হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড
২৬ মে, ১৯৭১
মেঘালয়ের সীমান্তে গোলাবর্ষণ
৯ জন বিএসএফ নিহত
শিলং, ২৫ মে – যদিও অফিসিয়াল সূত্র মতে আজ মেঘালয় গারো হিল জেলার দালু সেক্টরে পাকিস্তানিদের আক্রমণে ২২ জন মারা গেছে যাদের ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ৯ জন আছে। আসামের প্রধানমন্ত্রী জনাব মহেন্দ্রমহন চৌধুরী আজ সন্ধ্যায় এসেম্বলিতে বলেছেন বি এস এফ সফলভাবে পাকিস্তানের আগ্রাসন আসামের বাংলাদেশ বর্ডারের তিনটি সেক্টর থেকে প্রতিহত করেছে – খবর এজেন্সির।
প্রধানমন্ত্রী যিনি ভারতীয় ভূখন্ডএর আসামে পাকিস্তানি হামলার উপর বিবৃতি দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আসাম সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আমাদের অঞ্চলের পবিত্রতা রক্ষা করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছিলেন যাতে আমাদের এলাকা থেকে পাকিস্তানি আর্মি দূর হয়।
জনাব চৌধুরী বলেন চারটি গ্রাম থেকে সাধারণ জনগণকে নিরাপদে সরানো হয়েছে – কারণ পাকিস্তানিরা ভারতের অনেক ভেতরে গারো পাহাড় আর করিমগঞ্জ সেক্টরে আক্রমণ করেছিল।
গ্রামগুলো হল মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের ডালু, এবং সুতারকান্দি আর করিমগঞ্জ সেক্টরের জেরাপাত্তা ও গোবিন্দপুর।
ডালু সেক্টরে ২২ জন মারা যাবার পাশাপাশি আরও ১১ জন আহত হয় পাকিস্তানিদের শেলিং এর জন্য। তারা ভারতের বর্ডারের আউটপোস্টে মেশিনগান ও শেলিং করছিল জঙ্গলের গভীর থেকে – অফিসিয়াল সূত্র একথা জানায়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এক জন বিএসএফ জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারকে পাক-সৈন্যরা অপহরণ করে।
রিপোর্ট জানায় যে, ভারতীয় অংশে সাধারণ জনগণের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে কারণ এখনো জঙ্গলের ভেতর লাশ খোজা হচ্ছে।
প্রায় ২০০ পাকিস্তানি সৈন্য ভারতীয় ভূখন্ডের ভিতরে কিলাপারায় টহল দিচ্ছে বলে রিপোর্ট করা হয়েছিল। কিন্তু এলাকাটি সন্ধ্যায় ভারত সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
আমাদের তুরা প্রতিবেদক বলেছেন: পাকিস্তানী সৈন্যের সাথে রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার আছে। তারা আজ সকাল প্রায় ৭ টার সময় মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের সীমান্তে দালুবাজার প্রবেশ করে। সংখ্যায় ১০০ ছিল। ১ ঘণ্টা এলোমেলো গুলো চালাতে থাকে।
একটি অসমর্থিত নন-অফিশিয়াল প্রতিবেদন অনুযায়ী মৃতদের মধ্যে এক নারী ও একটি চার বছরের শিশু ছিল। কেউ কেউ গুরুতর আহত হয়েছে – টাদের সাধারণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অ-গারো, গারো সহ স্থানীয় বাসিন্দা এবং বাংলাদেশী শরনার্থি ছিল যারা দালুবাজার ও টার পার্শবর্তি এলাকায় ক্যাম্পে ছিল।
একটি মুলতবি প্রস্তাব যা দিয়েছেন কমিউনিস্ট দলের বড় নেতা জনাব ফনি – তার জবাবে জনাব চৌধুরী বলেন, আক্রমণকারি পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রাথমিক কিছু লাভ আছে। কিন্তু চূড়ান্ত বিজয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর।জনাব চৌধুরী উভয় হাউজে আসাম-পূর্ববাংলার সীমান্তে পাকিস্তানের আগ্রাসনের ব্যাপারে বলেন। তিনি বলেন। ” পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিবে তা এত দ্রুত বলা সম্ভব না।’
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য হাউসকে নিশ্চিত করেন যে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত ছিল যে কোন পরিণামের জন্য।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর “বিনা উস্কানিতে আক্রমনাত্মক কার্যক্রম” এর বিবরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হামলা তিনটি ভিন্ন সেক্টরে হয়েছে – দক্ষিন আসামের করিমগঞ্জ সাব ডিভিশনের সুতারকান্দি থেকে মেঘালয় পর্যন্ত।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি সেনারা গতকাল বিকালে সুতারকান্দিতে ভারতের সীমান্ত ফাঁড়ি এবং করিমগঞ্জের জরাপাতার গ্রামের ফাঁড়ি দখল করে।
ভারতীয় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর পরে একটি পাল্টা আক্রমণ করে এবং দুটি স্থান পুনরুদ্ধার করেন।
মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের সেক্টরে পাকিস্তানি আর্মি ডালু টালিপারা ও ছাইপানি এলাকায় গুলি করে ত্রাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করে।
প্রায় ২০০ পাকিস্তানি আর্মি আজ সকালে ভারতীয় এলাকা টালিপারায় টহল দিচ্ছে। গুলি বিনিময়ের পড় টাদের গ্রাম ছাড়া করা হয়। এতে উভয় পক্ষের অনেকে হতাহত হয়। যানা যায় যে, পাকিস্তানী সৈন্যরা প্রচন্ডভাবে করিমগঞ্জ সেক্টরের লাটু গ্রামে ও মেঘালয়-গারো পাহাড় জেলার উল্টা দিকে ডালু ফাঁড়ির মধ্যে শেলিং করে।
সৈন্যরা ভারতীয় অনেক গ্রামে অনেক ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ও বেসামরিক লোক হত্যা করে এবং অপহরণ করে। জনাব চৌধুরী বলেন, যদিও এখন ভারতের মাটিতে কোন পাকিস্তানী সৈন্য নাই, রাজ্য সরকার পাক সরকারের আক্রমনাত্মক ভঙ্গি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন আছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি আর্মি ২৩ মে সন্ধ্যায় সুতারকান্দিতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ফাঁড়ির দিকে গুলি করে।
সাম্প্রতিক সরকারের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী যানা যায় পাকিস্তানি আর্মি এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সাথে পূর্ব বঙ্গের কাছাকাছি ভারতীয় গ্রাম লাটু এবং করিমগঞ্জের মহিশাশন গ্রামে ভারী যুদ্ধ হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন পূর্ব বাংলা সীমান্তের মেঘালয়ের ময়মনসিংহ সেক্টরের গারো-হিলস বরাবর দাতু, তাল্লিপারা ও ছাইপানি এলাকায় পাকিস্তানি সেনারা ভারী গোলা বর্ষণ করে একটি ছাপ সৃষ্টি করেছে।
গত সন্ধ্যায় ডালুতে পাকিস্তানের গোলা বর্ষণের কারণে একজন ভারতীয় গ্রামবাসী নিহত হয়েছে এবং ছয় জন আহত হয়েছে। এছাড়া সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীরও কিছু হতাহত হয়েছে।
আজ সকালে তালিপারা ও ছাইপানি এলাকা থেকে পাকিস্তানি সেনারা কিছু ভারতীয়দের অপহরণ করেছে।
আমাদের শিকারপুর প্রতিবেদক যোগ করেছেন: প্যাট সৈন্য সকাল ৮ টার পর থেকে শিকারপুর সীমান্তে গুলি চালাচ্ছে। সম্ভবত ২২ মে তারিখে তাদের তিনজন গুলিতে নিহত হয় সেই প্রতিশোধ নিতে এগুলো করছে। তারা ভারতে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ১১ টি ছাগল নিয়ে যেতে এসেছিল। কুষ্টিয়া সীমান্তে পাক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। শিকারপুর সীমান্ত থেকে বিএসএফ সরানো হয়েছে। বিস্তারিত আরও পরে জানানো হবে।