দ্যা স্টেটসম্যান, ৪ জুলাই, ১৯৭১
পাকিস্তানী প্রচারণার বিরুদ্ধে মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি হুশিয়ারি
আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি
নয়াদিল্লি, ৩ জুলাই- বাংলাদেশ সরকারের একজন মুখপাত্র আজ মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানি প্রচারণা থেকে ভুল বোঝা যাবে না। তিনি বলেন পাকিস্তানী সৈনিকদের দাঁড়া মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণ করা কি ইসলামিক? মুসলিম ডাক্তার ও বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা কি ইসলামিক? মুসলিম গ্রামবাসীদের সম্পত্তি পুড়িয়ে ফেলা এবং মুসলমান নারী ও শিশুকে গণহত্যা কি ইসলামিক?
তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলির এই প্রশ্নগুলো নিজেদেরকে করা উচিত এবং তারপর শুধুমাত্র বাংলাদেশে দমন চালানো ও সন্ত্রাসের শাসন পরিচালনা করা ইসলামাবাদের সামরিক শাসকদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
এখানে বাংলাদেশ মিশনের মুখপাত্র জনাব আমজাদুল হক একটি প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, তাঁর সরকারের প্রতি মুসলিম দেশগুলোর অবস্থান দুঃখজনক। তিনি এইসব দেশের বর্তমান মনোভাবকে “পাকিস্তানি সামরিক যোদ্ধাদের দ্বারা ইসলামের নামে জঘন্য প্রচারণার” ফল হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি যৌক্তিক ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল এবং শুধুমাত্র ইসলামের ভিত্তে একতরফাভাবে পাকিস্তানের ব্যাপারে সমঝোতা হতে পারে না। পাকিস্তানিরা দুষ্কর্মের মাধ্যমে একটি মহান ধর্মের নাম ব্যবহার করছে এবং মুসলিম বিশ্বকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে। তারা শ্লোগান উত্থাপন করেছে যে বৃহত্তম ইসলামী দেশটির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে – এসব বলে সামরিক শাসকরা বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্র মুসলিম নাগরিককে জবাই করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহের পুনরাবৃত্তি এই প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বড় শক এবং হতাশা হিসাবে দেখা দিয়েছে। “আমরা মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া উচিত এবং এও নিশ্চিত করতে হবে যে সামরিক শক্তির আরও শিপমেন্ট পাকিস্তানের জন্য পাঠানো হবে না। এতে করে কেবলমাত্র সামরিক নিপীড়ন চিরস্থায়ী হবে এবং হত্যা অভিযানের গতি আরও বেড়ে যাবে।’
জনাব হক বিস্মিত হন যে হিউম্যান রাইটস কমিশনের মত আন্তর্জাতিক সংস্থা কেন বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে না। “যখন বাংলাদেশের ৭৫ মিলিয়ন মানুষ স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিক অধিকার ও শান্তির জন্য যুদ্ধ করছে তখন এইসব আন্তর্জাতিক সংগঠনের অবস্থান কি?”