You dont have javascript enabled! Please enable it! কালান্তর পত্রিকা, ৬ জুন, ১৯৭১, রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধানের চার দফা পূর্বশর্ত - সংগ্রামের নোটবুক

কালান্তর পত্রিকা
৬ জুন, ১৯৭১
রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধানের চার দফা পূর্বশর্ত

কলকাতা, ৬ জুন- আজ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্র প্রধান নজরুল ইসলাম চার দফা নূন্যতম পূর্বশর্ত উপস্থাপিত করে জানিয়েছেন, ইয়াহিয়া সরকার ঐ শর্তাবলী মেনে নিলে বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব।

এই শর্তগুলি হলঃ (১) বাংলাদেশ অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবর রহমান এবং কারান্তরালে নির্বাসিত অপরাপর গণপ্রতিনিধিদের বিনাশর্তে মুক্তিদান; (২) অবিলম্বে পাক হানাদের বাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ; (৩) বাংলাদেশের স্বাধীন, গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের স্বীকৃতি; (৪) বাংলাদেশে সামরিক তান্ডবের ফলে লুন্ঠিত সম্পদ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক নিরুপণ করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দান।

আজ “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র” কর্তৃক প্রচারিত সৈয়দ নজরুল ইসলামের দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে ঐ শর্তগুলি তুলে ধরা হয়েছে।

সৈয়দ ইসলাম পুনরায় ঘোষনা করেন, যদি কেউ রাজনৈতিক সমাধান বলতে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের পুনর্জীবনের কথা মনে করেন তাহলে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করেন। “লাখো শহীদের রক্তে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান মরে গেছে, তাকে আর বাঁচানো যাবে না। সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী কোন গোঁজামিলের সমস্যা সমাধান মেনে নেবে না।”

সাম্প্রদায়ীকতা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না

তিনি বাংলাদেশের জনগনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “যে অস্ত্রকে সম্বল করে পশ্চিমা শাসকরা পাওনাদের ২৩ বছর ধরে শোষণ করেছে, সেই সাম্প্রদায়িকতার অস্ত্র তারা আবার শানাচ্ছে।”

তিনি দৃপ্তকন্ঠে ঘোষণা করেন, “বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।”

তিনি জানান ২৩ বছর ধরে আমরা বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান-খৃষ্টান-বৌদ্ধ এক সঙ্গে শোষিত হয়েছি আবার এখন একসঙ্গে লড়ায় করছি। “জঙ্গীশাহী মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ধ্বংস করেছে, খুন করেছে ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেবকে, ডাঃ ফজলুর রহমানকে, ক্যাথলিক ফাদার তিনজনকে, বৌদ্ধ ভুক্ষুদের।
‘একশ্রেণীর ভাড়াটিয়া দালাল’ বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে তার উল্লেখ করে তিনি দৃঢ় ভাবে জানান, “কোন দুস্কৃতকারী যদি মানুষে মানুষে বিভেদ ও শান্তিপ্রিয় জনগণের প্রাণ বিপন্ন করে তাহলে তখনই খবর দেবেন- আমাদের মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন, ঐ সকল দুস্কৃতকারীদের দেখামাত্র কঠোর সাজা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

ভারত ও ব্রহ্মদেশ সরকারকে অভিনন্দন
বাংলাদেশের ৪০ লক্ষ শরণার্থীকে ভারতে এবং ৫০ হাজার শরনার্থীকে ব্রহ্মদেশে আশ্রয়দানের জন্য তিন ভারতের “জনগণ, রাজনৈতিক জনগণ ও সরকারকে” এবং ব্রহ্মদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের প্রতি ঐকান্তিক সমবেদনা জানিয়ে বলেন, হানাদারদের হটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ সরকার সসম্মানে দেশত্যাগী বাস্তুহারাদের ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। “আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আপনাদের বাড়ি-ঘর সম্পত্তি ফিরে পাবেন।”