You dont have javascript enabled! Please enable it! 1970 | ৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিদ্বন্দ্বীর মন্তব্য ও ফলাফল - সংগ্রামের নোটবুক

বিবিতালাক ফতোয়া, পাঠ্যপুস্তকে স্লো পয়জনিং আর বেলোয়ারী চুড়ির গল্পঃ

১৯৭০ সালের ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু সদর্পে ঘোষণা করেন, ‘জেল-জুলুম, অত্যাচার আর বেঈমানির অবসান ঘটিয়ে যদি মানুষের মত বাঁচতে চান তবে আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে ধোঁকাবাজি আর মীর জাফরদের খতম করে ৬ দফার পক্ষে রায় দিন। আমি ইনশাল্লাহ আপনাদের দাবী আদায় করে ছাড়বো আর প্রয়োজনে আমি রক্ত দিতে প্রস্তুত আছি।’ ফতোয়াবাজদের উদ্যেশ্যে বলেন, ‘৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে বলেছিল। যুক্তফ্রন্ট জিতেছে কিন্তু বিবি তালাক হয়নি। ৫৬ সালে বলেছিল, যুক্ত নির্বাচন করলে ইসলাম বরবাদ হয়ে যাবে। যুক্ত নির্বাচন হয়েছে, ইসলাম বরবাদ হয়নি। নারী রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া নাজায়েজ বলেছিল। আবার ৬৫ সালের নির্বাচনে মুহতারামা ফাতিমা জিন্নাহর পক্ষে পূর্ন সমর্থন দিয়েছিল, কই, তখন তো নাজায়েজ হয়নি।’

ডানপন্থী দলগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী শাসনতন্ত্রের দাবীতে, বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের সমালোচনা করে অসংখ্য সভা-সমিতি করে। একই সাথে তারা ঐক্যজোট গঠনের প্রচেষ্টা চালায়। ফজলুল কাদের চৌধুরী তার কনভেনশন মুসলিম লীগকে ইসলামী ঐক্যের প্রতি একাত্ম ঘোষণা করে। এসব দলের সভাগুলো সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী বলে জনগণ বানচাল করে দিত প্রায় সময়।

এদিকে সেপ্টেম্বর মাসে ভাষানী আন্দোলনের ডাক দিলেও নির্বাচনের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর এক সমাবেশে তিনি বলেন ‘দেশে আল্লাহর হুকুম কায়েম না হলে গরিবের দুঃখ ঘুচবেনা।’ পাবনায় বলেন,  ‘দাবী আদায়ের জন্য প্রয়োজনে জিহাদ করতে হবে।’ তার বক্তব্যে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের কথা বললেও কৌশলে তিনি ৬ দফা ও ১১ দফার বক্তব্যকে এড়িয়ে যান।

আগস্টের শেষ দিকে পূর্ব পাকিস্তানের স্কুল ছাত্ররা তাদের পাঠ্য তালিকায় ছাপিয়ে দেয়া ‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ বইটি বাতিলের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। পাকিস্তান কৃষ্টি, তাহজিব-তমুদ্দিন ও জাতীয়তাবাদ তৈরির পশ্চিমা পরিকল্পনা স্কুল ছাত্রদের সৃষ্ট আন্দোলনের মুখে বাধাগ্রস্ত হয়। ৮ সেপ্টেম্বর সারা প্রদেশে ‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ বই বাতিলের জন্য ধর্মঘট ও মিছিল হয়।

নির্বাচন ডিসেম্বরে পিছিয়ে যাওয়ার পরপরই পাকিস্তান জুড়ে নির্বাচনি তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। এই সময় কাইয়ুমপন্থী মুসলিম লীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান ঠাণ্ডা মিয়া এবং রংপুরের কাজী কাদের আওয়ামীলীগ ও শেখ মুজিবের প্রতি অহেতুক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, যদি আওয়ামীলীগ নেতারা আসন্ন নির্বাচনে জিততে পারেন তাহলে তারা হাতের কব্জি থেকে কনুই পর্যন্ত মেয়েদের চুড়ি পড়ে বেড়াবেন এবং রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। শেখ মুজিব কোন এলাকা থেকে নির্বাচিত হতে পারবেন না। অথচ, ১৯৭০ এর নির্বাচনে তারা ও তাদের অনুসারীদের চরম ভরাডুবি হয়েছিল এবং প্রায় সকলের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। অতি উৎসাহী এসব চ্যালেঞ্জ প্রদানকারীর জন্য নির্বাচনের পরে বেলোয়াড়ী চুড়ি এবং শাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে তারা প্রতিশ্রুতি মোতাবেক কাজ করেনি।