স্টেটসম্যান, জুলাই ৮, ১৯৭১
পাকিস্তানে মার্কিন অস্ত্র সাহায্য বন্ধের জন্য ভারতের দাবি
আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি
নয়া দিল্লি, জুলাই ৭ – প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বিশেষ দূত ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার কে ভারতীয় নেতারা জানা মার্কিন সরকারের পাকিস্তানে অস্ত্র ক্রমাগত সরবরাহে উপ-মহাদেশে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে ।
প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয়েই জোরালো ভাবে জানান যে তারা এটা মেনে নেবেন না। আমেরিকা ব্যাখ্যা দিয়েছিল যে তারা শুধুমাত্র অপ্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং তা শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক বন্ধনের কারণে। তারা বলেন যে এই কথা সত্য নয়।
ড কিসিঞ্জার কে সামরিক অর্থের বাইরে থেকেই এর প্রভাব সহজ ভাষায় তুলে ধরা হয়। কিসিঞ্জার স্পষ্টত বলতে চেয়েছেন এটা শুধুমাত্র প্রান্তিক-রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু নয়।
জনাব শরণ সিং পাকিস্তানে “অব্যাহত এবং ক্রমাগত” অস্ত্র সাহায্যের প্রতিকূল প্রভাব সম্পর্কে ড কিসিঞ্জারের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। তিনি বলে তথাকথিত অপ্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়েও চরম মারাত্মক অস্ত্রের ইঞ্জিন সক্রিয় করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন পাকিস্তানে অস্ত্র সাহায্যের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন এবং উপমহাদেশের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মুখে পড়বে। ১৯৫৪এবং ১৯৬৫ সালের মধ্যে পাকিস্তানে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র সাহায্য আসে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিসিঞ্জারকে বলা হয় ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারটি দেখছে এটা আইনসিদ্ধ নয়। এর সাথে সাড়ে সাত মিলিয়ন মানুষের মানবাধিকার জড়িত। এবং সেটা বন্ধ করার জন্য পাকিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা দরকার।
আমেরিকান সাহায্যের কোন সুনির্দিষ্ট কারণ নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কিসিঞ্জারকে আরও বলেন ২৯ জুন জেনারেল ইয়াহিয়ার ভাষণে যে রূপরেখা বলা হয় তা নেতিবাচক ছিল এবং তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পক্ষে বাস্তবসম্মত ছিলনা। প্রকৃতপক্ষে, পূর্ববাংলার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নেতারা আমেরিকা সহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে দাবি করেন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের যেন সব ধরনের সামরিক ও রাজনৈতিক এইড বন্ধ করা হয়। এমন পরিস্থিতি তৈরি করা উচিৎ যাতে এই ৭ মিলিয়ন উদ্বাস্তু নিরাপদ মনে করে ও সম্মানজনক ভাবে ফিরে আসে – অন্যথায় পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রেসিডেন্সিয়াল এইড কে ভারত জানায় দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ভারত টিকতে পারবেনা। এবং এই পরিস্থিতিতে ভারত অনির্দিষ্টকাল চুপ করেও বসে থাকবেনা। এটা আন্তর্জাতিক মহলের দায়িত্ব যে তারা পাকিস্তানকে বাধ্য করবে একটি সঠিক রাজনৈতিক সমাধান করার ব্যাপারে।
কিসিঞ্জার সাহেবের সাথে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জনাব কেনেথ বি কিটিং। তারা একটি রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু তারা এটি সমাধানকল্পে কোন সুনর্দিস্ট পদক্ষেপ দেন নাই। প্রকৃতপক্ষে ডঃ কিসিঞ্জার কোন ধরনের নিশ্চয়তা দেন নাই। তিনি শুধু বললেন তিনি ভারতের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দেবেন ।
ওয়াকিবহাল মহল আশাবাদী যে কিসিঞ্জার ভারতীয় অবস্থানের ব্যাপারে ধারণা পেয়েছেন। এটা সুপরিচিত যে তিনি কোন প্রস্তাবই আসলে নেন নাই তিনি শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট নিক্সনের একটি ব্যাক্তিগত চিঠি মিসেস গান্ধির কাছে দেন। সম্প্রচারে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের রূপরেখা সঠিক পথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। এটাই ছিল তার ফিরিয়ে দেবার ব্যাপারে উদাসীনতার কারণ।