আনন্দবাজার পত্রিকা
২৩ মে ১৯৭১
জঙ্গিশাহির হাতে অন্তত দশ লাখ নিহত
বাংলাদেশের ভ্রাম্যমাণ দ্যূতের বিবৃতি
বিশেষ সংবাদদাতা
নয়াদিল্লী, ২২ মে, বাংলাদেশের ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত ডঃ মোখলেসুর রহমান কাল রাতে দিল্লিতে এক বিবৃতিতে বলেন যে, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের আদেশে গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ জঙ্গি আক্রমণ শুরুর পর নারী ০ শিশুসমেত অন্তত দশ লাখ নিরস্ত্র ও অসহায় বাঙালি নিহত হয়েছে।
তিনি বলেন, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের অনুগত সঙ্গী প্রশাসক লে জে টিক্কা খান এখনো বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপক হারে নরহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশের সমস্ত অসহায় মানুষের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অগ্নিবর্ষী ট্যাংক , কামান, মর্টার ও মেশিনগানের গোলায় তাদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। গ্রাম ও শহরগুলির ওপর ব্যাপকভাবে বোমা ফেলা হচ্ছে।
কেম্ব্রিজের ইতিহাসের পি এইচ ডি ডঃ রহমান ২ মে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। প্রত্ত্যক্ষদর্শীর করুন বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন রাজশাহীর কয়েকজন গ্রামবাসী আমাকে একটি গ্রামে নিয়ে যান। সেই গ্রামের ১২০০ থেকে ১৪০০ লোককে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে যে উৎপীড়নের কথা প্রচারিত হয়েছে, তা অতিরঞ্জিত – এই মিথ্যা প্রচারের জন্য ইয়াহিয়া খান সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্যূত পাঠিয়েছেন। শ্রী রহমান জিজ্ঞাসা করেন, তাই যদি হয় তাহলে কেন বিদেশী সাংবাদিকদের সেখানে যা ঘটেছে তা দেখতে দেয়া হচ্ছেনা?
শ্রী রহমান বলেন যে, মানবতার নামে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটী মানুষের পক্ষে আমরা দাবি করছি যে, বাংলাদেশে এই ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের উচিত অবিলম্বে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও টিক্কা খানের বিচারে উদ্যোগী হওয়া।
তিনি বিদেশী বন্ধুদের এই কথা মনে রাখতে বলেন যে, জঙ্গিশাহিকে কোন রকম অর্থনৈতিক সাহায্য দেওয়া হলে তা বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধেই কাজে লাগানো হবে।