You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.23 | লুথরা সাহেব এর কি যুক্তি দেবেন? | যুগান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

লুথরা সাহেব এর কি যুক্তি দেবেন?

এই কি সেই বহু-ঘােষিত তৎপরতা যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের উদ্বাস্তু সমস্যার মােকাবিলা করছেন?
রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা: জয়নাল আবেদিন সােমবার কলকাতায় জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তুদের অন্যত্র অপসারণের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকছে, কেননা মানা শিবির প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে। মােট ৫২ হাজার উদ্বাস্তুকে মানায় রাখার কথা। কাজেই ট্রেনে করে আর কোনাে উদ্বাস্তুকে পাঠানাে হচ্ছে না। যে দু’হাজার বাকী রইল তাদের রুশ বিমানে তিন চারদিনের মধ্যে মানায় পৌছে দেওয়া হবে। ব্যাস। তারপরেই আপাতত খতম। কারণ, ডা: আবেদিন বলেছেন, মানার পর পাঠাবার মতাে আর কোন শিবির এখনও তৈরী নেই।
এর কোন যুক্তি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দেখাবেন? অবশ্য দীর্ঘ উনিশ দিনে মাত্র ৫০ হাজার উদ্বাস্তু অপসারণের মধ্যেই যাদের কৃতিত্ব সীমাবদ্ধ, তাদের ভান্ডারে অজুহাতের অভাব কোনােদিনই হবে না, একথা আমরা জানি। তবু আড়ম্বরের যখন কোনাে অভাব ছিল না, যখন কেন্দ্রীয় ত্রাণ দপ্তরের একটা অফিস কলকাতাতে খুলে ফেলা হলাে, এবং যখন তার দায়িত্ব দেওয়া হলাে একজন সামরিক অফিসারকে, তখন ভাবা গিয়েছিল যে কর্তব্য সম্পর্কে মােটামুটি ভদ্রগােছের একটা তৎপরতা কোথায়? দিনে মাত্র হাজার তিন-চার উদ্বাস্তু অন্যত্র পাঠাবার মতাে একটা অতি শ্লথগতি কেন এইভাবে মাঝপথে এসে আটকা পড়ে?
কর্নেল পি. এন. লুথরা বলেছেন, চিকিৎসার ও জল সরবরাহের সুবন্দবস্ত না করা পর্যন্ত তারা অন্য কোনাে শিবিরে উদ্বাস্তু পাঠাতে চান না। আমরা স্বীকার করি সেই অবস্থায় উদ্বাস্তু পাঠানাে বিপজ্জনক। কিন্তু, লুথরা সাহেবের কাছে আমাদের প্রশ্ন, এত দিনের মধ্যে একটা বিকল্প শিবিরেও কেন এই বন্দোবস্তগুলি করা যায় নি? মানায় যে হাজার পঞ্চাশের বেশি উদ্বাস্তু পাঠানাে যাবে না এটা জানা কথা ছিল। এই অপসারণের কাজ শেষ করতে কতদিন লাগতে পারে সেটাও অজানা ছিল না। উদ্বস্তুদের যে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ষােলটি শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হবে সে-কথাও বহুদিন আগেই ঘােষিত। এবং ঐসব শিবিরের জন্যে স্থান সন্ধানেরও কোনাে প্রয়ােজন নেই, কেননা সেগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের নিজস্ব জমিতেই তৈরী হবার কথা। তাহলে কেন এতদিনে অন্তত একটি বিকল্প শিবিরকেও তারা তৈরী রাখতে পারেন নি? তা যদি তারা রাখতেন তাহলে, উদ্বাস্তু অপসারণের কাজ এইভাবে মাঝপথে বাধা পড়ত না।
সবচেয়ে আফশােষের কথা, এই বাধা পড়ল এমন একটা সময়ে যখন উদ্বাস্তুর ভারে এমনিতেই সমস্য জর্জরিত পশ্চিমবঙ্গ রীতিমতাে কাপছে। পঞ্চাশ লাখ উদ্বাস্তু ইতিমধ্যেই এই রাজ্যে এসে গেছে, এবং রােজ প্রায় ৬০ হাজার থেকে লাখখানেক করে নতুন উদ্বাস্তু প্রবেশ করছে। এই অবস্থায়, যে-কোনাে মানুষ বলবে, কেন্দ্রীয় সরকারের আট লাখ উদ্বাস্তুকে অন্যত্র নিয়ে যাবার সঙ্কল্পের প্রতীকী ছাড়া আর কোনাে মূল্য নেই। পশ্চিমবঙ্গের এক তীব্র সঙ্কটের মুহূর্তে এটাকে একটা মস্ত বড় রদ রসিকতা বলে গণ্য করা চলে। এখন দেখা যাচ্ছে এই আট লাখ উদ্বাস্তুকে সরিয়ে নেবার মতাে প্রস্তুতি কিংবা তৎপরতাও কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নেই। একে আমরা কি বলব? কি বলা উচিত? পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভাগ্যের প্রতি এটা কোন ধরনের সমবেদনা? এই রাজ্যের প্রয়ােজনের দিনে এটা কোন জাতের আচরণ?

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ২৩ জুন ১৯৭১