিমত প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সমস্যা সম্পর্কে ভারত ও সোভিয়েট ইউনিয়নের মতামত প্রায় অনুরূপ বলে সরকার সূত্রে প্রকাশ। সদ্য সম্পাদিত চুক্তির নবম অনুচ্ছেদে উপমহাদেশে যুদ্ধ আশঙ্কা আলোচনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে বিবেচনা করা হয়।
শরণার্থীরা যাতে নিরাপদে তাঁদের ঘরবাড়ীতে ফিরে যেতে পারেন সেরকম অবস্থা সৃষ্টির জন্য দাবি জানিয়ে যুক্ত-বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ‘একমাত্র ঐ অবস্থায় পাকিস্তানের সমগ্র জনগণের স্বার্থ এবং ঐ এলাকায় শান্তি রক্ষিত হতে পারে। একমাত্র রাজনৈতিক সমাধানই পাকিস্তানের সমগ্র জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং তা না হলে শুধু পূর্ববঙ্গের নয়, সমগ্র পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ বিপদাপন্ন হতে পারে।
মতানৈক্য?
যুক্ত-বিবৃতিতে পূর্ববঙ্গ অথবা বাংলাদেশের পরিবর্তে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কোন ধরনের রাজনৈতিক সমাধান হবে সে সম্পর্কে যুক্ত-বিবৃতিতে কোন ব্যাখ্যা করা হয়নি। বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক সমাধান চাপিয়ে দেবার কোন প্রশ্নই আসে না বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন ধরনের রাজনৈতিক সমাধান বাঞ্ছনীয় সে সম্পর্কে ভারত ও সোভিয়েট ইউনিয়নের মতামত ঠিক অনুরূপ নয় বলে প্রকাশ। পাকিস্তান একা থাকবে না পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পৃথক হয়ে যাবে এই প্রশ্নে মতানৈক্য থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত সরকার যে নীতি ঘোষনা করেছেন তা থেকে সরকার বিচ্যুত হননি বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
রাজনৈতিক সমাধান চাপিয়ে দেওয়া হবে না এবং তা বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হতে হবে এই মূল প্রশ্নে ভারত ও সোভিইয়েট সরকারদ্বয় সহমত পোষণ করেন বলে প্রকাশ।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার স্মরণ সিং এবং ভারত সরকারের আমন্ত্রণে আগত সোভিয়েট পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ গ্রোমিকোর কয়েক দফা আলোচনা শেষে এই যুক্ত বিবৃতি প্রচারিত হয়।
বাংলাদেশ সম্পর্কে বিবৃতির ব্যাখ্যা
যুক্ত-বিবৃতিতে পাকিস্তানের ‘সমগ্র জনগণের’ কথা বলা হলেও বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত সরকার পিছিয়ে যাননি বলে সরকারী মহল সূত্রে প্রকাশ। বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে পাকিস্তানকে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে উপনীত হতে হবে এ রকম কোন উল্লেখ না থাকায় অর্থ এই নয় যে, ভারত ও সোভিয়েট ইউনিয়ন পূর্ববঙ্গের ওপর কোন সমাধান চাপিয়ে দেবার পক্ষপাতী। পূর্ববঙ্গের বর্তমান অবস্থার কারণ বিশ্লেষণে ভারত ও সোভিয়েট ইউনিয়নের মতামত প্রায় অনুরূপ বলে সরকারী মহল মন্তব্য করেছেন।
পূর্ববঙ্গের জনগণের পক্ষে গ্রহণযোগ্য সমাধানেই ভারত রাজী হবেন। বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার আলোচনা করুন সেটাই ঐ এলাকার জনগণের দাবি। সমাধান হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ হোক অথবা অন্য কিছু হোক- বাংলাদেশের জনগণের গ্রহণযোগ্য সমাধানেই ভারত রাজী হবে।
মার্কিন আঁতাত সম্পর্কে নীরবতা
যুক্ত বিবৃতিতে কোন স্থানে চীন, মার্কিন-চীন আঁতাতের উদ্যোগ অথবা পাকিস্তান সম্পর্কে কোন কথা বলা হয়নি। তবে সীমান্ত বিরোধসহ সকল আন্তর্জাতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলা হয়েছে। বলপ্রয়োগ অথবা বলপ্রয়োগের হুমকিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।
শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতার ভারত-সোভিয়েট চুক্তিকে উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ঘটনা বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়েছে। এশিয়া তথা বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার সংগ্রামকে জোরদার করাই ভারত-সোভিয়েট শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতার চুক্তির লক্ষ্য বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়েছে। এশিয়া তথা বিশ্বে শান্তিরক্ষায় যাঁরা আগ্রহী এই চুক্তি তাঁদের সমর্থন লাভ করবে বলে বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
নয়াদিল্লীতে সোভিয়েট পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ গ্রোমিকো রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি, ভি, গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী শ্রী ফখরুদ্দিন আলি আহমেদ, অর্থমন্ত্রী শ্রী ওয়াই বি চ্যাবন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শ্রী জগজীবন রামের সঙ্গেওও আলোচলা করেন।