You dont have javascript enabled! Please enable it!

শরণার্থীদের মধ্যে চিকিৎসার কাজে সমন্বয়

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এ্যাসােসিয়েশনের পশ্চিমবংগ শাখার রিলিফের কাজে ঝাপিয়ে পড়ার সুনাম আছে। এবারেও লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের মধ্যে সেবা কার্যের জন্য এদের উদ্যোগে ১৪টি চিকিৎসা কেন্দ্র খােলা হয়েছে। আই, এম, এ দাবি করে, এই সংখ্যক চিকিৎসা কেন্দ্র কোন বে-সরকারী সংস্থার পক্ষেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি। রাজ্যের মধ্যেই সেবাকার্যের জন্য এ ধরণের একটি অভিজ্ঞ সংস্থাকে হাতের কাছে পাওয়া সত্ত্বেও সরকার তাকে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করে নি আই, এম, এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ভাবেই এ অভিযােগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় আই, এম, এর বে-সরকারী উদ্যোগকে আরও কার্যকরী করার জন্য যে পরিমাণ সাহায্য আসা প্রয়ােজন ছিল তাও আশানুরূপ আসে নি। তবু সংস্থাটি বর্তমান দুর্যোগ ও দুর্বিপাতের মধ্যে তাদের সেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
“একদিকে আইএমএর যেমন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযােগ আছে অসহযােগিতার। অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রী সম্প্রতি আই এম এর কাছে সহযােগিতা চেয়ে যে চিঠি পাঠিয়ে ছিলেন, আই এম এ তার জবাব দেয় নি। এ বিষয়ে অবশ্য আই, এম, এর যুক্তি হলাে চিকিৎসার কাজকর্মে সমন্বয় সাধন করার যে প্রস্তাব সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল তার এবং আই, এম, এর অন্তর্ভুক্ত চিকিৎসক ও মেডিক্যাল ছাত্র ও অন্যান্যদের ক্ষেত্রে সরকারী ভাতার অসামঞ্জস্য দূর করার প্রস্তাবের কোন বিবেচনা না হলে সহযােগিতা হয় না।
সরকারী লাল ফিতার এবং পূর্ব প্রচলিত ধারণার কল্যাণে প্রতি স্তরে নানা জটিলতার সৃষ্টি হওয়া কোন অসম্ভব ঘটনা নয়। এ ক্ষেত্রে ঠিক কোন কারণে আই এম এ ও সরকারের মধ্যে পূর্ণ সহযােগিতা সম্ভব হচ্ছে
জানা নেই। কিন্তু পশ্চিম বাঙলার মাটিতে বাঙলাদেশের অতি বিপন্ন লক্ষ লক্ষ নর-নারী, শিশু কিশাের ও অন্যান্য কাল ব্যাধির শিকার এবং তাদের সবার জন্য দেশ বিদেশ থেকে সহৃদয় ডাক্তার, নার্সরা দেওড়ে আসছেন, তখন এই রাজ্যের চিকিৎসকদের সর্বাগ্রগণ্য সংস্থাটি কেবল বে-সরকারী প্রয়াসের মধ্যেই তাদের কর্মক্ষমতা সীমিত রাখবে- এ কথা চিন্তাই করা যায় না।
সুখের কথা আই, এম, এর পক্ষ থেকেই চিকিৎসায় সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার কাজ-কর্মের সমন্বয় সাধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর যদি অবিলম্বে চিকিৎসার মারফতে সেবা কাজে রত আই, এম, এ প্রমুখ সংস্থাগুলির সঙ্গে একত্রে বসে সমস্ত কাজের মধ্যে সমন্বয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে একটি মহান দায়িত্ব পালন করা যায়। এ বিষয়ে সরকারী উদ্যোগই শেষ কথা। পশ্চিমবংগ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রীকেই এই দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হতে হবে। কারণ শেষ পর্যন্ত যদি কোন কৈফিয়ত দিতে হয় তা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে আর রাজ্য সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রীই হবে এই কৈফিয়ত প্রদানের একমাত্র ব্যক্তি।

সূত্র: কালান্তর, ১৪.৬.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!