You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.07 | যুগান্তর, ৭ আগস্ট, ১৯৭১, কলকাতায় বাংলাদেশের প্রথম ফুটবল খেলা - সংগ্রামের নোটবুক

যুগান্তর
৭ আগস্ট, ১৯৭১
কলকাতায় বাংলাদেশের প্রথম ফুটবল খেলা
(স্টাফ রিপোর্টার)
শ্রীগোষ্ঠ পালের একাদশ ৪ : বাংলাদেশ ২

মোহনবাগানের খেলোয়াড় নিয়ে গড়া শ্রীগোষ্ঠ পালের একাদশ ৪-২ গোল বাংলাদেশের টিমকে হারিয়ে দেওয়া এমন কিছু নয়, এক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাদল-আপরাহ্নে দুই বাংলার খেলোয়াড় ও হাজার হাজার দর্শকের প্রীতি শুভেচ্ছা বিনিময়ই কলকাতা ময়দানের এক স্মরণীয় ঘটনা। ঘেরামাঠের কর্মীরাও এদিন কোন পারিশ্রমিক নেননি।

প্রদর্শনী ফুটবলে কোন দল ভাল খেলল, কোন দল খেলল না; কে গোল করল, কে গোল করল না; এ সব আলোচনা হয়নি। পরিমল-চুনী জীবনে সর্বপ্রথম এক টিমে খেলছে, এই বয়সে চুনী কি রকম খেলছে, বাংলাদেশের ১০ নম্বর খেলোয়াড় তুর্যর ‘ফিটনেস’, ওদের গোলরক্ষকের বল ধরার কায়দার কথাই সবার মুখে মুখে। ফুটবল ছেড়ে দিবে আবার ফুটবল মাঠে এসে চুনী যে বল কনট্রোল, মাপা পাস, ড্রিবলিং দেখিয়ে গেল তা এখানকার খেলোয়াড়দের কাছ থেকে লীগের খেলায় খুব কম দেখতে পাই। বুটের ডগা ও সাইড দিয়ে ছোট্ট জায়গায় বল ধরে দু’তিন জনকে কাটানো এখনও চুনীর পক্ষে অসম্ভব নয়। বলে, বলে চুনী পায়ের কাজ দেখিয়েছে, ছোট জায়গায় চার পাঁচজনকে সহজেই ড্রিবল করে নিজের খেলোয়াড়দের মাপা ‘প্রু’ দিয়েছে। এখনকার ফুটবলে এসব লুপ্তপ্রায়। পাশে প্রণব, সুকু, পরিমলও খেলেছে, তার মধ্যে সবাই দেখেছে একটি উজ্জ্বল তারকা চুনী গোস্বামীকে। মনে হয়নি সে খেলা থেকে অবসর নিয়েছে।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে তুর্য হাজার, যে প্রথম গোল করে নিজের দলকে এগিয়ে দিয়েছিল, তার ‘ফিটনেস’ ও খেলার ধারা উন্নত ধরনের। কিন্তু সতীর্থদের কাছ থেকে সে সাহায্য পায়নি। গোলরক্ষক অনিরুদ্ধ দৃঢ়তা দেখিয়েছে। ৪ টি গোল হলেও কোনটিরও জন্য তাকে দায়ী করা যায় না।

কাদাভরা মাঠে খেলা উঁচু দরের না হলেও প্রাণহীন হয়নি। প্রায় অনুশিলন বিহীন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের কাছে মাঠের অবস্থা সাবলীল ক্রীড়াধারার অন্তরায় ছিল। অনুশীলন করলে এই দল আরো অনেক ভাল খেলবে।

১৩ মিনিটে তসলিমের ব্যাক সেনটারে তুর্য হেড করলে গোলরক্ষক বলাই দে’র হাতে লেগে বলটি গোললাইন ‘ক্রস’ করে ১-০। ২৫ মিনিটে গোষ্ঠ পালের দল গোল শোধ করে। চুনীর পাস থেকে প্রণব ডান পায়ের কমজোরী নিচু শটে গোলরক্ষককে পরাজিত করেন ১-১। বিরতির এক মিনিট আগে চুনীর পাস থেকে সুকল্যাণ গোল করে গোষ্ঠ পালের দলকে এগিয়ে দেন ২-১।

৫৫ মিনিট প্রণব বাঁ পায়ের বিদ্যুৎ গতির শটে গোল করে সকলের চোখ ধাঁধিয়ে দেন ৩-১। ৬২ মিনিটে সুকু পালটা জবাব দেয়। চুনীকে পাস করলে চুনী প্লেসিং-এ গোল করে ৪-১। ৬৬ মিনিটে বাংলাদেশের বদলি খেলোয়াড় নৌশের একটি গোল শোধ করে ৪-২।

শ্রীগোষ্ঠ পালের একাদশ : বলাই, কাজল, কল্যাণ, নিমাই, ভবানী : প্রবীর, প্রিয়লাল: সুকল্যাণ, পরিমল, চুনী, প্রণব।
বাংলাদেশ : অনিরুদ্ধ, আইনুল, জাকির, পিনটো, ইমান, খোকন, কাইকোবাদ প্রতাপ, বিমল, সাগর, এনায়েৎ, সুভাষ, তুর্য হাজরা, তসলিম, নৌশের ও আমিনুল।
রেফারী : শ্রী সুধীন চ্যাটার্জি।