কালান্তর পত্রিকা
১ জুন ১৯৭১
লোকসভায় কমিউনিষ্ট সদস্যদের পাক ডেপুটি হাইকমিশনার সম্পর্কে ভারতের আচরণের নিন্দা।
(বিশেষ প্রতিনিধি)
নয়াদিল্লী, ৩১ মে- আজ লোকসভায় কমিউনিষ্ট সদস্য এস কে ভেলায়ুধন কলকাতায় পাক ডেপুটি হাই কমিশনার মেহেদী মাসুদের প্রতি ভারত সরকারের আচরণের তীব্র নিন্দা করলে বৈদেশিক দপ্তরের মন্ত্রী শরণ সিং- এর পক্ষে সভাকে শান্ত করা মুস্কিল হয়ে পড়ে।
ক্ষুদ্ধ ভেলায়ুধন জানতে চান পাকিস্তান সরকার যখন ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অভ্যন্তরীণ করে তখন তার প্রতিশোধাত্মক ব্যবস্থা হিসেবে ভারত সরকার কলকাতার পাক ডেপুটি হাই কমিশনারকে কেন অন্তরীন করেন নি?
সরকারকে এই আচরণকে কাপুরুষোচিত আখ্যা দিয়ে তিনি বাংলাদেশ মিশনের সদস্যদের সঙ্গে পাক ডেপুটি হাই কমিশনারের সাক্ষাতের অনুমতি দানের তীব্র নিন্দা করেন।
জবাবে বৈদেশিক দপ্তরের মন্ত্রী স্বীকার করেন যে মেহেদি মাসুদ কলকাতার পাক ডেপুটি হাইকমিশন দপ্তরের প্রাক্তন কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ লাভের দাবি করেছিলেন। কিন্তু তিনি জানেন না যে মেহেদী ঐ সব কর্মী যারা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতি তাদের আনুগত্য পরিবর্তন করেছেন তাদের বাড়ি বাড়ি দেখা করার জন্য গেছেন।
পাক ডেপুটি কমিশনারের প্রতি সদয় ব্যবহার করার কারণ স্বরূপ শ্রী শরণ সিং বলেন ভারত সরকারের প্রধান লক্ষ ছিল ঢাকা থেকে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের বের করে আনা।
অনুরূপ কারণেই ইন্দিরা কংগ্রেস সদস্য এল কে দাশ চৌধুরী মাসুদকে বহিস্কার করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি যুক্তি হিসেবে আর বলেন, যদিও মাসুদ পাক ডেপুটি হাইকমিশনের কূটনৈতিক সদস্য নন কেননা কলকাতায় ঐ দপ্তরের বর্তমান অস্তিত্ব নেই তবুও ভারত সরকার জেনেভা কনভেনশিন অনুযায়ী কিছু সুযোগ সুবিধা দিতে বাধ্য।
ভেরায়ুধনের আর এক প্রশ্নের জবাবে শ্রী শরন সিং জানান যে, ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত সরকার পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ করছেন। এই বিষয়ে ভারত সরকার উভয় দেশে বহু স্থানীয় রাষ্ট্রের দিল্লীস্থ দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন।
লোকসভায় কমিউনিস্ট দলের নেতা ইন্দ্রজিত গুপ্ত বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের সম্পর্কে প্রকৃত সংবাদ বিদেশের সরকারগুলিকে কি রকম ওয়াকিবহাল রাখছেন তার নির্দিষ্ট জবাব দাবি করেন।
জবাবে বৈদেশিক দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুরেন্দ্র পাল সিং জানান ভারতে প্রতিনিধিরা সংশ্লিষ্ট সরকারগুলিকে বাংলাদেশের খবারখবর দিয়েছেন। তাছাড়া এ দেশে যে সব বিদেশী দূতাবাস আছে তাদের কাছেও বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে জানিয়েছেন।
বিদেশী রাষ্ট্রগুলির এবং জাতিসংঘ সম্পাদকের দৃষ্টি বাংলাদেশ সম্পর্কে সংসদের প্রস্তাব এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার প্রতি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এই কূতনৈতিক কার্যকলাপের ফলে বেশ কয়েকটি সরকার মানবতার খাতিরে বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য সেবামূলক কাজের প্রতি উৎসাহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন সম্পর্রকে অধিকাংশ সরকারই কোন নির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করেনি।