বাঙলাদেশ শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে ভারত ও নেপালের সমমত
শরণ সিংয়ের সফর শেষে যুক্তবিবৃতি
কাঠমুন্ডু, ৫ সেপ্টেম্বর বাঙলাদেশ শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরী প্রয়ােজন। ভারত ও নেপাল উভয় রাষ্ট্রই এ বিষয়ে একমত। ইউ এন আই জানাচ্ছে তিনদিনব্যাপী | নেপাল সফর শেষে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং আজ নয়াদিল্লী ফিরছেন। যাত্রার পূর্ব মুহুর্তে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রী সিং ভারত নেপাল যুক্ত ইস্তেহারটি প্রকাশ করেন। জানা গেল, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাঙলাদেশ প্রশ্নে ভারতের ভূমিকাকে নেপাল সমর্থন করবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে। শ্রী সিং আজ সাংবাদিকদের জানান যে, বাঙলাদেশ থেকে নিযুত শরণার্থী আসায় যে সমস্যাগুলি আরও জট পাকাবে বলে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কীর্তিনিধি বিস্তা লক্ষ্য করেছেন। ভারত নেপাল যুক্ত ইস্তিহারে স্বাক্ষর দিয়েছেন শ্রী শরণ সিং ও শ্ৰীকীর্তিনিধি বিস্তা (যিনি নেপালের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও বটে)।
ইস্তেহারে বলা হয়, দুই রাষ্ট্রনেতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে বিশদ আলােচনা করেছেন। উভয়েই এই প্রতিশ্রুতি পুনরায় তুলে ধরেন যে, দুটি দেশই একে অপরের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে এবং অভ্যন্তরীন ঘটনায় হস্তক্ষেপ করবে না। বহুদিনের হার্দ সম্পর্ক বজায় রাখার সংকল্প ঘােষণা করে ইস্তেহারটি বলে যে দু’দেশের সম্পর্কের উন্নতি উভয়ের স্বার্থেই প্রয়ােজন। শরণ সিং গত ক বছরে নেপালের প্রভূত উন্নতির উল্লেখ করলে প্রত্যুত্তরে শ্রীবিস্তা নেপালের উন্নয়নে ভারতের সহযােগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। শ্রীবিস্তা আশা প্রকাশ করেন, সহযােগিতা অটুট থাকবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সহযােগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হবে বলে তাকে আশ্বাস দেন। সম্প্রতি সম্পাদিত ভারত নেপাল বাণিজ্য ও চলাচল চুক্তিতে দুই মন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। বিশ্ব পরিস্থিতি আলােচনা শেষে উভয়ে জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুকরণের উপর যাের দেন। কারণ, তারা মনে, করেন, ঐ নীতি বিশ্বশান্তি বজায় রাখা, প্রত্যেক দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন রাখা এবং বিশ্ব উত্তেজনা কমলােয় কাজ করবে। সব শেষে নেপালের আতিথেয়তায় প্রভূত প্রশংসা করেন শ্রীশরণ সিং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষ থেকে শ্রীবিস্তাকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানান। আমন্ত্রণ গৃহীত হয়। জানা গেল গতকাল আলােচনাকালে শ্রীসিং ভারত-সােভিয়েত চুক্তির ন্যায় কোন চুক্তি নেপালের সঙ্গে ভারতের হবে না বলে জানিয়েছেন। গতকাল রাজা মহেন্দ্রর সঙ্গে তিনিও ইন্দিরা যাত্রা উৎসবে উপস্থিত থাকেন। শােনা গেল, নেপাল এই আশ্বাস দিয়েছে যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ বাঙলাদেশ সম্পর্কে ভারত যে ভূমিকা নেবে নেপাল তা সমর্থন করবে।
সূত্র: কালান্তর,৬.৯.১৯৭১