You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.27 | কালান্তর পত্রিকা, ২৭ মে, ১৯৭১, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে ভারত সরকারের দ্বিধা কাটেনি -লোকসভায় শ্রীমতি গান্ধীর বক্তব্যের মর্মার্থ - সংগ্রামের নোটবুক

কালান্তর পত্রিকা
২৭ মে, ১৯৭১
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রশ্নে ভারত সরকারের দ্বিধা কাটেনি
লোকসভায় শ্রীমতি গান্ধীর বক্তব্যের মর্মার্থ

নয়াদিল্লি, ২৬মে-বাংলাদেশ সম্পর্কে আট ঘন্টার লোকসভা বিতর্কের জবাব্দাঙ্কালে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী আজও তিনি বলেছেন, “আমরা ঝুঁকি নিতে ভয় পাই না। দরকার হলেই ঝুঁকি নেব”। অথচ তাঁর দলের বিশিষ্ট সদস্য শ্রী দীনেশ সিং বলেছেন, ইতিমধ্যেই ভারত অনেকটা দেরী করে ফেলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে একটা জিনিস খুব সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি কি করে সেদিকে ভারত তাকিয়ে আছে।

ইউএনআই-এর সংবাদে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা লোকসভায় বলেছেন, বাংলাদেশে যে সঙ্কটজনক অধ্যায় সূচিত হয়েছে সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমাজকে হস্তক্ষপ করতে হবে। এই অঞ্চলের শান্তি অ নিরাপত্তা যাতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় ও বজায় থাকে তা দেখা বিদেশী দেশগুলোর কর্তব্য। আর তা করতে ব্যররথ হলে তাঁর পরিণতি খুব বিপজ্জনক।

শ্রীমতি গান্ধী বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা রাজনৈতিক বা অর্থনীতিক সমস্যা নয়। এ হচ্ছে সমগ্র অঞ্চলের মানুষের জীবনমরণ লড়াইই। তন বলেন, একটি গোটা জাতিকে ধ্বংস করার সুপরিকল্পিত প্রয়াস থেকে আজকে বাংলাদেশের এই পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে। আর সেই গণহত্যার কার্যকরণ পরিণতিস্বরূপ হাজার পুরুষ নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে বা লাখো মানুষকে শরণারররহী করে, ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

শ্রীমতি আজ পুনর্বার বলেন, আমরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের প্রশ্নটি প্রতিনিয়ত ভেবে দেখছি। এ ব্যপারে বা অন্য ব্যাপারে আমরা যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করি না কেন তা স্বাধীনভাবে বিচারবিবেচনা করে গ্রহণ করব। আমাদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্দধান্ত করব।
প্রধানমন্ত্রী আজ সদস্যদের প্রতিশ্রুতিদেন, বাংলাদেশের প্রশ্নে সব বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা ক্করে চলবেন।

তিনি সদস্যদের বলেন, পাকিস্তানের নির্বাচনে যে রায় প্রকাশিত হয়েছে গণতন্ত্রের এর চেয়ে কোন সুস্পষ্ট প্রকাশ হওয়া কি সম্ভব? তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অনেক গালভরা ঝুলি শুনেছি। মিত্র দেশগুলি দাবি করেন, গণতন্ত্র বাঁচাবার জন্য নাকি তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নেমেছিলেন কিন্তু এখন তারা কোথায়?
তিনি বলেন, কোন কোন দেশ বাংলাদেশের মানুষকে বিছিন্নতাকামী আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে, পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ পূর্বাঞ্চলে বাস করে। কিন্তু গণতান্ত্রিকের ব্যাবস্থায় সংখ্যাধিক্যের কতকগুলি অধিকার আছে। আর পূর্বাঞ্চলের মানূষ যদি সেই অধিকারগুলো বুঝে নিতে চান তবে তাদের বিছিন্নতাকামী আখ্যা দেওয়া কি সমীচীন হয়েছে?
তিনি বলেন সাড়ে সাত কোটি মানুষধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এ কারণেই ভারতের মনোভাব প্রকাশিত হয়নি, বাংলাদেশের মর্মান্তিক ঘটনার ছাপ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অ সামাজিকজীবনে এসে পড়েছে। এই হচ্ছে অবস্থার বাস্তব রূপায়ন। এ কোন প্রচার নয়।

পূর্বাহ্নে প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রী দীনেশ সিং বলেন, ভারত কোন ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করলে তবে বিদেশী রাষ্ট্রগুলি বাংলাদেশের ঘটনার সঙ্গে নিজেদেরকে জড়িত করবে। তিনি বলেন, অনেক দেরী হয়েছে। আর কালবিলম্ব না করে ভারত সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার পেছনে অনেকগুলি সাংবিধানিক অবৈধ যুক্তি আছে।
পিএসপি শ্রী সমর গুহ বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত সরকার ইতিমধ্যেই অনেকখানি জড়িয়ে পড়েছে। এখন সে দেশকে স্বীকৃতি দিলে অবস্থার গুণগত পরিবর্তন হবে।

নির্দল সদস্য শ্রী কৃষ্ণমেনন বলেন, একদিন করে স্বীকৃতি দিতে দেরী হচ্ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও জটিলতর হচ্ছে। শ্রী মেনন মনে করেন বাংলাদেশকে উপদ্রুপ অবস্থা পিছনে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি লুকিয়ে আছে তাদের রুখবার জন্যও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, পাকিস্তানের পুরোপুরি অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার জন্য ভারত সরকার বৃটেন অ আমেরিকার ওপর চাপ সৃষ্টি করুন।

তিনি মনে করেন, সক্ষম শরণার্থীদের বাংলাদেশের ফিরে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিক সাহায্যদান করা উচিত।

কালান্তর, ২৭ মা, ১৯৭১