You dont have javascript enabled! Please enable it!

শরণার্থীদের জন্য চাই ব্যাপক জাতীয় উদোগ
সাত্যকি চক্রবর্তী

বাঙলাদেশ থেকে ইতিমধ্যেই ৫৫ লক্ষ শরণার্থী ভারতে এসেছেন। জুন মাসের প্রথম থেকে আসার হার বেড়ে গেছে। দৈনিক বাঙলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমপঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয় আশ্রয় নিচ্ছে গড়ে ৬০ হাজর থেকে এক লক্ষ শরণার্থী। এবার যারা আসছেন তাদের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যাই বেশি। পাকিস্তানি শাসকচক্র সুপরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘিষ্ঠ সম্প্রদায়কে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিতাড়িত করছেন। সর্বক্ষেত্রে যে পাকিস্তানি সেনারা মুখ্য অংশ নিচ্ছে তা নয়। বাঙলাদেশ থেকে আজ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতার বিতাড়িত। অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন ইয়াহিয়ার জল্লাদদের হাতে। বাকীদের অধিকাংশই সীমান্তের এপারে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির অনুপস্থিতির সুযােগ নিয়ে সাম্প্রদায়িকতাবাদীরা বাঙলাদেশে তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে।
ভারতের ইতিহাসে এত ব্যাপক শরণার্থী সমস্যা এর আগে কখনাে দেখা যায়নি। দেশবিভাগের পর থেকে অর্থাৎ ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত সরকারি হিসাবমত ৪৭ লাখ শরণার্থী ভারতে এসেছে। আর বাঙলাদেশ থেকে আগত শরণার্থী এ মাসের শেষেই ৭০ লাখের কোঠায় পৌছে যাবে। শরণার্থীদের দায় অধিকাংশই বইতে হবে পশ্চিমবঙ্গকে। দেশবিভাগের পর সরকারি হিসাবমত ৩৬.৫ লাখ শরণার্থী পশ্চিমবঙ্গে স্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে। আর এবার পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা দেশ বিভাগের সময়ের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে।
অত্যন্ত পরিতাপের কথা, বাঙলাদেশ থেকে শরণার্থী সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা বলে প্রধানমন্ত্রী ঘােষণা করেছেন, রাজ্য সরকারগুলাের অধিকাংশ শরণার্থীদের আশ্রয় দেবার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেওয়া দূরে থাকুক বরং গাফিলতি দেখাচ্ছে। রাজ্য সরকারগুলাের ভাব এমন যেন এটা একান্তই পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা আর জাতীয় স্তরে যা করা প্রয়ােজন তা কেন্দ্রীয় সরকারই করবে। যতটা গা বাঁচিয়ে চলা যায়।
১২ জুন কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন দপ্তরের সেক্রেটারি শ্রীজি এস কাহলােন কেন্দ্রীয় সরকারের শরণার্থী সমস্যা সম্পর্কে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ঘােষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, ২৫ লাখ শরণার্থীকে মধ্যপ্রদেশ, আসাম, বিহার, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমভাগে সরিয়ে নেওয়া হবে। সরকারের এখ সিদ্ধান্ত শরণার্থীদের যতটা সম্ভব বাঙলাদেশের কাছাকাছি রাখা হবে। শ্রী কাহলােন সাংবাদিকদের জেরার জবাবে বলছেন, অন্ধ ও তামিলনাড়ু শরণার্থী নিতে অস্বীকার করেছে বলে কোন খবর তার জানা নেই। শুধু অন্ধ বা তামিলনাড়ু নয়, ওড়িশা সরকারও শরণার্থীদের রাজ্যে স্থান দিতে চাননি। কেন্দ্রীয় সরকারের চাপে পড়ে তারা রাজী হয়েছেন বটে তবে তাদের কোন দায়িত্বও থাকছে না। ক্যাম্পের নির্মাণ থেকে শুরু করে শরণার্থীদের থাকবার ব্যয় সবই কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী ক্যাম্পে যেসব শরণার্থী আছে তাদের জন্য সরকারি ব্যয় হচ্ছে দিনে এক কোটি টাকারও বেশি। প্রতি দশ লাখ শরণার্থীর জন্য সরকারের ব্যয় দিনে ৩০ লাখ টাকা। ১১ জুন পর্যন্ত হিসেব, সরকারি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৩৪ লাখের মতাে শরণার্থী।
শরণার্থী সমস্যাকে জাতীয় স্তরে মােকাবিলা করার জন্য আজ তাই প্রয়ােজন ব্যাপক জাতীয় উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রতিটি রাজ্য সরকারকে সজাগ করবার দায়িত্ব নিতে হবে সমস্যার ব্যাপকতা বােঝাবার জন্য। পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। সামরিক শৃঙ্খলার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলােকে এই দায়িত্ব বহন করতে হবে। অবিলম্বে গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী দলগুলাের উচিত শরণার্থী সাহায্য ব্যাপকতম প্রস্তুতি। টাকা দেওয়া হচ্ছে কিন্তু তার ফল সব জায়গায় সময়মত পৌছাচ্ছে না।

সূত্র: সপ্তাহ, ১৮ জুন ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!