You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972.01.14 | বাঙলাদেশ ও কিছু কল্পিত “মার্কসবাদ”- প্ৰদীপ দাশগুপ্ত | সপ্তাহ - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশ ও কিছু কল্পিত “মার্কসবাদ”
প্ৰদীপ দাশগুপ্ত

কোন একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় “বাঙলাদেশ : মার্কসবাদী হিসাবে কি শিখলাম” প্রবন্ধটির শিরােনাম যথেষ্ট কৌতূহলের সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু, লেখাটি পড়ে হতাশ হতে হলাে ; কেননা, লেখক বিপ্লব দাশগুপ্ত লন্ডন থেকে যেসব আপ্তবাক্য এতে লিখে পাঠিয়েছেন, তা মার্কসবাদ থেকে ততটাই দূরে, যতটা বাঙলাদেশ থেকে লন্ডন।
বিপ্লববাবু প্রথম পাঠ যেটি শিখেছেন, সেটি প্রথম পড়য়ার পক্ষে মন্দ নয়। বাঙলাদেশের ঘটনাবলী থেকে তিনি শিখেছেন যে, “শুধু নির্বাচনে জয়লাভ করলেই ক্ষমতা লাভ করা যায় না।” শিক্ষাটা ভালােই, কিন্তু মুশকিল হলাে যে তিনি নিজে শিখেই ক্ষান্ত থাকেননি, একেবারে “সহজপাঠ” শিখেই গুরুমশাই-এর পদে বসে গেছেন। বলেছেন যে, এ থেকে “ভারতের ক্ষেত্রে” “দক্ষিণপন্থী কমিউনিস্টদেরও শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আমরা ভাবছি “দক্ষিণপন্থী কমিউনিস্টদের এ থেকে নতুন কী শিক্ষা নেবার আছে, আর শিক্ষা যদি নিতেই হয় তবে “বামপন্থী কমিউনিস্টরাই বা বাদ যাবে কেন?
“শুধু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা লাভ করা যাবে, এমন কথা কোনাে কমিউনিস্ট কখনাে বলেছেন বলে শুনিনি। তবে সি পি আই এবং সি পি এম উভয়েই তাদের কর্মসূচিতে বিপ্লবী গণ-আন্দোলনের সঙ্গে পার্লামেন্টারি কর্মকৌশলকে কাজে লাগিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে মৌলিক সামাজিক পরিবর্তনের কর্মসূচির সম্ভাবনা ও লক্ষ্য ঘােষণা করেছেন। এঁদের বােম্বাই ও কলকাতা কংগ্রেসে গৃহীত কর্মসূচির যথাক্রমে ৯৯ ও ১১৩ নং অনুচ্ছেদ প্রায় একই ভাষায় এই বক্তব্য লিপিবদ্ধ হয়েছে।
এই দুই পার্টির কর্মসূচিতেই সঙ্গে সঙ্গে এই সতর্কবাণীও প্রায় হুবহু একই ভাষায় লেখা আছে : মনে রাখতে হবে, শাসকশ্রেণী কখনাে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেয় না। তারা জনতার ইচ্ছাকে লাগামহীন হিংস্রতার দ্বারা দাবিয়ে দিতে চায়। অতএব, বিপ্লবী শক্তিগুলােকে সদা সতর্ক এবং রাজনৈতিক ঘটনাবলীর যে কোনাে প্রকার পটপরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এই সবই লেখা হয়েছিল চৌষট্টি সালে। আর, আজ এতদিন বাদে বিপ্লববাবু নতুন করে শেখাতে বসেছেন। শন্তিপূর্ণভাবে পার্লামেন্টকে ব্যবহার করে বৈপ্লবিক রূপান্তরের সম্ভাবনার তত্ত্বের জন্য যদি সমালােচনা করতে হয় তবে সি পি আই, সি পি এম উভয় সম্বন্ধেই তা প্রযােজ্য। সি পি এমের কথা, আমাদের বিশেষ আলােচ্য নয়, কারণ বিপ্লববাবু ওঁদের কথা তােলেননি। তবে সি পি আই এবং যে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের তারা শরিক (যাকে সাধারণ ভাষায় “রাশিয়াপন্থি” লাইন বলা হয়)—তার মতামত এ ব্যাপারে প্রাঞ্জল এবং স্পষ্টভাবে আমরা বুঝেছি। শান্তিপূর্ণ উত্তরণের দুটি শর্ত পার্লামেন্টে এবং পার্লামেন্টের বাইরে বিপুল গণ-আন্দোলন। এবং তারপরেও তারা হলফ করে বলেন না যে শান্তিপূর্ণভাবে ব্যাপারটা ঘটবেই। সুতরাং বাঙলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে মুক্তি আসেনি বলে তাঁদের কোনাে তত্ত্বই এর দ্বারা বাতিল হয়ে যায় না।
অবশ্য বিপ্লববাবুর নিজের তত্ত্বে নিজেরই কিছু খটকা লেগেছে। তাই তিনি চিলি’র প্রসঙ্গ তুলে নিজেই বলছেন : “চিলি হয়তাে ব্যতিক্রম মাত্র, এবং সেখানে আরাে কয়েক মাস লাগবে ব্যাপারটা বুঝতে।” ব্যতিক্রম কেন? সিংহলের ব্যাপারটা কী? আর কয়েক মাস কেন? কয়েক বছরও তাে কেটে যেতে পারে। এবং যতদিন ব্যাপারটা না বােঝা যাচ্ছে, ততদিন প্রবন্ধ লিখে এ বিষয়ে শিক্ষকতা করা থেকে বিরত থাকাই ভালাে নয় কি?
এই “মার্কসবাদী” ভদ্রলােক ভুলে গেছেন যে স্থানকালপাত্রের বিভিন্নতার বস্তুনিষ্ঠ আলােচনা মার্কসবাদের প্রাণ। তিনি যান্ত্রিকভাবে বাঙলাদেশের ব্যাপারটাকে “ভারতের ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করতে চাইছেন। ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টকে ব্যবহারের যে সম্ভাবনা আছে, বাঙলাদেশের অর্থাৎ পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তার কোনাে অস্তিত্বই ছিল না। বাংলাদেশকে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের জন্যই লড়াই করতে হয়েছে, এবং সেহেতু সেখানকার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত আমাদের থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন।
এই প্রসঙ্গে একটি কথা স্মরণযােগ্য। যে দক্ষিণপন্থী কমিউনিস্টদের বিপ্লববাবু শিক্ষা নিতে বলেছেন, তাদের ঘনিষ্ঠ সহযােগি বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি এবং মুজাফফর আহমেদ পন্থী ন্যাপ কিন্তু ওদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে রক্তাক্ত লড়াইয়ে এক মূখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছেন এবং বাঙলাদেশের প্রতি রাশিয়া ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের কমিউনিস্ট পার্টিগুলাের সমর্থন লাভের ক্ষেত্রে তাদের অবদান কম নয়। আজ বাঙলাদেশের জাতীয় মিলিশিয়ার নেতৃত্বে তাই ঐসব দলের নেতারা যােগ্য আসন লাভ করেছেন।
অপর পক্ষে রাশিয়া বা চীনের নেতৃত্বের বাইরে যে “স্বনির্ভর মার্কর্সবাদী দলের প্রয়ােজনীয়তার কথা বিপ্লববাবু বলেছেন, সেইরকম একটি দল সি পি এম-এর যােগাযােগ বাঙলাদেশের আন্দোলনের সঙ্গে এতই ‘ঘনিষ্ঠ যে তাদের সমর্থিত বাঙলাদেশের কয়েকটি নাম-না-জানা পার্টির সমন্বয়ে গঠিত একটি “বিপ্লবী” সংগঠনের নেতা মসিউর রহমানকে আজ বাঙলাদেশ সরকার দেশদ্রোহিতার দায়ে খুঁজছেন। আশ্চর্যের কথা, যেসব লােক ও পত্রিকা সেদিন এই বিশ্বাসঘাতকটির ফলাও প্রচার করেছিলেন, তারা আজ বাঙলাদেশের ঘটনা থেকে অন্যকে শিক্ষা নিতে বলছেন !

দুই
বিলাতের বিপ্লববাবু খােদ বাঙলাদেশের পার্টিগুলােকেও নানা প্রকার শিক্ষাদান করেছেন, এবং তাদের নানাবিধ “দুর্বলতার” আলােচনা করেছেন। সেসব প্রসঙ্গে যেতে চাই না। তবে, বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন সস্বন্ধে তিনি যা বলেছেন, সেটি কিন্তু মারাত্মক। আমরা শুনে এসেছি মার্কসবাদ আন্তর্জাতিক সর্বহারার বিপ্লবী মতবাদ, এবং কমিউনিস্ট পার্টি মাত্রই সেই আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গিজাত দায়িত্ব ও অধিকারের অংশীদার । বিপ্লববাবু নিজেকে “মাকর্সবাদী” বলেন, কিন্তু, মার্কসবাদের আন্তর্জাতিকতাই অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “চীন ও সােভিয়েতের ভূমিকা আর-একবার প্রমাণ করল যে, ভারতের মার্কসবাদী আন্দোলনকে স্বনির্ভর হতে হবে।” বিপ্লববাবুর এই বিলাতী তত্ত্বটা কিন্তু নতুন নয় সি আই এ পৃষ্টপােষিত নানা সংগঠন থেকে বহুকাল ধরেই এই তত্ত্ব খুব জোরের সঙ্গেই প্রচার করা হচ্ছিল। কিন্তু কথা হলাে এই “স্বনির্ভরতার মানে কী? যখন বিশ্বের সমস্ত দেশে সর্বহারা শ্রেণীর প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জন্য লড়বে এবং লড়ছে, তখন “স্বনির্ভরতা” মানে বিচ্ছিন্নতা। বিপ্লববাবু প্রতি দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে বিচ্ছিন্ন দেখতে চান। কমিউনিস্টরা সর্বত্রই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে লড়ে। সঙ্গে সঙ্গে তার স্থির নির্ভরতা থাকে বিশ্বের সমস্ত কমিউনিস্টদের সাহায্যের উপরে। এবং সে কারণেই তারা শেষ পর্যন্ত জেতে।
এই বিলেতি দ্রলােক, চীন এবং সােভিয়েত রাশিয়া, উভয়কে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু কেন করেছেন তা জানেন না। সােভিয়েত রাশিয়া যে সঠিক পক্ষকে সমর্থন করেছে তা কিন্তু, কিন্তু করে মেনে নিয়েও তিনি বলেছেন : “এ কথা মেনে নেওয়া ভালাে যে কমিউনিস্ট দেশ না হলেও ঐ অবস্থায় সােভিয়েত ভারতকেই সমর্থন করত, যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে ওদের সম্পর্ক ক্ষীণ এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালাে।” চমক্কার মার্কসবাদী ! ভালাে করেছে বলা চলবে, কিন্তু কমিউনিস্ট হিসেবে ভালাে করেছে, এ কথা বলতে লজ্জা ! কিন্তু, জিজ্ঞাসা করি, বিপ্লববাবু যে বলছেন, কমিউনিস্ট না হলেও সমর্থন করত,’—এটা তিনি জানলেন কিভাবে? ধ্যানে, না যােগাভ্যাসে? তিনি কি জানেন যে ভারতের একান্ত প্রতিবেশী ভুটান ভিন্ন। আর একটিও অ কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ভারতকে তথা বাঙলাদেশকে সমর্থন করে নি? সমর্থন করেনি স্বনির্ভর কমিউনিস্ট যুগােশ্লোভিয়া এবং রুমেনিয়াও। রাষ্ট্রসঙ্রে ১৪টি ভােটের মধ্যে ভারত ও ভুটান বাদে আর ১২টাই কমিউনিস্ট দেশের । অর্থাৎ চীন ও দু-একটি “স্বনির্ভর” সমাজতান্ত্রিক দেশ বাদে আর সমগ্র সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া বাঙলাদেশের মুক্তির জন্য সঠিক পক্ষে এসে দাঁড়িয়েছে।
ভারতবর্ষের মতাে সদ্যস্বাধীন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালাে করাটা যে একটা সাম্রাজ্যবাদবিরােধী কমিউনিস্ট কর্তব্য, এটা জানলে বিপ্লববাবু ঐভাবে বলতেন না যে, ও তাে হবেই, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালাে যে।” যেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ভালাে হওয়ার কোন মূল্য নেই, তাৎপর্য নেই। ভারতবর্ষের মতাে দেশের সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার মৈত্রী যে কী প্রচণ্ড বৈপ্লবিক শক্তি অর্জন করতে পারে, বাঙলাদেশে গণতন্ত্রের জয় ও সাম্রাজ্যবাদের চূড়ান্ত পরাজয়ের ঘটনার পর একমাত্র অন্ধকরাই সে সম্বন্ধে অজ্ঞ থাকতে পারেন।
এদিকে বিপ্লববাবু নাকি “চীনের ভূমিকায় সবচেয়ে অবাক হয়েছেন।” সত্যিই তার অবাক হবার ক্ষমতা সীমাহীন। তিনি নিজেই ঐ প্রবন্ধের এক জায়গায় বলেছেন, “তাদেরই (অথাৎ চীনের নেতাদেরই—প্র) ভুল পরামর্শে শ্রদ্ধেয় কৃষক-নেতা সমাজতান্ত্রিক ভাসানী সাহেব ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত আয়ুব-বিরােধী কোন আন্দোলনে অংশ নেন না। তা হলে যে নেতারা ১৯৬৩ সাল থেকে সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক আয়ুব খাকে সমর্থন করে আসছেন, তাঁরা ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়াকে সমর্থন করবেন, তাতে “অবাক হবার কী আছে?
আসলে মৌলানা ভাসানীর মতই বিপ্লববাবু বােধ হয় এতদিন চীন সম্বন্ধে মােহ পােষণ করে এসেছেন। আজ ঘটনার আঘাতে সে মােহে কিছু চিড় ধরেছে, কিন্তু, নিছক সােভিয়েত ও ভারত বিদ্বেষের বশেই যে চীনের নেতারা পাকিস্তানের সমর্থন করেন, কোন নীতির তাগিদে নয়—এই সত্যটা মৌলানা সাহেব এতদিনে স্পষ্ট বুঝলেও বিপ্লববাবু বােঝেননি; কেন না তিনি নিজে আজও সেই বিদ্বেষের অংশীদার।

তিন
বেচারা বিপ্লব দাশগুপ্ত সত্যকে স্বীকার করতে জানেন না। বাঙলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের মিত্রদের ভূমিকাকে তিনি স্বীকার করতে চান না। সােভিয়েত সম্বন্ধে তার মনােভাব পূর্বেই দেখেছি। বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের একনিষ্ঠ সমর্থক ভারতবর্ষের শাসকশ্রেণীর সমর্থনকে তিনি নিছক এক “ধূর্ত, গণ প্রচারে নিপুণ” “নীতিহীন, শঠ, গণতন্ত্র বিরােধী”র কৌশলমাত্র বলে ব্যাখ্যা করেছেন। অন্যদিকে বাঙলাদেশের মুক্তি আন্দোলনেও কোন বিপ্লবী ছিল বলে তিনি মনে করেন না। আওয়ামী লীগ তাে উকিল-ডাক্তারদের দল। আর সারা পূর্ববঙ্গে “একটিও সুশৃঙ্খল, আদর্শভিত্তিক, কর্মসূচিভিত্তিক এবং ক্যাডারভিত্তিক রাজনৈতিক দল নেই।”
তবে বাঙলাদেশ মুক্ত হলাে কিভাবে? তার নিজের বিপ্লবীবাহিনী নেই, তার সত্যিকারের মিত্র নেই। তবে, তার মুক্তি এল কি মসিউর রহমানের ঝাড়ফুকের দ্বারা? এই ইন্দ্রজালের কৌশলটা বিপ্লববাবু শেখাবেন কি?
যথার্থ মার্কসবাদীর মতাে শ্ৰেণীদৃষ্টিতে যদি তিনি ঘটনার বিচার করতেন, তবে এ বিভ্রান্তি ঘটত —এভাবে সমস্ত কিছুকে নস্যাৎ করার নৈরাজ্যবাদী প্রবণতা থেকে তিনি মুক্ত হতে পারতেন। বাঙলাদেশের লড়াইটা কোন স্তরের লড়াই? ওটা হলাে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী এবং পশ্চিম পাকিস্তানি একচেটিয়া পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে বাঙলাদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক মানুষের মুক্তিযুদ্ধ—তাতে কমিউনিস্ট থেকে জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়া পর্যন্ত সকলেই সামিল হয়েছেন। ভারতবর্ষেরও সমস্ত গণতান্ত্রিক জনতা সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়নক ও একচেটিয়া গােষ্ঠী বাদে সকলেই এই সংগ্রামের পিছনে দাঁড়িয়েছে—এখানকার কমিউনিস্ট পার্টি থেকে ভারত সরকার পর্যন্ত সকলেই তার শরিক। যেহেতু এই লড়াই আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থকে আঘাত করেছে, তাই এই সমগ্ৰযুদ্ধ একটি সাম্রাজ্যবাদবিরােধী লড়াইতে পরিণত হয়েছে শ্রমিক-কৃষক থেকে জাতীয়তাবাদী বুর্জোয়া পর্যন্ত সবাই এতে আছে। আর বিশ্বের সমাজতান্ত্রিক শক্তি স্বভাবতই এই সাম্রাজ্যবাদবিরােধী লড়াইকে সমস্তপ্রকার সমর্থন দেবার জন্য এগিয়ে এসেছে। বাঙলাদেশের জয় সমাজতান্ত্রিক শক্তি এবং ভারত ও বাঙলাদেশের মেহনতি মানুষ ও প্রগতিশীল বুর্জোয়াশ্রেণীর ঐক্যের জয়। এই সমবেত শক্তিগুলাের কোন একটিকেও আক্রমণ বা কটাক্ষ করে এই জয়ের তাৎপর্য বােঝা সম্ভব নয়।

সূত্র: সপ্তাহ, ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২