You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.04 | হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, ৪ জুন ১৯৭১, পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার কোন অবকাশ নাই - তাজউদ্দীন - সংগ্রামের নোটবুক

হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, ৪ জুন ১৯৭১
পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার কোন অবকাশ নাই – তাজউদ্দীন

নয়া দিল্লি, ৩ জুন – বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, গতকাল মুজিবনগরএ সুনিশ্চিতভাবে ঘোষণা করেন যে, “পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে তাদের সাথে সমঝোতার কোন সুযোগ নাই।’ – খবর ইউ এন আই।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশ এবং আমরা যে কোনো মূল্যে এটা রক্ষা করব।’

অল ইন্ডিয়া রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে জনাব আহমেদ পুনর্ব্যক্ত করেন আমরা সবার সাথে আমাদের প্রতিশ্রুতিমত বন্ধুত্তপূর্ন সমপর্ক রাখব – বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের প্রতি। আমাদের দুর্যোগে বিভিন্ন বিশ্বশক্তিগুলো যে ভিন্নমত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তা আমাদের বন্ধুত্তপূর্ন সমপর্ক গঠনে প্রভাব ফেল্বেনা।

একটি প্রশ্নের উত্তরে তাজউদ্দীন বলেন – ‘২ মাস বয়সী একটি দেশ হিসেবে আমরা বিদেশী নীতিতে বেশী কঠোর হতে চাইনা।’

তিনি আরো বলেন: “উত্সাহব্যাঞ্জক উন্নয়ন চলছে এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের উপর কোন চূড়ান্ত মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই।”

পাকিস্তান সরকার দাবি করে যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে – এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জনাব আহমেদ বলেন, “আমরা জানিনা শেখ সাহেবকে পাকিস্তান সরকার কোথায় আটক করে রেখেছে। কিন্তু যে দাবী করা হয়েছে যে তিনি নাকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন – একথা পরম অবমাননার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করা উচিত’। এই দাবী অযৌক্তিক।

জনাব আহমেদ বলেন, আমরা জানিনা পাকিস্তান সরকার রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতা করার জন্য এবং আওয়ামী লীগের ছয় দফা মেনে নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছে কিনা।

বড় ক্ষমতাশালী দেশগুলো, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশ সম্পর্কে নীরবতা বা দোটানায় থাকা সম্পর্কে তার সরকারের অনুভূতি কি জানতে চাইলে তিনি বলেন: “বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিশ্বশক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়ায় যে বৈচিত্র থাকুক না কেন নির্বিশেষে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির কৌশল অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, তার সরকার কর্তৃক প্রেরিত প্রতিনিধিদের বিদেশে কাজ হবে এ অঞ্চলের পক্ষে লবিং করা এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরি করা।

সরকারের বর্তমান কার্যকরী অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জনাব তাজউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সুবিশাল গ্রামাঞ্চলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। এবং “আমরা আমাদের স্থানীয় নেতৃস্থানীয় কর্মীদের মাধ্যমে অধিকৃত এলাকার শহর ও শহরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

“আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রণনাধিন এলাকায় প্রশাসনিক যন্ত্র চালু রেখেছি এবং শত্রু দমনের জন্য কেন্দ্রীয় কমান্ড অপারেশন পরিচালনা করছে।’

বাংলাদেশে বামপন্থী বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জনাব আহমেদ বলেন যতদূর জানি বামপন্থী বাহিনী কোনো সমস্যা করছেনা। দেশব্যাপী নির্বাচনে দেশের মানুষ এক হয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেছে। এখনো সেভাবেই দল মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

তিনি বলেন, “ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির মওলানা ভাসানী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক নেতারা ইতিমধ্যে সংগ্রামরত মানুষদের সমর্থন করছেন এবং বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি দাবি করেছেন।’

পিটিআই যোগ করেছে: মার্শাল ল প্রশাসন যদি একটি পাপেট সরকার ঢাকায় গঠন করে তাহলে কি করবেন জানতে চাইলে তাজউদ্দীন বলেন – খুনিদের সাথে যে কোন সহযোগিতা প্রত্যাখ্যান করা হবে এবং দেশের মানুষ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যে লড়াই করছে তার বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত বরদাশত করা হবেনা।