You dont have javascript enabled! Please enable it!

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শরণার্থী সমস্যা সমাধানের পথ এড়িয়ে যাচ্ছেন রাজ্য বিধান সভায় কমিউনিস্ট সদস্যের অভিযােগ
(নিজস্ব সংবাদদাতা),

আগরতলা ৩০ জুন- “বাঙলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় আগত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর বেদনাদায়ক দুঃখ-দুর্দশা থেকে তাদের রক্ষার কোন সুস্থ ও পরিকল্পিত সমাধানের কোন বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কোনপ্রকার ইঙ্গিতই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বিবৃতিতে রাখতে সক্ষম হন নি। মুখ্যমন্ত্রী সমস্যা সমাধানের পথ সুচতুরভাবে এড়িয়ে গেছেন”। ২২ জুন রাজ্য বিধান সভার বর্ষাকালীন অধিবেশনে শরণার্থী আগমনের উপর মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি সংক্রান্ত বিতর্কে অংশগ্রহণ করে কমিউনিস্ট সদস্য শ্রী অঘাের দেববর্মা এ মন্তব্য করেন। প্রসঙ্গতঃ শ্রী দেববর্মা ত্রিপুরার সমস্যাবলীর কথা উল্লেখ করে বলেন, ত্রিপুরাই অসংখ্য সমস্যা। জুমিয়ারা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। জনগণের একটা বিরাট অংশ খেতে পাচ্ছে না। শিক্ষিত বেকাররা কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। যােগাযােগ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। শিল্প বলতে কিছুই নেই-করার কোন প্রচেষ্টাও সরকারের নেই। কৃষিঋণের অভাবে কৃষিকার্য ক্ষগ্রিস্থ হচ্ছে। জুমিয়ারা উপযুক্ত তাে দূরের কথা প্রতিশ্রুত সরকারী সাহায্য থেকেও বঞ্চিত। অর্থাৎ এক কথায় সব মিলিয়ে ত্রিপুরাই বহু জটিল সমস্যার পঙ্কিল আবর্তে আবর্তিত। এই সমস্যা সঙ্কুল ত্রিপুরায় শরণার্থীদের বাঁচার মত সাহায্য করা সম্ভবপর নয়। তাই মানবতার খাতিরে তাদের বাঁচানাের জন্য সত্বর তাদের অন্য রাজ্যে স্থানান্তরিত করা একান্ত প্রয়ােজন। তিনি বলেন, শরণার্থীদের থাকার ঘর তৈরি করার জন্য ছন বর্তমানে পাওয়াই যাচ্ছে না। ফলে অনেকক্ষেত্রে ছােট ছােট ছন যেগুলাে আগামী বৎসর কাটা হত তা কেটে ছাউনি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই ছন শুকিয়ে গেলেই ঝরঝর করে জল পড়ে। অধিকন্তু এভাবেই ছােট ছােট ছন কেটে নেওয়ায় আগামী বৎসরও ছনের দারুন দুপ্রাপ্যতা দেখা দিবে। এছাড়া কোন পথও নেই। কেননা টিন দিয়ে তাদের ঘর তৈরি করে দেওয়া সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। তবুও উপযুক্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। এবং সব শরণার্থীর জন্য তাবুর বন্দোবস্ত করা সম্ভবপরও নয়।শ্রীদেববর্মা বলেন, তারপর ধরা যাক খাদ্যের কথা। যত সংখ্যক শরণার্থী ত্রিপুরায় এসেছে তাদের খাদ্য যােগানাের মত ক্ষমতা ত্রিপুরার কোন কালেই নেই। কেন্দ্র থেকেও যে খাদ্য পাঠানাে হচ্ছে তাও পর্যাপ্ত নয়। অধিকন্তু যােগাযােগ ব্যবস্থার দুর্বলতার জন্য কেন্দ্র থেকে যা-ই বা পাঠাননা হচ্ছে তাও ঠিক ঠিক মত এখানে এসে পৌঁছতে পারছে না। তবে কি এখানে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না ? পাওয়া যাচ্ছে। তবে ওপার থেকে আসছে। এই জন্যই এখানে সমস্যা বাড়ে নি। শ্রীদেববর্মা বলেন, কিন্তু এ অবস্থা চিরদিন থাকবে না। ওপারে উৎপাদন ভেঙে পড়েছে। অধিকন্তু যে কোন সময় সীমান্ত এলাকাগুলাের অবস্থা এমন হয়ে যেতে পারে যে, কোন পণ্যই আর এপারে আসবে না। তিনি বলেন তখন কি অবস্থা ধারণ করবে তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। পবিশেষে শ্রী অঘাের দেববর্মা আবেগের সঙ্গে বলেন, ত্রিপুরার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। চিরকাল উপেক্ষিত, অনাদৃত শ্রীদেববর্মা এই বিষয়ে একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যখন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ত্রিগুন সেন এখানে এসেছিলেন তখন তিনি বারবার বলতেন, “ত্রিপুরা শেষ”। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ”একথা আপনি বারবার বলছেন কেন?” তিনি উত্তর করলেন, “দিল্লীর কেউ ত্রিপুরার কথা ভাবে না অঘােরবাবু। তাই ত্রিপুরার প্রগতি ও সমৃদ্ধি কি করেই বা সম্ভব।” তিনি আরাে বলেন, ত্রিপুরাই যেখানে এতকাল ধরে উপেক্ষিত সেখানে ত্রিপুরার শরণার্থীরা কি করে বাঁচবে। ওপার থেকে নিঃস্ব অবস্থায় তারা এপারে বাঁচতে এসেছে। তাদের বাচান। তাদের বাচননার জন্য অন্য রাজ্যে সতুর পাঠানাের ব্যবস্থা করুন। মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির উপর বিরােধী পক্ষ থেকে আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন এবং তাঁরাও তীব্রভাবে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির সমালােচনা করেন। তাদের বক্তব্যেরও মূল কথা হল-প্রতিদিন রাজ্যে ১৫ থেকে ২০ হাজার শরণার্থী আসছেন। আর মাত্র দেড় হাজার করে শরণার্থী পাঠান হচ্ছে। এভাবে কি করে সমস্যার সমাধান সম্ভব ? তারা দাবি করেন, শরণার্থীদের বাঁচানাের জন্যই তঁাদের তাড়াতাড়ি অন্য রাজ্যে পাঠানাে দরকার। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের এ ব্যাপারে দায় সারা কাজ করলে চলবে না।

সূত্র: কালান্তর, ১.৭.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!