কালান্তর পত্রিকা
৩ জুলাই, ১৯৭১
মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নিহত সাড়ে তিন হাজার পাক আফিসারের মৃতদেহ
করাচীতে কবরস্থ। দড়ি বেঁধে বাংলাদেশ থেকে জাহাজ বোঝাই মেয়ে চালান :
করাচী প্রত্যাগত প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
কলকাতা, ২ জুলাই-গত ২৫ মার্চ থেকে ২ মাসের ভেতর পাক বাহিনীর সাড়ে তিন হাজার উচ্চপদস্থ কর্মী ও মৃতদেহ ঢাকা থেকে করাচী পেশোয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং সেখানে কবর দেওয়া হয়েছে। খান সৈন্যদের দৃষ্টি এড়িয়ে করাচী থেকে সীমান্ত পার হয়ে আসা প্রত্যেক্ষদর্শী জনৈক পাক বিমান বাহিনীর কর্মী আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান। পাক বিমান বাহিনীর কমিটি আজ কলকাতা এসে পৌছেছেন।
২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত কমীটি নজরবন্দী আবস্থায় ছিলেন। তিনি জানান, ২৬ মার্চ ভোরে বিমান বাহিনীর কর্মীদের শিবিরে এসে খান সৈন্যবাহিনীর অফিসারেরা বাঙালী কর্মীদের আলাদা করে এবং তাঁদের নিরস্ত্র করে দেয়। খান সৈন্যবাহিনী বাঙালি কর্মীদের এমনকি সংরক্ষণ বিভাগের কাজ থেকে এবং মেনটেনেন্স বিভাগের কাজ থেকেও সরিয়ে এনেছে।
এই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বাংলাদেশে খান সৈন্যবাহিনীর বহু সৈনিক ও অফিসার যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মার খেয়েছে, তাঁরা করাচীতে বসেই টের পেয়েছেন।
খান সৈন্য বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মী ও অফিসার যাদের মৃতদেহ করাচী এবং পেশোয়ারে বিমানযোগে বিমানবন্দরে বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। তিনি জানান, করাচীতে ড্রাইডেন সিনেমা হলের পাশে সরকারী কবরস্থানে এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের কবরস্থান ও পেশোয়ারের কবরস্থানে এইসব মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। এই মৃত ব্যক্তিদের নাম করাচীর ‘বি আর অর্ডারে’ লিপিবদ্ধ আছে। প্রত্যক্ষদর্শী এই বিমান বাহিনীর কমীটি আরও জানান যে, বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র করে রাখার পর তাদেরকে নজরবন্দী আবস্থায় দিন কাটাতে হয়েছে। এবং সেই সময় বর্তমান শসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের কত উন্নতি করেছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা যে কত শান্ত তা প্রচার করে প্রদর্শিত সিনেমা এই নজরবন্দী বাঙালিদের দেখতে হয়েছে।
মেয়েদের দড়ি দিয়ে বেঁধে করাচী নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই প্রত্যক্ষদর্শী আরো জানান যে, চট্টগ্রাম বন্দরে এফ এন এস ঢাকা, বাবর এবং এফ এন এস খাইবার নামে যে তিনটি জাহাজ ছিল, সেই জাহাজ তিনটি করাচী ফিরে যাওয়ার পথে বহু বাঙালি মেয়েকে করাচীতে নিয়ে গিয়েছে। তিনি জানান এই সমস্ত মহিলাদের যখন করাচী বন্দরে নামানো হয় তখন এঁদের হাতে পরস্পর দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল এবং প্রত্যেকেরই কোমরেও দড়ি বাঁধা ছিল। এই সমস্ত মহিলাদের এখন বিত্তশালী লোকের ক্রীতদাসী কিংবা রক্ষিতা হিসেবে রাখা হয়েছে।
করাচী থেকে বাংলাদেশে এখন কেউ করাচীতে আসছে না।
এই প্রত্যক্ষদর্শী আরো জানান যে, খান সৈন্যবাহিনীর যে সমস্ত কর্মী করাচীতে ৮০ টাকা বেতন পেতেন তাদের বর্তমানে ইয়াহিয়া চক্র চারশত টাকা বেতন দিয়ে বাংলাদেশে পাঠাতে চায় কিন্তু এতদসত্ত্বেও কেউ বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক নয়। বেলুচীস্তানে ব্যাপক অত্যাচার
এই প্রত্যক্ষদর্শী আরো জানান যে , বেলুচীস্তানে ইয়াহিয়া চক্রের বিরুদ্ধে ব্যপক বিক্ষোভ হচ্ছে। তিনি বলেন খান সৈন্যবাহিনী বিক্ষুব্ধ মানুষকে দমনের জন্য ব্যাপক অত্যাচার চালাচ্ছে। তারা গ্রামে গ্রামে ভ্রম্যমাণ জঙ্গী আদালত বসিয়েছে এবং খান সৈন্য-বিরোধী মানুষের সম্পত্তি কেড়ে নিচ্ছে।
বিমান বাহিনীর এই কমিটি জানান যে, তিনি এখন তাঁর পিতা-মাতার সঙ্গে মিলিত হবেন এরপর মুক্তি যুদ্ধের সৈনিক হিসেবে যোগ দেবেন। তিনি জানান করাচীতে এখনো বিমান বাহিনীর বহু বাঙালি কর্মী নিরস্ত্র এবং নজরবন্দী অবস্থায় আছেন।