You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.08 | আনন্দবাজার পত্রিকা, ৮ মে, ১৯৭১, এখনই ভারতের স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল হবে না, তবে মুক্তি আন্দোলনকে পূর্ন সমর্থন দেওয়া হবে – শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী - সংগ্রামের নোটবুক

আনন্দবাজার পত্রিকা
৮ মে, ১৯৭১
এখনই ভারতের স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল হবে না।
তবে মুক্তি আন্দোলনকে পূর্ন সমর্থন দেওয়া হবে –
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী
বিশেষ সংবাদদাতা

নয়াদিল্লী, ৭ মে – আজ সকালে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশ্নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বৈঠকে বসেছিলেন। প্রায় সকলেই বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবী জানান। (ব্যতিক্রমঃ বিকানীরের মহারাজা ডঃ করণি সং এবং মুসলিম লীগ নেতা মহম্মদ ইসমাইল। দুজনের বক্তব্যে অবশ্য কিছু পার্থক্য ছিল। সকলের কথা শোনার পর প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তার মর্ম এইরকমঃ বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের প্রতি ভারত পূর্ন সমর্থন জানাবে, কিন্তু বাংলাদেশকে এখনই কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়া এই দেশেরই স্বার্থের পরিপন্থী হবে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি প্রচুর সহানুভূতি থাকলে ও স্বীকৃতির ব্যপারে ভাবনাচিন্তা চলছে। তবে তাজউদ্দিন সরারকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না এমন কথা তিনি বলেননি বা সরকার এ ব্যাপারে ঠিক কি করবেন, তার কোন আভাস দেননি। শুধু স্পষ্টভাবে তিনি বলেন যে, কোন অবস্থাতেই ভারত ভীত নয়।

ইন্দিরাজী বলেন যে, পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে নানা উস্কানিমূলক কাজ করছে। ভারতকে নানাভাবে বাংলাদেশের ব্যাপারে জড়াতে চাইছে। যা-ই হোক, ভারত যা ঠিক মনে করবে, তা করতে ভীত নয়।

দুই ব্যাতিক্রমঃ অবিলম্বে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের দাবীর বিরোধিতা করেন বিকানীরের মহারাজা ডঃ করণি সিং। তিনি লোকসভায় কয়েকটি ছোট গোষ্ঠী ও কয়েকজন নির্দল সদস্যের নেতা। সেই গোষ্ঠী ও ব্যাক্তিরা অবশ্য আগেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবী জানিয়েছেন।

ডঃ করণি সিং এর বক্তব্যঃ বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন আসলে ‘বাঙ্গালীদের বিদ্রোহ’। ভারতে এই ধরণের ব্যাপার ঘটলে সরকার কী করতেন? কাশ্মীরের কথাও ভাবা দরকার।

ইন্দিরাজি তাকে বলেনঃ কাশ্মীরে যারা হাঙ্গামা বাধাতে চায় তারা জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীদের পিছনে বিপুল গরিষ্ঠ সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশে গরিষ্ঠ অভিমত পাকিস্তান দাবীয়ে রাখতে চাইছে।

মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ ইসমাইল যা বলেন তার মর্মঃ এমন কিছু করা ঠিক হবেনা যাতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে বা কোন সংকট সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে ঐ ধরণের সংকট দেখা দিতে পারে। তবে সরকার এব্যাপারে যেকন ব্যাবস্থাই নিন না কেন তাঁর প্রতি তাদের দলের সমর্থন থাকবে।

ইন্দিরাজি বলেন যে বাংলাদেশের ব্যাপারকে কেন্দ্র করে কিছু লোক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইছে। সকলকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে হবে।

স্বীকৃতির স্বপক্ষে জোর দাবী

অধিকাংশ বিরোধী নেতা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য জোর দাবী জানান। পরিস্থিতি সম্পর্কে ইন্দিরাজির বিশ্লেষণ তাঁরা মেনে নেননি। তাঁরা বলেন যে, বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তব সত্য। স্বীকৃতি দিয়ে সরকার শুধু সেই সত্যটিকেই মেনে নেবেন আর তাতে সেখানকার আন্দোলন জোরদার হবে। ভারত এ বিষয়ে দেরি করলে ভারতেরই ক্ষতি হতে পারে।

এ দাবী জানান – সি পি এম, সি পি আই, ডি এম কে, জনসঙ্ঘ, আদি কংগ্রেস, পি এস পি, সে এস পি, ফঃ-বঃ, আর এস পি। শ্রী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত (সি পি আই) তাঁর দলের পশ্চিমবঙ্গ কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে একটি স্মারক দেন। শ্রী এ কে গোপালন (সি পি এম) বলেন যে, পাকিস্তানকে ভয় না করে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সব রকমের সাহায্য দেওয়া হোক। শ্রী কে মনোহরণ (ডি এম কে) শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী (জঃ সঃ), শ্রী চিত্ত বসু(ফঃ বঃ), শ্রী ত্রিদিব চৌধুরী (আর এস পি), শ্রী এন জি গোরে (পি এস পি) ও শ্রী এস এন মিশ্র (আদি কং) একই দাবী তোলেন।

ত্রাণকার্য সম্পর্কে আলাদা বৈঠক বসবে
প্রধানমন্ত্রী বলনে যে, পাকিস্তানী ফৌজের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য এপর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষ লোক ভারতে এসেছেন। আরও আসবেন। এজন্য ত্রাণকার্য সম্পর্কে কি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বিরোধী নেতাদের সঙ্গে পৃথক একটি বৈঠকে বসবেন। (অর্থমন্ত্রী শ্রী চরণ নাকি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এজন্য ৬০ কোটি টাকার দরকার।) তবে ঐ বৈঠক কবে বসবে আজ তা প্রকাশ হয়নি। ভারত চায় যে, এই ত্রাণকার্য আন্তর্জাতিক রূপ নিক।

ইন্দিরাজি আরও বলেন যে, বাংলাদেশের আগে দুই ডিভিশন পাক ফৌজ ছিল। এখন আছে চার ডিভিশন। শহরগুলি অধিকাংশ পাক ফৌজের দখলে আছে। গ্রামাঞ্চলের বহু এলাকাই এখনও মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণে। গেরিলা তৎপরতা চালিয়ে তাঁরা পাক ফৌজের তৎপরতা সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করছেন।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বৈঠক
নয়াদিল্লী, ৭ মে- প্রকাশ, বাংলাদেশ সম্পর্কে আলোচনার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা আজ এক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠক পূর্ব নির্ধারিত ছিলনা।

বিরোধীদল ও নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরেও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী গান্ধী স্বল্প সময়ের নোটিশে তাঁর সহকর্মিদের ঐ বৈঠকে আহ্বান করেন।

এক ঘণ্টা ব্যাপী বৈঠকে শ্রীমতী গান্ধী বিরোধী নেতাদের সঙ্গে তাঁর আলোচনার বিষয়ে সহকর্মিদের অবহিত করেন।

– পি টি আই