You dont have javascript enabled! Please enable it!

কালান্তর পত্রিকা
১৭ জুন ১৯৭১
মহিলা ফেডারেশন ও মহিলা সমিতির উদ্যোগে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বনগাঁও সুবৃহৎ সমাবেশ

বনগাঁ, ১৬ জুন (সংবাদদাতা) – বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ভারতীয় মহিলা ফেডারেশন ও পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির আহবানে বনগাঁর রেল স্কুল ময়দানে গত ১৪ জুন দশ হাজার মানুষের একটি সভা অনুষ্ঠিত হোয়। উল্লেখযোগ্য, বনগাঁয় আশ্রিত বাংলাদেশ শরনার্থিদের একাংশ এই সভায় যোগদান করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রীমতী রেণু চক্রবর্তি, সর্বভারতিয় বিশিষ্ট মহিলা নেত্রীরা ভাষণ দেন। স্থানীয় জননেতা শ্রী অজিত গাঙ্গুলি এম এল এ মহিলা নেত্রীদের স্বাগত জানিয়ে ভাষণ দেন। শ্রী গাঙ্গুলি বলেন, সমস্যা জর্জরিত সীমান্ত শহর বনগাঁ লক্ষাধিক শরনার্থিকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে এবং এগিয়েই থাকবে।

বিশিষ্ট মহিলা নেত্রী শ্রীমতী বিমলা ফারুকি বলেন, জঙ্গিনায়ক ইয়াহিয়া বাংলাদেশের মানুষের উপর নিষ্ঠুরতম সন্ত্রাস চাপিয়ে দিয়েছে। যার ফলে লাখো লাখো মানুষ এ দেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন শুধুমাত্র মানবিক কর্তব্য সম্পাদনের জন্যেই আমরা তাদের আশ্রয় দিচ্ছিনা, তাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামকে সাহায্য করাও আমাদের উদ্যেশ্য, কারণ আমরাও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
তিনি জানান যে, বাংলাদেশ থেকে আগত ভাই বোনদের সাহায্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে জনমত সৃষ্টির জন্য জাতিয় ফেডারেশন ভারতজুড়ে প্রচারাভিযান চালাবার সিদ্ধান্ত করেছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রী মালেকা বেগম এপার বাংলার মানুষের কাছে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেবার জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, অনেক কষ্টে ও দুর্ভোগে আমরা এদেশে আশ্রয় নিয়েছি। অন্য দেশে চিরকাল আমরা থাকব না। আমরা এখানে নিজেদের সংগঠিত করে সংগ্রামে তীব্রতর করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

শ্রীমতী বেগম বলেন, ২৩ বছরেও বাংলার মানুষ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বাদ পায়নি। শেষত তিনি ঘোষণা করেন, জঙ্গিশাহির অত্যাচারে আর নিষ্ঠুরতায় আমাদের চোখের পানি শুকিয়েছে, কিন্ত মনের আগুণ নেভেনি। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে হিন্দু- মুসলমানকে এক হয়ে লড়তে হবে।

জননেত্রি শ্রীমতী অরুণা আসফ আলি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশও এখন বুঝতে পারছে, এটা গৃহযুদ্ধ নয়। ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি, বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার দায়িত্ব শরনার্থিদেরও আছে, আমরা তাদের সাহায্য করব।
পশ্চিম বাংলার জননেত্রি শ্রীমতী গীতা মুখার্জি ইয়াহিয়ার চক্রান্তের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেন তিনি বলেন, ইয়াহিয়া এক বেয়নেট দিয়ে মুক্তিকামী বাঙালি তরুণদের হত্যা করেছে আরেক বেয়নেট দিয়ে হিন্দুদের এবাংলায় তারিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশের সব সম্প্রদায়ের মিলিত সংগ্রাম এই চক্রান্তকে ব্যার্থ করাতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সভাপতি শ্রীমতী রেণু চক্রবর্তি বলেন তিন মাস চেষ্টা করেও ইয়াহিয়া বাংলাদেশে একটা কাঠের পুতুল সরকারকে দাড় করাতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গি চক্রের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে এক হয়ে স্বাধীনতার লড়াই চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য হিন্দু মুসলমান শরনার্থিদেরও হাতিয়ার তুলে নিতে হবে।

সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রী দেবনাথ চক্রবর্তি ও ওপার বাংলার শিল্পীরা।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!