You dont have javascript enabled! Please enable it!

কালান্তর পত্রিকা
২৫ জুন ১৯৭১
রাজ্য সভায় ভূপেশ গুপ্তর অভিযোগ
মার্কিন সরকারকে সাফ জবাব দেওয়ার সাহস ভারত সরকারের নেই
পাকিস্তানকে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা

নয়াদিল্লী, ২৪ জন-মার্কিন সমরাস্ত্র বোঝাই দুই পাকিস্তানী জাহাজকে কেন্দ্র করে আজ রাজ্যসভায় এক দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাবে আলোচনাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং অত্যন্ত বেকায়দায় পড়েন।
ইউএনআই জানাচ্ছে, এক সময়ে কামিউনিস্ট সদস্য শ্রী ভুপেশ গুপ্তর সঙ্গে শরণ সিং এর তীব্র কথা কাটাকাটি হয়। শ্রী গুপ্ত অভিযোগ করেন, মার্কিন সরকারকে স্পষ্ট ভাষায় নিন্দা করার সাহস, ইচ্ছা এবং সিদ্ধান্ত এই সরকারের নেই।

দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি দাবী করেন, পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ না করার প্রতিশ্রুতি যে মার্কিন সরকার ভঙ্গ করেছে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য ভারত আমেরিকার তেল এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক স্বার্থ বজেয়াপ্ত করা হোক।

শ্রী গুপ্ত বলেন, মার্কিন সরকার এই ভাষাই বোঝে।

শ্রী শরণ সিং সদস্যদের কাছে মার্কিন সরকারের যে অভিমত ভারত সরকার জেনেছে তার এক বিস্তৃত বিবরণ দেন।

দৃষ্টি আকর্ষণীয় প্রস্তাবটি ছিল, ফরোয়ার্ড ব্লক সদস্য চিত্ত বসুর।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং সদস্যদের কাছে এক বিবৃতিতে বলেন যে, দু’টি জাহাজ মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানের পথে রওয়ানা হয়েছে সেই সমরাস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার জন্যে মার্কিন সরাকারের কাছে দাবী করা হয়েছে। এবং সঙ্গে সঙ্গে অতীত চুক্তির দোহাই দিয়ে আর নতুন কোন অস্ত্র সরবারাহ করা হবে না এই প্রতিশ্রুতি চাওয়া হয়েছে। শ্রী সিং এও জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয়ে জরুরী দৃষ্টি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘আমরা ওদের কাছে থেকে জবাবের প্রতীক্ষায় আছি’।

শ্রী সিং সদস্যদের উদ্বেগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ২২ জুন, নিউইয়র্ক টাইমস যে সংবাদ দিয়েছে তা সঠিক। গত ৮ মে এবং সর্বশেষ ১১ জুন ‘সুন্দর বন’ আর ‘পদ্মা’ পাকিস্তানী পতাকা উড়িয়ে নিউইয়র্ক থেকে রওনা হয়েছে এবং তাতে মার্কিন সমরাস্ত্র আছে।

তিনি জানান, ২২ জুন সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে ভারতের রাষ্ট্রদূত মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। নয়াদিল্লীর মার্কিন দূতাবাসেও বিষয়টি জানানো হয়।

শ্রী সিং বলেন, মার্কিন সরকারের বক্তব্য হলো ২৫ মার্চ এর পর পাকিস্তানকে কোন সমরাস্ত্র সরবরাহের অনুমতি বা রপ্তানি লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। ঐ জাহাজের মালগুলি আগের অর্ডার অনুযায়ী সরবরাহ হয়ে থাকতে পারে এবং এতে হয়ত এমন কিছু আছে যার জন্য রপ্তানি লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। জাহাজে ৮টি বিমান থাকার কথা মার্কিন সরকার অস্বীকার করেছে। আর কোন নতুন জাহাজ যাবে কি-না সে সম্পর্কে সরকারের কাছে কোন তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন তবে খোঁজ করে দেখেছেন। মার্কিন স্বররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটরী জানিয়েছেন এতে কিছু সমরাস্ত্র থাকতে পারে। শ্রী সিং এর জবাবে অসন্তষ্ট সদস্যদের কেউ কেউ দাবি করেন ভারতের উচিত মাঝ দরিয়ায় জাহাজ দু’টির পথ আটকানো। জবাবে শ্রী সিং বলেন ঐ কর্মধারা হবে একটি সুচিন্তিত পরিকল্পনার ফলে। সাধারনতঃ সংঘর্ষে লিপ্ত দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ সম্প্রসারণের সময়ে ঐ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অতএব সেকথা চিন্তা করেই এই কাজে হাত দেওয়া উচিত।
অন্য কয়েকজন সদস্য দাবি করেন এই কাজকে ভারত সরকার ‘অবন্ধু জনোচিত শত্রুতামূলক কাজ’ বলে ঘোষণা করুক এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার সরকারের আছে এ কথা জানিয়ে দেওয়া হোক।

জবাবে শ্রী সিং বলেন, সভার সঙ্গে সরকারও উদ্বিগ্ন এবং দৃঢ় ভাবে মনে করে আরও সরবরাহ বন্ধ করা মার্কিন সরকারের কর্তব্য। সেক্ষেত্রে মার্কিন সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা সম্পূর্ণ নাকচ করা হবে এবং বাংলাদেশে ইয়াহিয়া খান যে বর্বতার অপরাধ করেছে তা মার্জনা করা হবে। তাছাড়া ‘অবন্ধু জনোচিত এবং শত্রুতামূলক কাজ’ এই কথাটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্য অর্হত বহন করে।

কমিউনিস্ট নেতা ভূপেশ গুপ্ত অভিযোগ করেন ভারত সরকারের সাহস, সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাব রয়েছে। পালাম বিমান ঘাঁটিতে শরণ সিং-এর মন্তব্য প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করেন যে, নিউইয়র্ক টাইমস-এর সংবাদ ভুল হতে পারে শ্রী সিং-এর এ কথা চিন্তা করার কারণ কি হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ইয়াহিয়া বাহিনীর গণহত্যা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছে এ কথা মার্কিন সরকারকে ভারতের জানিয়ে দেওয়া উচিত।

এছাড়াও শ্রী গুপ্ত দাবি করেন যে, তেল ব্যবসা সহ সমস্ত মার্কিনী ব্যবসায়িক স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই ভাষাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বোঝে, ‘আপনাদের ভাষা’ নয়।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, নিউইয়র্কস্থিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এল কে ঝা ভারতের মনোভাব সঠিকভাবে পাদপ্রদীপের আলোকে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!