You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.25 | আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৫ এপ্রিল, ১৯৭১, কলকাতা ও ঢাকায় ডেপুটি হাই কমিশন অফিস বন্ধ হচ্ছে - সংগ্রামের নোটবুক

আনন্দবাজার পত্রিকা
২৫ এপ্রিল, ১৯৭১
কলকাতা ও ঢাকায় ডেপুটি হাই কমিশন অফিস বন্ধ হচ্ছে
বিশেষ সংবাদদাতা

নয়াদিল্লী, ২৪ এপ্রিল- পাকিস্তান এবং ভারত আগামী সোমবারের মধ্যে ভারতের ডেপুটি হাইকমিশন অফিস বন্ধ করে দিচ্ছেন। গতকাল ইসলামাবাদে ভারতের অস্থায়ী হাইকমিশনারের কাছে এবং আজ পাকিস্তানী হাইকমিশনার কর্তৃক পররাষ্ট্র দফতরের সচিব শ্রী এস কে ব্যানার্জির কাছে প্রদত্ত নোটে পাকিস্তান কলকাতায় ডেপুটি হাই কমিশন অফিস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেন।

এ নোটে ভারতকেও ঢাকায় তারা ডেপুটি হাইকমিশন অফিস বন্ধ করতে হলা হয়। ভারত তাতে রাজে, তবে পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তে দুঃখিত। পাকিস্তানী নোট অনুসারে সোমবারের মধ্যেই এই দুই অফিস বন্ধ হয়ে যাবে এবং উভয় অফিসের কর্মী এবং তাদের পরিবারবর্গ স্থান ত্যাগ করবেন।

ভারত পাকিস্তানের এই সিদ্ধান্তকে কূটনৈতিক মারপ্যাঁচ বলে উল্লেখ করেছে। ভারতের বৈদেশিক দফতরের একজন মুখপাত্র আজ এখানে বলেন, কলকাতায় পাক ডেপুটি হাইকমিশনার শ্রী মেহেদী মাসুদকে সম্ভাব্য সব রকমের সুবিধাই আমরা দিয়েছিলাম। বাংলাদেশের নাগরিকদের উপর অমানুষিক অত্যাচারের ফলে জনসাধারণের চরম বিক্ষোভ থাকা সত্ত্ব্বেও নিরাপত্তা রক্ষী ও পুলিশ অফিসাররা শ্রী মাসুদের ব্যক্তিগত নিরপত্তা রক্ষার প্রশংসনীয় কাজ করেছেন।

একটি নিরাপদ জায়গায় ডেপুটি হাইকমিশনারকে যথাযোগ্য স্থান করে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। এই সুবিধার সুযোগ উপেক্ষা করে কলকাতায় অফিস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে এবং ঢাকায় আমাদের ডেপুয়াতি হাইকমিশন অফিস বন্ধ করতে বলে পাকিস্তান যা করল তা দুঃখবহ। পাকিস্তানের পক্ষে এই পূর্ব পরিকল্পিত এবং ইচ্ছাকৃত কূটনৈতিক চাল নিন্দনীয়।

পাকিস্তানী নোটে কর্মী এবং তাঁদের পরিবারবর্গের স্বদেশযাত্রার ব্যাপারে যে পদ্ধতির কথা বলা হয়, ভারত তাতে সম্মতি জানিয়েছেঃ
ক। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশলান এয়ারওয়েজ ভারতীয় কর্মী এবং তাদের পরিবারবর্গকে করাচি থেকে ঢাকায় আনবেন।
খ। কলকাতায় পাকিস্তান কর্মী এবং পরিবারবর্গকে আন্তর্জাতিক পরিবহনে করাচি যেতে ভারতী কর্তৃপক্ষ সুযোগ দেবেন।
গ। ইসলামাবাদের ভারতীয় হাই কমিশনের ব্যবস্থায় ভারতীয়রা করাচি থেকে দিল্লি যেতে পারবেন।
পাকিস্তান অবশ্য ভারতকে এই অনুরোধও করেছে যে, পাক হাইকমিশনারকে যেন কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের বাড়ি, সরকারী সম্পত্তি, তহবিল ও নথিপত্রের অধিকার দেওয়া হয়।

ভারতীয় অফিসের অফিসাররা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাসও ফেলেছেন। কারণ এতে কূটনৈতিক যে বাধা সৃষ্টি হয়েছিল তার দূর হওয়ার লক্ষন রয়েছে। এখন ভারতীয় কর্মী এবং তাঁদের পরিবারবর্গ যাতে ভারতে আসতে পারেন, তা দেখার বর্তাল এখন পাকিস্তানের উপর। অবশ্য ভারতকেও অনুরূপ দায়িত্ব নিতে হবে।

বাধা রইল শুধু অস্থাবর সম্পত্তি যেমন, মোটরগাড়ি, রেফ্রিজারেটর প্রভৃতি জিনিস সম্পর্কে যা নাকি এখনই বিমানে পাঠানো যাবে না। তবে তা উভয়ের পক্ষেই প্রযোজ্য। স্থানত্যাগে পরিবহন ব্যাপারে দুই দেশের সুবিধা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা জানিয়েছে। ভারত বলেছে, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী স্থির হবে। পাকিস্তানের বক্তব্য যথেষ্ট পরস্পরবিরোধী। কর্মী এবং পরিবারবর্গের স্থানত্যাগের সঙ্গে গাড়ি ইত্যাদি কথা না থাকায় আশংকা হচ্ছে এ নিয়ে কিঞ্চিত গোলমাল দেখা দেবে।

পাকিস্তান বলেছে, বাংলাদেশে সবই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক অবস্থায় ঢাকায় ভারতীয় কর্মীরা ভারতীয় পথেই আসতে পারেন। অথচ মনে হচ্ছে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য এই পথে আসা সম্ভব নয় বলে পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে আগেই সবকিছু জানিয়েছে।

নতুন ওই পরিস্থিতিকে বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতিদানের পথ আরও পরিষ্কার হল। যদিও তার মানে এই নয়, অদূর ভবিষ্যতে ভারত তাই করতে যাচ্ছে। তবে এটা ঠিক, এর ফলে ভারতের কাছে পাকিস্তান বলতে রইল শুধু খন্ডিত পাকিস্তান যার নাম পশ্চিম পাকিস্তান।
আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৫ এপ্রিল, ১৯৭২