স্টেটসম্যান
জুন ১, ১৯৭১
ভাসানী রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভবনা নাকচ করেছেন
বিশেষ প্রতিনিধি
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা মওলানা ভাসানী, সোমবার বাংলাদেশ বিষয়ে রাজনৈতিক নিষ্পত্তির সম্ভাবনা নাকচ করেছেন। তিনি কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ নেতারা যে পথ নিয়েছিলেন সেই পথ অবলম্বন করলেন। এতে বিপত্তি হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে, যদি প্রয়োজন হয় তাহলে একশ বছর। হয় আমরা মরব নয় জিতব।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাওলানা ভাসানী বলেন রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য যদি কেউ বাংলাদেশে বা দেশের বাইরে চেষ্টা করেন তাহলে বাংলাদেশের ৭৫ কোটি মানুষ তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবে। কারণ মানুষ পাকিস্তান সরকারের উপর তাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তাদের সাম্প্রতিক নৃশংসতা মানব ইতিহাসের পূর্বের সব ঘটনাকে হার মানিয়েছে।
যদি একটি গণভোট U.N. পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হয় যা বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন করবে তাহলে তিনি কিছু মনে করবেন না। তিনি নিশ্চিত যে একটি মানুষও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ভোট দেবে না। এর ফলে পাকিস্তানি রা যে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ভারতের স্পন্সরকৃত তা মিথ্যা প্রমাণিত হবে। কেন আমেরিকা , সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন বা চীন যারা পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল তারা সেনাবাহিনীর নৃশংসতার ব্যাপারে একটি স্বাধীন খোঁজখবর নিতে তাদের সাংবাদিকদের পাঠাচ্ছেন?
চীন ও রাশিয়ার বন্ধু হিসেবে পরিচিত মাওলানা কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সে স্বীকৃতির জন্য সেখানে যাবেন কিনা। তার উত্তর স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট ছিল যদি তারা এখনো বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে আগ্রহী থাকে তবে তার ভিজিট সাফল্য অর্জন করবে। তিনি হতাশার সাথে বলেন যে ভারত ছাড়া অন্য কোন দেশের – হোক তা সমাজতান্ত্রিক অথবা সাম্রাজ্যবাদী – কেউ আমাদের দুর্দশার ব্যাপারটি আমলে নিচ্ছেনা।
দলের লোকদের উপদেশ
মাওলানা বলেন যে তিনি বাংলাদেশে তার দলের লোকদের এবং সব বামপন্থী শক্তির সাথে পরামর্শ করে একত্রে গ্রামে গ্রামে সর্বদলীয় “একশন কমিটি” গঠন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের জন্য জনগণকে প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন। এই কমিটির একটি অন্যতম কাজ হল জনগণকে পাকিস্তান সরকারকে খাজনা দিতে বাধা দেয়া। দ্বিতীয় কাজ পাকিস্তানী আর্মি যে ভারতবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে সেটা বানচাল করে দেবে।
যাইহোক, দেশ ভাগের সময় বহুদলীয় জোটের বা প্লাটফর্মের তিক্ত অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে তিনি বলেন সেরকম কোন ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট বা এই পর্যায়ের কিছু হলে তিনি তা সমর্থন করবেন না। তাছাড়া নেতৃত্বের কোন্দলের সম্ভাবনার ব্যাপারেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
কিন্তু তার চেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস যেন কোনোভাবেই দুর্বল না হয়। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। বাংলাদেশের জনগণকে দুইভাগ করে শাসন করার কোন সুযোগ আমরা দিতে চাইনা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের পথে দলীয় কোন্দলের সুযোগে কোন চরমপন্থী দল নেতৃত্ব দখলের সুযোগ পাবার সম্ভবনা আছে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে মাওলানা সরাসরি কোন উত্তর দেন নাই। তিনি উত্তর দেন ‘ বাঘ কখনো মানুষের রক্তের স্বাদ ভোলেনা”। এদেশে দেড় কোটি শিক্ষিত বেকার আছে। এবং হাতে অস্ত্র পেলে মানুষের মনোভাব ও আচরণ পাল্টে যায়।