দি এজ | ক্যানবেরা, ২৬ মে ১৯৭১ | সম্পাদকীয় – জাতিসঙ্ঘের প্রতি চ্যালেঞ্জ
পূর্ব পাকিস্তানি ট্র্যাজেডির পূর্ণ মাত্রার প্রমাণ পাওয়া যায় ভারত সীমান্ত জুড়ে বসবাসরত অসহায় উদ্বাস্তুদের বিশাল পরিমাণ দেখে এবং তাদের অব্যাহত প্রবাহের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী (শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী) অনুমান করেছেন যে পশ্চিমবঙ্গে তাদের সংখ্যা এখন ৩৫০০০০০ জন যা প্রতিদিন ৬০,০০০ জন করে বাড়ছে। অনেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা বিদ্রোহ দমন এবং নির্মম অভিযানের মধ্য দিয়ে সঙ্ঘটি ক্রমাগতভাবে হত্যার ব্যাপারে জানিয়েছেন। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হত- যেমনটি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলছেন – তাহলে সমস্ত বিষয় সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই থেমে যেত। কিন্তু আসলে তা নয়।
নিরাপত্তার জন্য এত প্রচুর মানুষের চলে যাওয়া একটি বড় সমস্যার সৃষ্টি করেছে। প্যালেস্টিনিয়ান শরনার্থিদের চাইতে এদের পরিণতি আরও নিষ্ঠুর। ভারত হঠাত করেই এত বিপুল মানুষকে খাদ্য, বাহন ও স্বাস্থ্য সহায়তা দেবার জন্য বাধ্য হচ্ছে যাদের সংখ্যা ভিটোরিয়ার জনসংখ্যার চাইতেও বেশি। এর ফলে তারা অপ্রত্যাশিতভাবে বড় রকমের অর্থনৈতিক ধ্বসের সম্মুখীন হবে। জাতিসঙ্ঘের সভাপতি ু থান্ট প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে বলেছেন তার মজুদকরা খাদ্য বণ্টন করার ব্যাপারে। তিনি একটি আংশিক এম্নেস্টি প্রদান করেছেন শরনার্থিদের ফিরে আসার ব্যাপারে – কিন্তু এতে কোন লাভ হবেনা যতক্ষণ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়।
আসন্ন উত্তর গ্রীষ্মে ভারতকে এটি তেমন কোন সয়াহয়া করবে না। পশ্চিমবঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের সংঘর্ষের মত পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন। লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী সৃষ্টি ঠেকাতে তাত্ক্ষণিকভাবে সাহায্য প্রয়োজন। মিসেস গান্ধী প্রভাবশালী বিশ্বশক্তিগুলোকে রাজনৈতিক ভাষায় চাপ সৃষ্টি করার জন্য বলেছেন – তিনি উদ্বিগ্ন যে তাদের উচিত পাকিস্তান সরকারকে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য চাপ দেয়া। এতে করে জনগণের আন্দোলন থেমে যাবে। কিন্তু এই সময়ে জাতিসঙ্ঘ ইউএনএইচসিআর (উদ্বাস্তুদের সাথে সম্পর্কযুক্ত) এবং ইউনিসেফ (শিশু তহবিল) এই সংস্থার মাধ্যমে ভারতকে তার ভয়ঙ্কর নতুন সমস্যা মোকাবেলা করতে সাহায্য করা উচিত। যদি তারা বিশ্বের বিবেকের প্রতিনিধিত্ব করে তবে তাদের এটা প্রমাণ করার জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ।