দৈনিক পাকিস্তান
২৬শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
জনগণের বিজয় : শেখ মুজিবের মুক্তিতে প্রদেশে আনন্দের জোয়ার
(ষ্টাফ রিপোর্টার)
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবর রহমানসহ অন্যান্যদের মুক্তিকে ছাত্র সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক নেতৃবর্গসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনসাধারণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। তারা একে বর্তমান গণআন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য বিজয় বলে ঘোষণা করেছেন। আগরতলা মামলা রুজুর পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের দাবীও জানান হয়। মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তি ১১ দফা আদায়ের সংগ্রামে বর্তমান গণআন্দোলনকে আরো জোরদার করবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। মামলা প্রত্যাহারের সরকারের সিদ্ধান্তকে তারা বিজ্ঞোচিত বলে আখ্যা দেন এবং এজন্যে সরকারকে ধন্যবাদ দেন।
জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন
জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের ৩৩ জন নেতা এক বিবৃতিতে বলেন যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে জনগণের বিজয় সূচিত হয়েছে। তারা শেখ মুজিবকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান এবং সাথে সাথে তাকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, সারা দেশে বর্তমানে জাতির মুক্তি সনদ ১১ দফার ভিত্তিতে ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে এক ঐতিহাসিক গণআন্দোলন শুরু হয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকার শেখ মুজিব ও অন্যান্যদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছেন এবং এই আন্দোলনের জোয়ারেই তিনি তার প্রিয় জনতার মধ্যে ফিরে এসেছেন।
ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ আশা প্রকাশ করেন যে, শেখ মুজিব গণআন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করে ১১-দফা দাবীকে বাস্তবায়িত করার সংগ্রামে তাদের দিশারীর ভূমিকা গ্রহণ করবেন। শেখ মুজিব ছাত্রদের ১১- দফা ছাড়া কোনরকম সিদ্ধান্তে স্বীকৃতি দেবেন না বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
ছাত্র নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও জনগণের সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানান। তারা সর্বাগ্রে প্রাদেশিক গবর্নর জনাব আবদুল মোনেম খানের অপসারণের দাবী করেন।
বিবৃতিতে এন এস এফ এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহবুবউল হক দুলন ‘ডাকসু’র সাধারণ সম্পাদক জনাব নাজিম কামরান চৌধুরী, এন এস এফ-এর প্রচার সম্পাদক জনাব ফখরুল ইসলাম প্রমুখ রয়েছেন।
ওয়াহিদুজ্জামান
জাতীয় পরিষদের সদস্য ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব ওয়াহিদুজ্জামান বলেন যে এখন শেখ মুজিব উপযুক্ত ও সন্তোষজনক শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কাজে সাহায্য করতে সক্ষম হবেন।
প্রাদেশিক শিল্পমন্ত্রী ও প্রাদেশিক পরিষদে সরকারী দলের নেতা জনাব দেওয়ান আবদুল বাসেত বলেন যে, স্বাধীনতা আন্দোলনের আমাদের সংগ্রামী সৈনিক শেখ মুজিবর রহমানকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং আশা করি পাকিস্তানকে অধিকতর সুখী ও সমৃদ্ধশালী করার জন্যে তিনি সংগ্রাম করে যাবেন।
এ ছাড়া প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধীদলের নেতা জনাব মালেক উকিল, এনডিএফ নেতা সৈয়দ আজিজুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান, এম এন এ জনাব মোখলেসুজামান, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারকে জনগণের বিজয় বলে অভিহিত করেন।
ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতি, মোক্তার বার সমিতি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও খাকসার পার্টি এ সিদ্ধান্তে আনন্দ প্রকাশ করেন। পূর্ব পাকিস্তান চটকল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মৌলবী সায়দুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব মিছির আহমদ এ সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন যে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ১১ দফার আন্দোলন জোরদার করবে।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯