You dont have javascript enabled! Please enable it! নিউ এজ পত্রিকা, ২৫ এপ্রিল, ১৯৭১, বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এর ধাপ্পাবাজি প্রকাশিত - সংগ্রামের নোটবুক

নিউ এজ
২৫ এপ্রিল, ১৯৭১
বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এর ধাপ্পাবাজি প্রকাশিত

মার্কিন রাষ্ট্রদূত এর ধাপ্পাবাজি ধরা পরেছে। কেনেথ কেটিং ঘোষণা করে যে পূর্ব বাংলায় সম্প্রতি যে রক্তাক্ত ঘটনা ঘটছে এ নিয়ে তার সরকারের মাথাব্যাথা নেই কারণ এটি পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কোন ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও গ্যালারিতে খেলার এটা একটা আমেরিকান পলিসি।

তিনি বললেন – অভ্যন্তরীণ ব্যাপার শব্দটিকে খেয়াল করা হয়নি। এটি অবশ্যই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার না। কেটিং ১৫ এপ্রিল বম্বেতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ঘোষণা করেন।

বড়জোর চার দিন আগে এই বেলুন ফাটানো হল। স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে আসা সরকারী শব্দ কেটিং কে এই পরিস্থিতিতে আনল এবং মার্কিন অবস্থান সুপরিচিত করল আবারো। ওয়াশিংটনে ডিপার্ট্মেন্টের প্রতিনিধি রবার্ট ম্যাকক্লস্কি স্পষ্টভাবে বলেছেন কেটিং এর বোম্বেতে দেয়া বিবৃতি যা তিনি ২ এপ্রিল দিয়েছিলেন সেখানে তিনি বলতে চেয়েছেন যে, “এটি আমাদের দর্শন ছিল, পাকিস্তানে যা চলছে তা হল তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার”। এবং সেই ব্যাপারে মার্কিন সরকার উদ্বিগ্ন ছিল।

আমেরিকান ট্যাংকের অ্যাকশন

ভারতে আমেরিকান লবি চেষ্টা করছে পুর্ব পাকিস্তান ইস্যুতে মার্কিন অবস্থানের কারণে তাদের উপর যে বিরূপ অবস্থান আছে তা যেন একটু নরম করা যায়। তারা বলেন আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিকূলে নই। বাস্তব পরিস্থিতিতে একথা বিশ্বাস করার কোন মানে নেই। একই ডিপার্ট্মেন্টের প্রতিনিধি ম্যাক ক্লস্কি কিছুদন আগে বলেন যে ১৯৬৬-৬৭ থেকে পাকিস্তানে বাণিজ্যিক ও ক্রেডিট টার্মে দেয়া মিলিটারি আইটেম এর পরিমাণ বছরে গড়ে ১০ মিলিয়নের একটু নিচে আছে। এর মধ্যে ২৫% অর্থাৎ আড়াই মিলিয়ন ডলার আছে গোলাবারুদ। (ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন, ১৫ এপ্রিল, ১৯৭১)

এই কথায় আগে তারা যা বলেছিল সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হল। তারা বলেছিল ১৯৬৬-৬৭ থেকে ইসলামাবাদকে তারা যেসব মিলিটারি পণ্য দিয়েছে সেগুলো প্রাণঘাতী নয়। আমেরিকা বলেছিল সাপ্লাই হিসেবে মিলিটারি পারসনেল ক্যারিয়ার ও যোগাযোগ রক্ষার যন্ত্রাংশ দেয়া হয়েছে। এখন তাদের স্বীকার করতে হবে যে যেসকল বুলেট ও বোমায় পুর্ব পাকিস্তানের মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তার বেশিরভাগ আমেরিকা থেকে পাওয়া।

এবং তার সাপ্লাই এখনো চলমান। যদিও ভারত ও বাংলাদেশ সরকার বারবার আমেরিকাকে নিষেধ করে এসেছে।

এর আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস এ খবর প্রকাশের পর ওয়াশিংটন ব্যুরো ১১ এপ্রিলের তা স্বীকার করে জানায় যে আমেরিকা পাকিস্তানে গোলাবারুদ ও খুচরা যন্ত্রাংশ যে প্রোগ্রাম অনুসারে পাঠাচ্ছে তা ১৯৬৭ সালের।

ক্রমবর্ধমান প্রমাণ আছে। কারণ পাকিস্তানি সেনারা দেশের পূর্ব অঞ্চলে বাঙ্গালি নাগরিকদের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে ধ্বংসপ্রাপ্ত আমেরিকান ট্যাংক, জেট বিমান এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করার প্রমাণ সেখানে মিলেছে।

“এই সরঞ্জাম ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৫ সালের সময়ের। সেই সময়ে আমেরিকা পাকিস্তানে আরও অস্ত্র পাঠিয়েছিল। পরে তাতে নিষেধাজ্ঞা হয় ১৯৬৭ সালে।(ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন, ১২ এপ্রিল , ১৯৭১)

যখন পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হাতে আমেরিকার অস্ত্রে পূর্ব পাকিস্তানে জবাই চলছে তখন আমেরিকা ১৯৬৬-৬৭ সালের চুক্তির ধারাবাহিকতায় পাঠানো অস্ত্র চালানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছেনা। এবং তেমনটা মনেও হচ্ছে না। আটলান্টিকের অন্য প্রান্ত থেকে তাদের অন্য ভাইয়েরা এখন উপদেশ দিচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী যেন তাদের প্রতিরোধ বন্ধ করে এবং ভেড়ার মত জবাই হতে নিজেদের সমর্পন করে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে ২১ এপ্রিল লন্ডনের বার্তা দিয়ে বলা হয় –

“ব্রিটেনে একটি বিচক্ষণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তারা এখানে পূর্ববাংলার রাজনৈতিক সার্কেলকে বলেছে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ পরিত্যাগ করার জন্য..”

মার্কিন ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা পূর্ববাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের চূর্ণ হতে দেখতে চায়। যাতে করে ইয়াহিয়া এবং তার পরবর্তিরা কয়েক দশক ধরে নির্বিঘ্নে শাসন করতে পারে। যখন কেটিং ভারতের মাটিতে বসে মধুমাখা শব্দাবলী উচ্চারণ করছিলেন তখন সাগরের ওপারে তার সতীর্থরা প্রতি মুহূর্তে বাংলাদেশের যোদ্ধাদের পেছন থেকে ছুরিকাঘাত চালিয়ে যাচ্ছিল।

আমেরিকা ও ব্রিটেনে গণতান্ত্রিক মতের পক্ষের লোক বাড়ছে এবং তাদের দেশের কাছে আবেদন তারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যেন হাত না মেলায় এবং বাংলাদেশের দাবি মেনে নেয়।