সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী গণঅভ্যুত্থানের সাথী
কুমিল্লা থেকে (নিজস্ব সংবাদদাতা)
গত ২৫ মার্চ কুমিল্লা পুলিশ রিজার্ভে সামরিক বাহিনী রাত অনুমান ১টার সময় অতর্কিত ঘেরাও করে মেশিনগান এবং অন্যান্য আধুনিকতম অস্ত্র নিয়ে প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ শুরু করে। রিজার্ভের ডেস্ক থেকে ৬/৭ শত সশস্ত্র পুলিশ সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রতিরােধ করে। কিন্তু সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রতিরােধ সংগ্রাম চালানাের পর গুলি ফুরিয়ে যাওয়ায় সামরিক বাহিনীর গুলিতে শত শত প্রাণ হারায়। যারা গুলিতে মরেনি এমন ধরনের অনুমান ২ শত পুলিশকে শেষ পর্যন্ত সামরিক বাহিনী পিটিয়ে মেরেছে, কাউকে আহত করেছে গুরুতর রূপে। খুব কম সংখ্যক পুলিশ সেখান থেকে পালাতে পেরেছে। এরপর থেকে কুমিল্লা শহরের বুকে সামরিক বাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয়ে যায়। ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় রেডিওতে শােনা যায় কার্টু ঘােষণা। ইতিমধ্যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের রাস্তায় সামরিক বাহিনী ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে যায়। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ, নর-নারী আড়াই শতাধিক কাফু জারির পূর্বেই সামরিক বাহিনী হত্যা করেছে। সশস্ত্র সামরিক বাহিনী ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাইরে শহরের চারদিকে মাঠে ট্রেঞ্চ কেটে সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। সাঁজোয়া গাড়ি বােঝাই হয়ে শহরের রাস্তায় মেশিনগান চালিয়ে বৃষ্টির মতাে গুলি বর্ষণ করে টহল দেয়। শহরের রাস্তার পাশে বাড়ি ঘরে কারও দরজা-জানালা খােলা থাকলে সেই দিকে তাক করে গুলি চালায়। ঘরের ভেতরে থেকেও বহু নরহত্যা হয়েছে। ২৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে সমানে কার্টু চলছে। সামরিক বাহিনী বাড়ি বাড়ি লুট করছে। মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার করছে খুন করছে।
অতর্কিত আক্রমণে এবং সামরিক বাহিনীর আঞ্চলিক শক্তি কেন্দ্রে প্রতিরােধ ব্যর্থ হতে দেখে সমগ্র সংগ্রামী জনসাধারণ শহরের বাইরে গ্রামে ছড়িয়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলে কিছু জনসাধারণ সংগ্রামী মুক্তি সেনা ও কর্মীদের আশ্রয় দিয়ে গ্রামে-গ্রামে প্রতিরােধ গড়ে তােলার শপথ নিচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে প্রতিরােধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে সতর্কের সাথে পথঘাট সমস্ত সংগ্রামী-কর্মীরা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ইয়াহিয়ার সামরিক বাহিনী গ্রামাঞ্চলের প্রতিরােধ প্রস্তুতি দেখে আতঙ্কে শহরের চারদিকে বাড়ি-ঘর আগুনে পােড়াতে শুরু করেছে। শত শত ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে অত্যাচার করে শহরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে সমস্ত সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেয়ার এক প্রাণপণ প্রচেষ্টায় নেমেছে সামরিক বাহিনী।
সূত্র: দেশের ডাক
০২ এপ্রিল, ১৯৭১
১৯ চৈত্র, ১৩৭৭